সাধারণ মানুষের গায়ে হাত দিলে রক্ষা নাই : প্রধানমন্ত্রী
 প্রকাশিত: 
 ৬ নভেম্বর ২০২২ ২২:০১
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১০:০৩
 
                                আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে। তাদের বিচারের কাজও হচ্ছে, অনেকের শাস্তি হয়েছে, ভবিষ্যতে হবে। কিন্তু যারা হুকুমদাতা, তাদের কথা আপনারা ভেবে দেখেন। যারা এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারে, এদের মানুষ কীভাবে সমর্থন করে তা জানি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার একটাই আহ্বান থাকবে দেশবাসী কাছে, কেউ যদি রাজনীতি করতে চায় সুস্থ রাজনীতি করুক, কিন্তু আমার সাধারণ মানুষের গায়ে হাত দিলে তাদের রক্ষা নাই। এটা সহ্য করা যায় না। এটা কখনো মানুষ সহ্য করতে পারবে না।
আজ রোববার দুপুরে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘অগ্নি সন্ত্রাসের আর্তনাদ : বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খণ্ডচিত্র’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীকে সজাগ থাকতে, এই ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর কেউ ঘটাতে না পারে। দল-মত যাই হউক, প্রত্যকটা মানুষের স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে। সেই অধিকার সংরক্ষণ করাটাই আমাদের দায়িত্ব। আমরা সেটাই চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণে, মানুষের মঙ্গলে। আমার দেশের মানুষ খেয়ে-পরে ভালো থাকবে, শান্তিতে থাকবে, উন্নত জীবন পাবে, যেটা আমার বাবা জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন পূরণ করাই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি কাজ করে যাচ্ছিলাম। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যা যা করার করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের আগস্টে ঘাতকের দল যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা এদেশের মানুষ হত্যার যাত্রা শুরু করে। আমার মনে হয় যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে অত্যচার করেছে, তার পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছি। ’৭৫ সালের পর আমাদের সেনাবাহিনীতে ১৯ থেকে ২০টা ক্যু হয়েছে। সেনা অফিসার, বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে। তাদের পরিবার লাশও পায়নি। কারণও জানতে পারেনি। বিচারও হয়নি। ফাঁসি দিয়ে, গুলি করে অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা দিনের পর দিন চলেছে এ দেশে।'
তিনি আরও বলেন, অনেক সংগ্রামের পর যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হলাম। তখনই সরকার উৎখাতের নামে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু হলো ২০০১ সালে, সেটা আবার ২০১৩, ’১৪, ’১৫ বার বার। কীভাবে মানুষ পারে? গাড়িতে আগুন ধরিয়ে জীবন্ত মানুষকে হত্যা করতে। কীভাবে পারে মানুষের ক্ষতি করতে, এটাই নাকি আন্দোলন? এই আন্দোলন তো কখনো দেখিনি। আন্দোলন তো স্কুলজীবন থেকেই আমরা করেছি। সেই আইয়ূব খানের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেছি, ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। কই আমরা তো স্বপ্নেও এ কথা ভাবি নাই যে, সাধারণ মানুষকে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে আন্দোলন করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ঘোষণা দিল অবরোধ এবং হরতাল। কিন্তু কাজ হলো কী মানুষকে হত্যা করা। আজকে এখানে যারা উপস্থিত, এটা তো খুব সামান্য কয়েকজন। ২০১৩ সালেই তারা ৩ হাজার ৬০০ মানুষকে পেট্রোল বোমা মেরে আহত করেছে। ২০১৪ ও ’১৫ তে করেছে।
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আন্দোলন কী রকম আন্দোলন সেটা আমি জানি না। মানুষের জন্য আন্দোলন করতে হলে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে, মানুষকে নিয়ে আন্দোলন করবে। কিন্তু তারা? ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হত্যা, মেয়েদের ওপর অত্যাচার, বাড়ি দখল, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার করেছে। আবার তাদের গ্রেপ্তার করে দিনের পর দিন অত্যাচার করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করলাম, আর ২০১৩ সালে আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করা হলো। প্রায় ৫০০ মানুষ শুধু আগুনে পুড়ে মারা গেছে। আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি তাদের পাশে দাঁড়াতে। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি, জীবন-জীবিকার যতটুকু পারি করেছি। যে মানুষগুলো আপন হারিয়েছে তাদের যে ব্যথা, কষ্ট, সেটা তো দূর করা সম্ভব না।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ওই দুঃসময়ের কথা যেন কেউ ভুলে না যায়। প্রত্যকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র, মাদক, অর্থ দিয়ে তাদের বিপথে ঠেলে দিয়েছিল। ’৭৫ এর পর থেকে এই চলছিল বাংলাদেশে। আওয়ামী লীগ আসার পর আমরা কিছুটা স্থিতিশীলতা আনতে পেরেছি।
অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাসের একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। তারপর আওয়ামী লীগের সভাপতি বিএনপির অগ্নি-সন্ত্রাসের ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা নিজে শুনেন এবং তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে অনেকেই কেঁদে দেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রীও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: