মঙ্গলবার, ১৪ই অক্টোবর ২০২৫, ২৮শে আশ্বিন ১৪৩২


হাসিনা-কামালের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শুরু আজ, হবে সরাসরি সম্প্রচার


প্রকাশিত:
১২ অক্টোবর ২০২৫ ১০:১৩

আপডেট:
১৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:০১

ফাইল ছবি

গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত সহিংস আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আজ থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হচ্ছে।

রোববার (১২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলের সামনে এই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হবে। এদিন প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন) তাদের যুক্তি তুলে ধরবে। পরে আসামিদের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীরা নিজেদের পক্ষে কথা বলবেন। সবশেষে রাষ্ট্রপক্ষ আবারও যুক্তি খণ্ডন করবে। এরপর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হবে।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনালের অনুমতি পেলে আজকের যুক্তিতর্ক সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এটি হবে দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির।

এর আগে, গত ৮ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে জেরা শেষ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমির হোসেন। এ নিয়ে টানা তিন দিন ধরে তাকে জেরা করা হয়। তদন্ত কার্যক্রমে রাষ্ট্রপক্ষ মোট ৫৪ জন সাক্ষী উপস্থাপন করে, এবং সবমিলিয়ে ২৮ কার্যদিবসে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দিতে জানান, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত আন্দোলনে দেশের ৪১টি জেলায় অন্তত ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। তিনি বলেন, ওই সময়ে প্রায় ৫০টিরও বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয় এবং আন্দোলনের সময় তিন লাখ পাঁচ হাজার গুলি ছোড়া হয়। এসব তথ্য তিনি সরেজমিন তদন্ত, ভিডিও প্রমাণ এবং গণমাধ্যম প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উপস্থাপন করেন।

জবানবন্দিতে তিনি জানান, যাত্রাবাড়ী, গাজীপুর, বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুষ্টিয়া, খুলনা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়। গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহতদের ছবি ও ভিডিও ট্রাইব্যুনালে দেখানো হয়। এছাড়া যমুনা টেলিভিশনে প্রচারিত একটি বিশেষ প্রতিবেদনও তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে উপস্থাপন করেন, যাতে আন্দোলনের সময় চালানো হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়।

মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের একজন ছিলেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি নিজের দায় স্বীকার করে রাষ্ট্রের পক্ষে সাক্ষ্য দেন এবং রাজসাক্ষী হন। এছাড়া তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহাও সাক্ষ্য দিয়েছেন।

গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়। এ মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। প্রসিকিউশনের অভিযোগপত্র ছিল প্রায় ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা ও বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা।

প্রসিকিউশন পক্ষ মোট ৮১ জনকে সাক্ষী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। তারা প্রত্যক্ষদর্শী, শহীদ পরিবার বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণের সময় অনেকেই দাবি করেন, এই আন্দোলন ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও রাষ্ট্রবিরোধী, যা সাধারণ মানুষের ওপর ভয়াবহ দমন-পীড়ন চালিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়। ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে অনেক শহীদ পরিবারের সদস্য দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এই মামলার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। এরপর মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে এগোয় এবং আজ শুরু হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়—যুক্তিতর্ক। রাষ্ট্রপক্ষ আশাবাদী, প্রমাণ ও সাক্ষ্য-ভিত্তিক এই মামলায় আদালত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top