বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন


প্রকাশিত:
১১ মার্চ ২০২৩ ২২:৩৮

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৩০

 ফাইল ছবি

নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা আমরা আলাদা করে বলি বা উল্লেখ করি কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে বলি না। কারণ পুরুষ প্রধান সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষের সাথে উন্নয়নের সম্পর্ক আছে। আমরা সেই উন্নয়নের নারী সম্পর্ক আরও জোরালো করতে চাই। আর এজন্যই নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন।

নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান দুই ধারা। প্রথমত, নারীর ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক উন্নয়ন। যা একজন নারী ও তার পরিবারকে ঘিরে গড়ে ওঠে এবং সমাজেও এর প্রভাব বিস্তৃত হয়।

এখানে একজন বা একাধিক নারী আর্থিকভাবে স্বাধীন ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠেন। তারা তাদের উপর নির্ভরশীলদের অবলম্বন হয়ে থাকেন। তাদের অর্জিত অর্থনৈতিক সম্পদ পরিবার পরিজনের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করে। কিন্তু তারা যদি স্বাধীন ও অর্থশালী নারীত্বের বিকাশ অব্যাহত না রাখে তাহলে তা সমাজের কল্যাণে আসে না।

দ্বিতীয়ত, নারীর আর্থ সামাজিক উন্নয়ন। যে উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজের নারীদের উন্নয়ন সাধিত হয়। নারীরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের অন্যান্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।

পরিবারের বাইরে সমাজ ও রাজনীতিতে নারীর মতাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে করে অর্থনৈতিক সাবলম্বী নারীরা তাদের পরিবার ও সমাজের জন্য অবদান রাখতে পারে। তারা শুধু পরিবার কিংবা গোত্র নয় সমাজের পূর্বসূরি নারীদের জন্য পথ ও সুযোগ তৈরি করে। আর এজন্য আমরা নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে এই ধারণা সীমাবদ্ধ রাখি না।

আমরা বলি নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন। এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে নারীর সম অধিকার এবং পরিবার ও সমাজে আর্থিক সুবিধা উপভোগের বিষয়ে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার জন্মায়। এই অধিকারের বলে নারী সমাজে অন্যান্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও চর্চা করে। যেমন মত প্রকাশের অধিকার ও স্বাভাবিক মানবাধিকার।

নারীর অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক প্রকল্পে নারীর নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত দানের সক্ষমতা সমাজের অপরাপর নারীদের জন্য একদিকে উৎসাহের অন্যদিকে সাহসের।

একজন নারী যখন আর্থিক বিষয়ে নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ পান তখন সমাজের অপরাপর নারীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেন। বাংলাদেশে চার দশক ধরে নারী নেতৃত্বের বিকাশ সাধিত হয়েছে এবং নারীরা সামাজিক অবস্থান উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। যা পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ এবং সমপর্যায়ের অনেক দেশের চেয়ে ভালো।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এক হিসাবে নারীর সার্বিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৮-এ। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান পাঁচ।
নারী উন্নয়নে সার্বিক সূচকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলভুক্ত ২৪টি দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার পরই দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান বাংলাদেশের। বিশ্বের ৩৬টি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। আমরা বুঝতে পারি এক্ষেত্রে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে।

এতে সহজে অনুমেয় যে, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতা তাদের অন্যান্য ক্ষেত্রে অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় পুঁজি, তারল্য এবং অর্থের পরিবর্তে সম্পদের ব্যবহার করা যায় এমন সম্পদের গুরুত্ব ও ব্যবহার বাড়ছে।

আর্থিক বিষয়ের উপর মানুষের নির্ভরশীলতা অর্থনৈতিক ভীতের সাথে সম্পর্কিত। নারীর দায়িত্বে ও মালিকানায় সম্পদ রক্ষিত হলে সেখানে নারীর মতামতের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং তা নারীকে সমাজ, পরিবার ও প্রতিষ্ঠানে তার অবস্থান সুসংহত করতে সাহায্য করে।

নারী কীভাবে সম্পদে তার অধিকার নিশ্চিত করবে? প্রথমত উত্তরাধিকার সূত্রে যে অধিকার নারী পায় তা বহুক্ষেত্রেই স্বাধীন ও শক্তিশালী নয়। কিন্তু নারী যদি নিজে অর্থশালী হয়ে সেই আর্থিক পরিসম্পদ ও আর্থিক ক্ষমতার বলয়ে নিজের কার্যকর ও অংশগ্রহণমূলক অবস্থান নিশ্চিত করতে পারে তাহলে তাকে আত্মবিশ্বাস ও প্রেরণা দেয়। নারী তখন তার সমাজের জন্য একজন পথপ্রদর্শক হয়ে যায়।

উদ্যমী নারীর যেমন অনুসারী তৈরি হয় তেমনি তার সিদ্ধান্ত সমাজে অংশগ্রহণ রত নারীদের পক্ষে গিয়ে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে। এজন্য সমাজে শুধু একজন সচ্ছল ও আর্থিক স্বাবলম্বী নারী হয়।

নারীর অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। যেমন নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতা তাকে আর্থিক ও সামাজিক সক্ষমতা ভোগ করতে সুযোগ করে দিয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় নারী যদি কাজের সুযোগ পায় এবং সমাজ ব্যবস্থা তার পক্ষে থাকে তবে অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ যেমন বাড়বে তেমনি নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও সমৃদ্ধ হবে।

নাসিমা আক্তার নিশা ।। প্রেসিডেন্ট, ওমেন অ্যান্ড ই–কমার্স ফোরাম (উই)



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top