মঙ্গলবার, ৫ই আগস্ট ২০২৫, ২১শে শ্রাবণ ১৪৩২


‘আরও পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকুন,’ যুক্তরাষ্ট্রকে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারি


প্রকাশিত:
৫ আগস্ট ২০২৫ ২০:২৯

আপডেট:
৫ আগস্ট ২০২৫ ২২:৩৪

ছবি সংগৃহীত

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন না করার একতরফা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। এর জন্য সরাসরি ন্যাটোর রাশিয়াবিরোধী নীতিকে দায়ী করেছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ।

সোমবার (৪ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ইংরেজি ভাষায় দেওয়া এক পোস্টে মেদভেদেভ বলেন, ‘মধ্য ও স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত সরাসরি ন্যাটো দেশগুলোর আগ্রাসী রুশ-বিরোধী অবস্থানের ফল। এটি একটি নতুন বাস্তবতা, যা আমাদের প্রতিপক্ষদের মেনে নিতে হবে। আরও পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকুন।’

তবে ‘আরও পদক্ষেপ’ বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, সে বিষয়ে তিনি কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।

এই হুঁশিয়ারির প্রেক্ষাপট রয়েছে সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়ার উত্তেজনায়। গত সপ্তাহেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানান, রাশিয়ার প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ‘উপযুক্ত অঞ্চলগুলোতে’ দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় রুশ কূটনৈতিক ও সামরিক নেতাদের সঙ্গে টানা বাকযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন মেদভেদেভ।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে জানায়, ‘ইউরোপ এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে আমাদের স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত অবস্থান পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে এ ধরনের অস্ত্র মোতায়েনের উদ্যোগ নিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, রাশিয়ার একতরফা স্থগিতাদেশ বজায় রাখার যৌক্তিকতা আর নেই।’

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ গত বছরই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সামরিক পদক্ষেপ যদি অব্যাহত থাকে, তবে মস্কোকে এই ক্ষেপণাস্ত্র স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করতে হতে পারে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লাভরভ বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া ও চীনের বারবার সতর্কতা উপেক্ষা করেছে। এখন তারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এ ধরনের অস্ত্র মোতায়েন শুরু করে দিয়েছে। এমন অবস্থায় রাশিয়ার স্থগিত সিদ্ধান্ত কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।’

উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল ঐতিহাসিক আইএনএফ চুক্তি, যা ইউরোপে ভূমিভিত্তিক মধ্যমপাল্লার পারমাণবিক ও প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিষিদ্ধ করেছিল। সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মধ্যে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি পরবর্তীতে ঠান্ডা যুদ্ধ কমানোর পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

কিন্তু ২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রকে আইএনএফ চুক্তি থেকে বের করে আনে। তখন রাশিয়া পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় জানায়, যুক্তরাষ্ট্র যদি আগে অস্ত্র মোতায়েন না করে, তবে তারাও করবে না।

তবে বর্তমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে সেই অবস্থান থেকে সরে আসছে মস্কো। এতে করে ইউরোপ ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতার নতুন এক অধ্যায় শুরুর ইঙ্গিত মিলছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top