শনিবার, ১১ই মে ২০২৪, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১


এক মাসে বিএনপি-জামায়াতের ৬ শতাধিক নেতাকর্মীর কারাদণ্ড


প্রকাশিত:
১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৫৯

আপডেট:
১১ মে ২০২৪ ১৬:০৭

ফাইল ছবি

এক মাসের ব্যবধানে বিএনপি ও জামায়াতের ছয় শতাধিক নেতাকর্মীর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। নাশকতার দায়ে কয়েক বছর আগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় এসব মামলা হয়েছিল।

অনুমতি ছাড়া রাস্তায় জমায়েত, সম্পদের ক্ষতি, নাশকতা, যানবাহনে আগুন-ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলাগুলো করা হয়েছিল।

এর মধ্যে ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের নভেম্বরের মধ্যে করা ৩০টি মামলায় অনেককে দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত।

গত এক মাসে বিভিন্ন মামলার রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন মোট ৬১০ জন। তার মধ্যে গতকাল রোববার ৭৩ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকার বংশাল, কলাবাগান ও কোতোয়ালি এলাকায় নাশকতার মামলায় তাদের কারাগারে রাখা হয়েছিল।

রাজধানীর বংশাল থানা এলাকায় বেআইনি সমাবেশ ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় বিএনপির ২৫ নেতাকর্মীকে পৃথক দুই ধারায় তিন বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদীর আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় কোনো আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। বিচার চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের চারজন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সোহেল, রাজু, হাজী সিরাজ, মামুন, রনি, মঈন, হাজী মো. মাছুম, গলাকাটা আজিম, ওমর ফারুক, রাজিয়া আলম ওরফে রাজিয়া সুলতানাসহ প্রমুখ। দণ্ডবিধির এক ধারায় তাদের আড়াই বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি দুই হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই আইনের আরেক ধারায় ছয় মাস করে কারাদণ্ড, দুই হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও সাত দিনের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিরা বংশাল থানার ১০৩ নম্বর এনসিসি রোডের সামনে মিছিল বের করে। তারা গাড়ি ভাঙচুর, দোকানপাট ভাঙচুর করে।

ওই ঘটনায় বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক আজাহার হোসেন মামলা করেন। ২০১৯ সালের ৩০ জুন মামলাটি তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। এরপর বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলার পাঁচ বছর পর রায় ঘোষণা করেন আদালত।

দশ বছর আগে ২০১৩ সালে রাজধানীর কলাবাগান থানার নাশকতার মামলায় পৃথক তিন ধারায় বিএনপি ৪০ নেতাকর্মীর দেড় বছরের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী হায়দারের আদালত। রায়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সিরাজুল ইসলাম, শাহ আলম সৈকত, মোহাম্মদ জাকির হোসেন, নোমান, এলিন, ওয়াসিউল হাসিব অনিক, পলাশ হাওলাদার, আমিরুল বেপারী চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন, আলমগীর হোসেন, রিপন আহাম্মেদ, আশরাফুল ইসলাম, শাহপরান, মাহমুদুল হাসান রুম্মান, কামাল, ফারুক, ফরহাদ, ইসমাইল শেখ, জুয়েল, শফিকুল ইসলাম, বাচ্চু মিয়া, রবিউল ইসলাম, মোস্তফা, রুবেল, রুবেল হোসেন ওরফে সোহেল, সিদ্দিক, ফয়সাল, শহিদুল, রাসেল, আব্দুল লতিফ, রুবেল, মনির হোসেন, রিয়াজুল হাসান রাসেল, রাজীব হাসান শিবলু, মাহফুজ ওরফে চঞ্চল, জসিম রানা ওরফে জসিম, জুবায়ের হোসেন, অনুপ চন্দ্র রায় ও রবিউল ইসলাম নয়ন।

রায়ে দণ্ডবিধি আইনের ১৪৩ ধারায় ৪ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০০ টাকা জরিমানা, অনাদায় ৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড, ১৪৭ ধারায় ১ বছরের সশ্রম করাদণ্ড, ২ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ১০ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ১৮৬ ধারায় ২ মাসের সাশ্রম কারাদণ্ড, ২০০ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ২ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর বেআইনি সমাবেশ, দাঙ্গার সৃষ্টি ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে কলাবাগান থানায় মামলাটি করা হয়।

এছাড়াও অবরোধে নাশকতার অভিযোগে কোতোয়ালি থানার করা আরেক মামলায় বিএনপির আট নেতাকর্মীকে দেড় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া ১২ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।

কয়েক বছর আগে করা মামলায় এত কম সময়ের মধ্যে বিপুল নেতাকর্মীর সাজা দেওয়ার ঘটনায় আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা বিস্ময় প্রকাশ করলেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় সরকার হস্তক্ষেপ করে না।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী জেড আই খান পান্না বলেন, ' কম সময়ের মধ্যে দ্রুত এতো মানুষকে দোষী সাব্যস্ত ও সাজা দেওয়া আইনের শাসনের পরিপন্থী। দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল? সাক্ষ্য দেওয়ার আগে সাক্ষীদের জবানবন্দিগুলো ক্রস-চেক করা হয়েছিল?' এমন প্রশ্ন করেন তিনি।

বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাজা ও কারাদণ্ডের ঘটনায় বিচার বিভাগ সম্পর্কে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট আদালতের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে কি না তা খতিয়ে দেখতে প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেন তিনি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top