শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


বৈশ্বিক উষ্ণতা : হুমকির মুখে বাংলাদেশের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা


প্রকাশিত:
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:৪২

আপডেট:
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:০১

প্রতীকী ছবি

গত কয়েক বছর ধরে, গ্রীষ্মের শুরু থেকেই দেশজুড়ে তীব্র দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। উদ্বিগ্ন বৈশ্বিক সংস্থাগুলি বিভিন্ন সময়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে এই উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে বিশাল সংখ্যক দেশগুলিকে আগামী দিনে প্রায় প্রতি বছর দীর্ঘ খরা, দাবানল এবং বৃষ্টিপাতের মুখোমুখি হতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল (আইপিসিসি) এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দাবানল বৃদ্ধি এবং বন্যার কম্পাঙ্কের কারণে বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের সহনশীলতার মাত্রা ইতিমধ্যেই ছাড়িয়ে গেছে।

এদিকে নিচু এলাকা, ভূ-সংস্থান, ব-দ্বীপের আকৃতি এবং বঙ্গোপসাগর ও হিমালয়ের সান্নিধ্যের কারণে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। জলবায়ু পরিবর্তন এসব বিপদের মাত্রা ও তীব্রতা দিন দিন বাড়িয়েছে।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) প্রকাশিত সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, বাংলাদেশের কৃষি ভবিষ্যতে তাপমাত্রা, লবণাক্ততা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাত হতে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা ভবিষ্যতে কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর বড় ধরনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।

চলতি বছরের মার্চে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের কৃষি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও পল্লী উন্নয়ন খাত মূল্যায়ন ও কৌশল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তার জিডিপির ২ শতাংশ হারাবে। সেই সঙ্গে ফসলের রোগবালাই ও পোকার আক্রমণও বাড়বে। এমনকি মোটামুটি সহনীয় জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও দেশে ধানের উৎপাদন ১৭ শতাংশ কমে যাবে। গমের ক্ষেত্রে এই হার ৬১ শতাংশ।

এই ফসলের ক্ষতির প্রধান কারণ হল দীর্ঘস্থায়ী আগুন এবং খরা। পরিবেশে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে কৃষি খাতে উৎপাদনের পাশাপাশি শ্রমিকদের কর্মদক্ষতাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া খরা, লবণাক্ততা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের মৎস্য সম্পদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও উন্নয়ন এসব সংকটকে আরও জটিল করে তুলবে। খাদ্য নিরাপত্তা, জীবিকা ও জীবন সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের ফসল উৎপাদনে বিভিন্ন ক্ষতি দৃশ্যমান হয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যাপক পার্থক্যের কারণে এবছর বিভিন্ন জেলায় ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। এতে ফসলের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস ডেইলি মেইলকে বলেন, “আমাদের দেশে জলবায়ু সহনশীল জাত উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এসব জাত নিয়ে গবেষণায় আমরা বিশ্বব্যাপী এগিয়ে। ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে এখনও কোনো গুরুতর সমস্যা নেই,” যাইহোক, আমরা যতটা সম্ভব কম ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। ভরাট খাল খনন করছে বিএডিসি। আবহাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে কৃষিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে আমরা আশাবাদী। এতে সেচের জন্য পানির প্রাপ্যতাও কমে যাবে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশে খাদ্য নিরাপত্তা সংকটও বাড়বে।

এমতাবস্থায় দেশের কৃষি খাতে টেকসই কৌশল গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থার ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। দীর্ঘস্থায়ী খরা ইতিমধ্যেই ফসল বপন ও ফসল কাটার মৌসুমে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডঃ আইনুন নিশাত ডেইলি মেইলকে বলেছেন, “কৃষি মূলত জলবায়ুর উপর নির্ভর করে। জলবায়ু পরিবর্তন আবহাওয়াকে অসহনীয় করে তুলবে। লবণাক্ততা বাড়বে। গত আষাঢ়-শ্রাবণে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম বৃষ্টি হয়েছে। আবার ভাদ্র-আশ্বিনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে”

ড. নিশাত আরও বলেন, “২০৫০ সালের মধ্যে যে হারে তাপমাত্রা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে- তা পরাগায়নকে ব্যাহত করবে। তখন নানা সমস্যা দেখা দেবে। উপকূলীয় লবণাক্ততা বাড়লে তা আরও বাড়বে। হাওর অঞ্চলে বন্যা, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দেরীতে বর্ষা বৃদ্ধি, উত্তরবঙ্গে খরা, সার্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং এর ফলে পোকামাকড়ের আক্রমণ বৃদ্ধি এসব প্রভাব ধীরে ধীরে অনুভূত হবে। ২০-৩০ বছর পরে এই সমস্যাগুলি কৃষিতে গুরুতর হবে।”



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top