বুধবার, ৩০শে জুলাই ২০২৫, ১৫ই শ্রাবণ ১৪৩২


সাগরপথে ইউরোপগামীদের শীর্ষে বাংলাদেশিরা


প্রকাশিত:
২৯ জুলাই ২০২৫ ২২:০৬

আপডেট:
৩০ জুলাই ২০২৫ ১০:০৫

ছবি সংগৃহীত

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকারীদের মধ্যে বাংলাদেশিরা এখন শীর্ষে রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই প্রায় ৯ হাজার ৭৩৫ জন বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইতালিতে পৌঁছেছেন। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের এক তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ বছরে এই পথ ব্যবহার করে অন্তত ৭০ হাজার বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছেন।

বাংলাদেশের অন্তত ১০ থেকে ১২টি জেলার, বিশেষ করে মাদারীপুর, শরীয়তপুর, সিলেট ও সুনামগঞ্জের অনেক বাসিন্দা ইউরোপে যাওয়ার আশায় সমুদ্রপথে পাড়ি জমাচ্ছেন। অধিকাংশই সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষ করে ফেসবুকের মাধ্যমে দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতারণার শিকার হন। চাকরির আশ্বাস দিয়ে তাঁদের লিবিয়ায় আটকে রেখে নির্যাতন, অর্থ আদায় এবং নানা ধরনের নিপীড়নের মুখে ফেলা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মানব পাচার আইনে নতুন করে ১ হাজার ৩৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। বর্তমানে দেশে মানব পাচার সংক্রান্ত মোট ৪ হাজার ৩৬০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৩৪৬টি মামলা তদন্তাধীন এবং ৩ হাজার ১৪টি বিচারাধীন রয়েছে। অনেক মামলার বিচার শেষ হলেও অপরাধীরা শাস্তি না পেয়ে খালাস পেয়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় আগামীকাল (৩০ জুলাই) পালিত হবে আন্তর্জাতিক মানব পাচার-বিরোধী দিবস। জাতিসংঘ ২০১৩ সালে এই দিনটিকে মানব পাচার প্রতিরোধের জন্য নির্ধারণ করে। এ বছরের প্রতিপাদ্য- ‘সংঘবদ্ধ অপরাধ মানব পাচার, বন্ধ হোক শোষণের অনাচার।’

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জানান, ইউরোপে যাওয়ার জন্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা বাংলাদেশিদের মধ্যে বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশি অভিবাসীরা সেন্ট্রাল মেডিটেরিয়ান রুটে শীর্ষে রয়েছে। লিবিয়ায় আটক বাংলাদেশিদের ক্যাম্পে রেখে নির্যাতন, অর্থ আদায় এবং মৃত্যুর মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। দালালরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি তুলনামূলক ভাবে দুর্বল। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে মামলা হলেও কার্যকর বিচার হচ্ছে না।

ফ্রন্টেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অন্তত ৯২ হাজার ৪২৭ জন বাংলাদেশি ইউরোপে পৌঁছেছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে লিবিয়ায় ২৩ জন বাংলাদেশির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

ব্র্যাকের গবেষণা বলছে, এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ৬০ শতাংশ ভালো চাকরির আশায় লিবিয়ায় যান, কিন্তু ৮৯ শতাংশ কোনো কাজ পান না। তাঁদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন, ৫৪ শতাংশ তিনবেলা খাবার পান না এবং ২২ শতাংশ দিনে মাত্র একবার খাবার পান।

এছাড়াও ঢাকা থেকে দুবাই, মিসর, ইস্তাম্বুল, কাতার বা সিরিয়া হয়ে লিবিয়ায় যাওয়ার পথ এখন পাচারকারীদের প্রধান রুট। পাশাপাশি হজ, ভিজিট বা কনফারেন্স ভিসার অজুহাতে বিদেশে পাঠানোর নামে পাচার বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুবাই, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, নেপাল, কম্বোডিয়া, সার্বিয়া, ভিয়েতনাম, আলজেরিয়া, মৌরিতানিয়া ও তিউনিসিয়াকে নতুন গন্তব্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তাছাড়াও, মিয়ানমারের ‘স্ক্যাম সেন্টারে’ বাংলাদেশিদের অস্ত্রের মুখে জোর করে সাইবার অপরাধে যুক্ত করা হয়েছে। ব্র্যাক এমন ১৮ জনকে উদ্ধার করেছে। অন-অ্যারাইভাল ভিসা সহজলভ্য হওয়ায় পাচারকারীরা এখন বাংলাদেশিদের নেপালেও পাচার করছে।

প্রসঙ্গত, ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সমুদ্রপথে সোয়া লাখ মানুষ পাচারের শিকার হয়, যাদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। মালয়েশিয়া সীমান্তে একাধিক গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। বর্তমানে আবার বিয়ে ও চাকরির প্রলোভনে রোহিঙ্গাদের পাচার শুরু হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top