সোমবার, ১১ই আগস্ট ২০২৫, ২৭শে শ্রাবণ ১৪৩২


ভুল চিকিৎসা: নবজাতকের পরিবারকে ৫ কোটি দিতে রুল, তদন্তের নির্দেশ


প্রকাশিত:
১১ আগস্ট ২০২৫ ১২:৫২

আপডেট:
১১ আগস্ট ২০২৫ ১৫:২৬

ছবি সংগৃহীত

রাজধানীর ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্ডিসের চিকিৎসা করতে গিয়ে নবজাতকের হাত ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি চিকিৎসায় অবহেলায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নবজাতকের হাত ভেঙে দেওয়ার ঘটনার তদন্ত করে তিনমাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (১১ আগস্ট) এ বিষয়ে এক আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির। এর আগে নবজাতকের হাত ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় শিশুটির বাবা নূরে সাফাহ্ হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, জন্ডিসের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নবজাতকের হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, গত ৩ এপ্রিল সাত দিনের নবজাতকের শারীরিক অসুস্থতার কারণের ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এ কে খাইরুল আনাম চৌধুরীর অধীনে ভর্তি করেন মিরপুরের বাসিন্দা নবজাতকের বাবা মো. নূরে সাফাহ্। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা চলার সময়ে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ নবজাতকের বাবার। বিষয়টি নিয়ে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

শিশুর বাবা নূরের সাফাহ্ বলেন, গত ৩ এপ্রিল সাত দিনের নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি থাকায় ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি ফটোথেরাপি দেওয়ার জন্য। ভর্তির পরপরই তারা জানায় যে, দীর্ঘসময় আনইন্টারাপ্টেডলি থেরাপি নেওয়ার জন্য তারা দুই থেকে তিনবার ব্রেস্ট ফিডিং করতে দেবে এবং বাকি সময় ব্রেস্ট পাম্প করে তাদের কাছে দিলে তারাই নিজ দায়িত্বে বাচ্চাকে খাইয়ে নেবে। ট্রিটমেন্ট চলাকালীন সময়ে কেউ বাচ্চার কাছে যেতে পারবে না এবং দেখতে পারবে না। রাত ১২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত মাও বাচ্চার কাছে যেতে পারবে না।

তাদের নিয়মানুযায়ী, আমার স্ত্রী বাচ্চাকে রাত ১২টায় স্বাভাবিকভাবে খাইয়ে দিয়ে আসে। সকাল ৭টায় তারা পুনরায় তাকে খাওয়ানোর জন্য ডেকে নিয়ে গেলে আমার স্ত্রী অনেক চেষ্টা করেও খাওয়াতে পারেনি, কারণ বাচ্চা ঘুমাচ্ছিল এবং কোনোভাবেই ঘুম থেকে উঠছে না। কর্তব্যরত নার্স জানায় যে, ঘুম থেকে উঠলে খাওয়ানোর জন্য ডেকে দেবে। তখন সে আবারও ব্রেস্ট পাম্প করে তাদের নিকট খাওয়ানোর জন্য দিয়ে আসে।

তিনি বলেন, পরের দিন সকাল ১০টায় ডিউটি চিকিৎসক জানায়, যে বাচ্চার বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এসেছে তাকে রিলিজ দিয়ে দেবে আমরা যেন বিল ক্লিয়ার করে আসি। ১১টার দিকে তারা বাচ্চাকে তার মায়ের কাছে দিয়ে যায় এবং জানায় যে বাচ্চার ডান হাতে ক্যানোলা পরানোর কারণে ব্যথা আছে তাই এই হাত যেন কম নাড়ানো হয়।

এখানে জানিয়ে রাখা ভালো যে, তখনো বাচ্চা ঘুমাচ্ছিল এবং ফুল বডি কাঁথা দিয়ে মোড়ানো ছিল। বাসায় নিয়ে আসার পর কাঁথা থেকে বের করে খাওয়ানোর চেষ্টা করার সময় দেখা যায় যে, বাচ্চার ডান হাত কনুই এর ওপরে ভাঙা যেটা টাচ করলেই সে মারাত্মকভাবে কান্না করছে।

হাত ভাঙা থাকার ব্যাপারটি বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই ১২টার সময় আমরা পুনরায় তাকে ডেলটা মেডিকেল কলেজ এর নেওনেটাল ওয়ার্ডে নিয়ে যাই যেখানে সে ভর্তি ছিল। তাদেরকে দেখানোর পর ডিউটি চিকিৎসক জানায়, সে নিজে চেক করে দিয়েছিল ডিসচার্জ করার আগে এবং তাদের দাবি আমরা বাসায় নেওয়ার পর টানাটানি করে হাত ভেঙে ফেলেছি।

মনে হচ্ছিলো, মোবাইল কেনার মতো কেনো চেক করে বাচ্চা নেইনি সেটা আমাদের অপরাধ- যোগ করেন নবজাতকের বাবা মো. নূরের সাফাহ্।

তিনি আরও বলেন, একপর্যায়ে তারা একটি এক্সরে করার অ্যাডভাইস দিয়ে আমাদের শ্যামলীর পঙ্গু হাসপাতালে যেতে বলে কারণ তাদের ওখানে এক্সরে করার উপায় নাকি নেই। তাই আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়ে চলে আসি কারণ বাচ্চার ট্রিটমেন্ট আমাদের কাছে জরুরি ছিল। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ট্রিটমেন্ট চলাকালীন বাচ্চা ঘুমিয়েই ছিল এবং কোনোভাবেই তাকে খাওয়ানো যায়নি।

সন্ধ্যার পরপরই বাচ্চা স্বাভাবিক হওয়া শুরু করে এবং খাওয়া শুরু করে। যেহেতু রাত ১২টায়ও বাচ্চা স্বাভাবিক ছিল এবং খাওয়াতে পেরেছে কিন্তু সকাল ৭টায় পুনরায় দেখার পর থেকে সে ঘুমিয়েই কাটিয়েছে তাতে আমাদের ধারণা রাতের কোনো এক সময়ে হাত ভেঙেছে এবং সেটা স্বাভাবিক দেখানোর জন্য তাকে কোনো ধরনের সিডেটিভ ব্যবহার করে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল যেন আমরা না বুঝতে পারি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top