যে কারণে হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের কপি যাচ্ছে না দুই মন্ত্রণালয়ে
প্রকাশিত:
১৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:১৯
আপডেট:
১৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:৪১
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার অসুস্থ থাকায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের কপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হচ্ছে না আজ।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে এ তথ্য জানায় ট্রাইব্যুনাল প্রশাসন। এদিন সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণাল ও বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শকের দপ্তরে রায়ের কপি পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা এ মামলায় দণ্ডিত সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের কাছেও পাঠানোর কথা ছিল।
ট্রাইব্যুনাল প্রশাসন জানায়, ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান অসুস্থ থাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের কপি আজ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পাঠানো সম্ভব হবে না।
এর আগে, সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী মামুনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করেন। বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে করা এটিই প্রথম কোনো মামলার রায় পেলেন আসামিরা। ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এজলাসে ওঠেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। ঠিক দুই মিনিট পর মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান চেয়ারম্যান। এরপর ১২টা ৪০ মিনিট থেকে ছয় অধ্যায়ের ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। তার পড়া শেষে শুরু করেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ। সবশেষ পড়েন গোলাম মর্তূজা মজুমদার। দুই ঘণ্টা ১০ মিনিটজুড়ে এ সংক্ষিপ্ত রায় পড়া হয়।
চূড়ান্ত রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, হাত-পা, নাক-চোখ ও মাথার খুলি হারানো যেসব সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের বাস্তব অবস্থা দেখলে যেকোনো মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক মানসিক অবস্থা ধরে রাখা কঠিন। ফলে এ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের যেকোনো মূল্যে বিচারের আওয়াতায় আনা উচিত। এক্ষেত্রে ন্যায়বিচারকে ব্যাহত হতে দেওয়ার সুযোগ নেই।
প্রথম অভিযোগে শেখ হাসিনাকে সাজা দেওয়ার ব্যাখ্যায় ট্রাইব্যুনাল বলেন, সংঘটিত অপরাধে প্ররোচনা-উসকানি, আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশ এবং সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধে নিষ্ক্রিয়তা ও অপরাধ সংঘটনকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়ী। এসব অপরাধে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
দুই নম্বর অভিযোগের অপরাধ বর্ণনা করে ট্রাইব্যুনাল বলেন, এই অভিযোগে দুটি অপরাধের জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি অপরাধ হলো জুলাই গণআন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার ও মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ। এই নির্দেশনা দিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এ ৩(২)(ছ) (জ) ও ৪(১) (২) (৩) ধারার অপরাধ সংঘটন করেছেন। দ্বিতীয় অপরাধটি হলো শেখ হাসিনার এই নির্দেশ মেনে গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা ও একই দিনে সাভারের আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া। এসব অপরাধের দায়ে আদালতের সিদ্ধান্ত তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, একই অপরাধসহ আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামনু সমানভাবে দায়ী। এর জন্য কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো। মামুনেরও সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য। কিন্তু রাজসাক্ষী হয়ে সংশ্লিষ্ট অপরাধের বিষয়ে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করে তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে মনে করে ট্রাইব্যুনাল। সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশে তার এই সাক্ষ্য বিচারিক প্রক্রিয়ায় আদালতকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করেছে। ফলে তাকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে নমনীয়তা প্রদর্শন করছে আদালত। সবকিছু বিবেচনায় তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
প্রথমটি হলো উসকানি। গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে রাজাকার বলে সম্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে ফোনে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের আদেশ দেন তিনি। ১৮ জুলাই ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সাবেক এই সরকারপ্রধান। ফোনে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের পাশাপাশি হেলিকপ্টারে গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়।
একইসঙ্গে ড্রোনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার অবস্থান নির্ণয়ের নির্দেশ দেন হাসিনা। তার এমন প্রত্যক্ষ নির্দেশনার মাধ্যমে দেশজুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪০০ ছাত্র-জনতা। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার আন্দোলনকারী। তৃতীয় অভিযোগটি হলো রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা। আর চতুর্থ-পঞ্চম অভিযোগটি যথাক্রমে চানখারপুলে ছজ হত্যা ও আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: