শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


রোগী সেজে ভারত গিয়ে ‘মাদক’ আনতেন তারা


প্রকাশিত:
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:০৮

আপডেট:
৪ মে ২০২৪ ০০:৪৪

 ফাইল ছবি

ব্যথানাশক হিসেবে বহুল ব্যবহৃত ট্যাপেন্টাডল ওষুধকে মাদক হিসেবে সেবন ও বিক্রি করছে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীরা। ট্যাপেন্টাডলকে ‘খ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ২০২০ সালের ৮ জুলাই গেজেট প্রকাশ করে সরকার।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও ঢাবির ফার্মেসি বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৬৫ ধারা অনুযায়ী ‘খ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য হিসেবে ট্যাপেন্টাডলকে তফসিলভুক্ত করা হয়।

মাদক হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও এটির বেচা-বিক্রি, চোরাচালান বন্ধ নেই। গতকাল রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল থেকে ট্যাপেন্টাডলের সর্ববৃহৎ চালান জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। ৪২ হাজার ২০০ পিস ট্যাপেন্টাডলসহ কলকাতা থেকে আসা ৫ জন যাত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, চক্রের এক সদস্যকে রোগী সাজিয়ে সীমান্ত এলাকা দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাঠানো হতো। এরপর সেখান থেকে বিমানে করে বিপুল পরিমাণ মাদক নিয়ে ফিরে আসত তারা। প্রতি মাসে তারা অন্তত ৪-৫ বার এভাবে যাতায়াত করত।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও ডিএনসির ঢাকা মেট্রো. কার্যালয়ে (উত্তর) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটওয়ারী।

তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ের (উত্তর) উপ-পরিচালক(ডিডি) রাশেদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে সমন্বিত একটি দল বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল এলাকায় অবস্থান নেয়। গ্রিন চ্যানেল পার হলে ৫ জন যাত্রীর কাছ থেকে ৪২ হাজার ২০০ পিস ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। যা যাবতকালের ট্যাপেন্টাডলের সর্ববৃহৎ চালান।

গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা হলেন, মূল হোতা মো. সোলাইমান (৪৪) হৃদয় ইসলাম রাজু (২৯), এ কে এম আবু সাইদ (৪৭), আশীক সাইফ (৩৬) ও মো. ফারুক (৩৫)।

ট্যাপেন্টাডল আনতে ভিন্ন কৌশল

অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল একটি চক্র পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে ফেনসিডিল ও ট্যাপেন্টাডলের বড় চালান এনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। সে তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অনুসন্ধান করতে থাকি। অনুসন্ধানে মূল হোতা সোলাইমানের ব্যাপারে তথ্য মেলে। সোলাইমান মাসে ৪-৫ বার ভারতের কলকাতা যাওয়া-আসা করেন। প্রতিবারেই তিনি বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে ট্যাপেন্টাডলসহ অন্যান্য অবৈধ মাদক দেশে নিয়ে আসতেন। এ কাজে তিনি একাধিক সহযোগীকে ব্যবহার করতেন।

গত আগস্ট মাসে এ চক্রের একজন সদস্যকে ফেনসিডিলসহ বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়। ব্যবসার কৌশল হিসেবে তারা কলকাতা যাওয়ার ক্ষেত্রে যশোর বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহার এবং দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে রুট হিসেবে ব্যবহার করত।

মুজিবুর রহমান বলেন, চক্রের সদস্যরা মূলত দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে রোগীর চিকিৎসার কথা বলে ভারতে যেত। এরপর কয়েকদিন অবস্থান শেষে বিপুল পরিমাণ মাদক ও অবৈধ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে বিমানবন্দর দিয়ে দেশে ফিরে আসত।

বিমানবন্দর থেকে যেভাবে গ্রেপ্তার

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে একটি দল বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল এলাকায় অবস্থান নেয়। চক্রের সদস্যরা অ্যারাইভাল ইন্ট্রিগেট দিয়ে প্রবেশের সময় সোলাইমান ও সহযোগীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়।

ইমিগ্রেশন শেষ করে লাগেজ বেল্ট থেকে তাদের লাগেজ সংগ্রহ করে কাস্টমস চেকিংয়ের কার্যক্রম শেষ করে। সেখান থেকে বের হয়ে গ্রিন চ্যানেল পার হওয়ার সময় চক্রের পাঁচজনকে লাগেজসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সবার ব্যাগ তল্লাশি চালিয়ে ৪২ হাজার ২০০ পিস মাদক উদ্ধার করা হয়।

মূল হোতা সোলাইমান পেশায় ব্যবসায়ী। তার বাড়ি চট্টগ্রামে রাউজানের উরকিরচরে। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডের ঋষখালীর গবড়াপাড়ায় হৃদয় ইসলাম রাজুর বাড়ি। পেশায় তিনি টিসিবির ডিলার। পেশায় একটি প্রাইভেট কোম্পানির ম্যানেজার আবু সাইদের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদীর নরেন্দ্রপুরে। গ্রেপ্তার আশীক সাইফ একটি প্রাইভেট কোম্পানির এক্সিকিউটিভ। তার বাড়ি ঢাকার কলাবাগানের কাঁঠালবাগান এলাকায়। কক্সবাজারে জেলা সদরের ৭ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ তারাবানিয়ারচরের বাসিন্দা ফারুক পেশায় স্টেশনারি দোকান ব্যবসায়ী।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top