বৃহঃস্পতিবার, ৩০শে অক্টোবর ২০২৫, ১৫ই কার্তিক ১৪৩২


মাউশির ডিজি পদে বিতর্কিত ৮ প্রার্থী, প্রশাসনে তোলপাড়


প্রকাশিত:
৩০ অক্টোবর ২০২৫ ১০:১৩

আপডেট:
৩০ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:৫৯

ফাইল ছবি

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষা প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার একটি সিন্ডিকেট এই পদের জন্য আটজন প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করেছে। তবে চূড়ান্ত নিয়োগের সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি।

গত ৬ অক্টোবর প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, “প্রার্থীকে সৎ, দায়িত্বপরায়ণ, প্রশাসনিক কাজে দক্ষ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণে কৃতিত্বের স্বাক্ষর থাকতে হবে।” কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্রের দাবি, তালিকায় থাকা বেশ কয়েকজন প্রার্থীর অতীত বিতর্কিত এবং তাদের নাম এসেছে সিন্ডিকেটের তদবিরে।

সূত্র জানায়, অতিরিক্ত সচিব বদরুননাহারের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটের তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন জয়পুরহাট সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুব সরফরাজ। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গণঅভ্যুত্থানের পর ওএসডি হলেও পরে জয়পুরহাট কলেজে বদলি হন। তাকে শিক্ষা প্রশাসনে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা হিসেবেই দেখা হয়।

দ্বিতীয় প্রার্থী নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাক আহমেদ ভূঁইয়া। তিনি সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই। অতীতে শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

তৃতীয় প্রার্থী বরিশালের আবুল কালাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শামীম আহসান খান। তার বিরুদ্ধে সাত কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রভাবে নিষ্পত্তি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়েও রাজনৈতিক তদবিরে তিনি ডিজি পদের দৌড়ে রয়েছেন।

অন্য প্রার্থী কবি নজরুল সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এ.বি.এস.এ. সাদী মোহাম্মদ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ ব্যাচের এই কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে বিতর্কিত সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। পরবর্তীতে তিনি স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সক্রিয় নেতা হিসেবে কাজ করেন। তার নামও রাজনৈতিক তদবিরে তালিকায় এসেছে বলে জানা গেছে।

তালিকায় আরও রয়েছেন তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ছদরুদ্দিন আহমদ। “অসদাচরণ” ও “দুর্নীতি”-সংক্রান্ত মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তার পদোন্নতি ও ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, এসব তথ্য গোপন রেখে তিনি পুনরায় গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পান।

এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মেহেরুন্নেছা। তিনি ও তার স্বামী—দুজনই সরকারি কর্মকর্তা—রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত পটভূমির কারণে আলোচনায় রয়েছেন।

তালিকায় আরও আছেন অধ্যাপক রায়হানা তাসলিমা, যিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তার আত্মীয় হিসেবে পরিচিত। তিনি ও তার স্বামী অতীতে শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্প ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক প্রভাব বিস্তার ও প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ ও ১৬ ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল যোগ্য ও সৎ প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া হবে, কিন্তু তালিকায় এসেছে বিতর্কিতদের নাম। এতে পুরো শিক্ষা প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।”

তাদের মতে, সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত থেকে যোগ্য ও নিরপেক্ষ প্রার্থীদের বাছাই না হলে শিক্ষা প্রশাসনে নতুন সংকট দেখা দিতে পারে।

এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরারের বক্তব্য নিতে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top