সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১


ইমরান খান ও তার রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ


প্রকাশিত:
৭ আগস্ট ২০২৩ ১৬:৫৯

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৫৪

ছবি সংগৃহিত

২০২৩ সালের মে মাসের শুরুতেই বোঝা যাচ্ছিল রাজনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সরাসরি অভিযোগ করেছিলেন দেশের শাসকপক্ষ তার দলের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে।

ইমরান খানের সেই আশঙ্কা সত্য পরিণত হলো। তোশাখানা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে আদালত শাস্তি ঘোষণার পরপরই গ্রেফতার করা হলো তাকে। ০৫ আগস্ট ২০২৩, ইসলামাবাদের একটি আদালত পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর চেয়ারম্যান ইমরানকে তিন বছরের জেলের সাজা দিয়েছে। পাকিস্তানের আইন বলছে, আদালতের এই রায়ের ফলে আগামী পাঁচ বছর ভোটে লড়তে পারবেন না তিনি।

প্রশ্ন উঠেছে, তবে কী পাকিস্তান ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার এবং এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা ইমরান খানের রাজনৈতিক জীবনের এখানেই সমাপ্তি ঘটল? মুসলিম লীগ নেতা মুসলিম নওয়াজ শরীফ এবং বিলওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টির জোট সরকারের আমলে পাকিস্তান স্মরণকালের বেহাল আর্থিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। ফলে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন ইমরান। কিন্তু ভোটের আগে এই রায় মাঠে পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের প্রাক্তন অধিনায়কের জীবন অনিশ্চিত করে তুলেছে। আপাতত তাকে জেলের ভাতই খেতে হচ্ছে।

ইমরান খানের আইনজীবীরা বলছেন, এই বিচার প্রহসনমূলক এবং তাদের ঠিকমতো বিচারিক লড়াই-ই করতে দেওয়া হয়নি। অবশ্য পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম থেকেই ন্যায্যতা বিষয়টি এর জনগণ কখনো দেখেনি। সেনাবাহিনী একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দেশটিতে চেপে বসেছে এবং তারা বারবার বন্দুকের নলে দেশটি দখল করেছে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার জন্য।

ইমরানের বিচার হয়েছে তার অনুপস্থিতিতে, অথচ পাকিস্তানের আইনে আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারে বিধান নেই। কিন্তু ইমরানের সাজা যেহেতু সেনাবাহিনীর হাইকমান্ড থেকে চাওয়া, তাই আদালতও সেটাই মেনেছে।

২০২৩ সালের মে মাসে ইমরান খানকে গ্রেফতার করতে গিয়ে চরম বিশৃঙ্খলায় পড়ে পাকিস্তান। এমনকি প্রথমবারের মতো সেনা স্থাপনায়ও জনতা হামলা করে। একজন তিন তারকা জেনারেলের বাসভবনও আক্রান্ত হয়।

রাস্তায় জনতা সেনা টহলের গাড়িতে ঢিল ছুড়ে মারে। এরপরই বোঝা যাচ্ছিল সেনা প্রধান আসিম মুনির বড় কোনো পরিকল্পনা করছেন ইমরানকে শায়েস্তা করতে।

পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে কোনো রাজনৈতিক দলই সেনা সমর্থন ছাড়া ক্ষমতায় বসতে পারেনি। সেনাবাহিনীর অপছন্দ হলেই ক্ষমতা ছাড়তেও হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ আছেন সেনা সমর্থনে, ইমরানও এসেছিলেন সেনাবাহিনীর ওপর ভর করে।

পাকিস্তানের অর্থনীতি একেবারে তলিয়ে যাওয়ার মুখে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়ে কোনোমতে বাঁচিয়ে রেখেছে আইএমএফ। দেশটিতে সন্ত্রাসী তৎপরতা ভয়ংকরভাবে বেড়েছে। সেনা ও পুলিশ নিয়মিত হামলার শিকার হচ্ছে।

আফগানিস্তানের সাথে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। এর মধ্যে পাকিস্তানে যে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তাতে কোথায় যায় পরিস্থিতি সেইদিকে নজর আছে আন্তর্জাতিক সব মহলের।

এটা পরিষ্কার যে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই ইমরানকে জেলে ঢোকানো হয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে অবস্থাদৃষ্টে বোঝা যাচ্ছে নির্বাচন পেছাবে। ইমরানের আইনজীবীরা আপিল করবেন উচ্চ আদালতে। সেইখানে হেরে গেলে তার পক্ষে আর নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। ইমরান খানের বিরুদ্ধে আরও ১৪৯টি মামলা চলমান। ফলে একটা পর একটা রায় দিয়ে তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার বিষয়টি পরিষ্কার।

ইমরান খান কেন এত জনপ্রিয়? গদিহারা নেতা, অথচ ২০২৩ সালের এপ্রিল-মে মাসে সারাবিশ্বের মানুষ দেখেছে যে, তার ডাকে করাচি, পেশোয়ার, মুলতান, খানেওয়াল, খাইবার, ইসলামাবাদ, লাহোর, অ্যাবোটাবাদসহ বিভিন্ন শহরে ইমরানের সমর্থনে বিপুলসংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে।

এই বিক্ষোভকারীদের সবাই যে ইমরানের দলের কর্মী-সমর্থক, তা নয়। এমনকি যে সেনাবাহিনী ইমরানের বিরুদ্ধে, তাদের তরুণ সন্তানেরা পর্যন্ত ইমরানের জন্য পথে নেমেছে। এসব বিক্ষোভকারীর প্রায় সবাই মনে করেছেন, ইমরানকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে।

স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে এত লোক পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনো গদি হারানো প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে রাস্তায় নামেনি। মানুষ এতটা বেপরোয়া যে সেনা স্থাপনায় হামলা করতেও বুক কাঁপেনি।

ইমরান গদিতে বসার আগে বলেছিলেন, তার লক্ষ্য হবে এক ‘নয়া পাকিস্তান’, যা নৈতিকভাবে হবে মদিনা সনদের আর উন্নয়নের দিক থেকে হবে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর মতো। সেটা তিনি পারেননি। কিন্তু তার প্রতি জনআস্থা যে ছিল সেটা বজায় ছিল এবং আছে।

২০২৩ সালের ৯ মে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে ৮ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। আপিল আবেদনে তাকে এক ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থিত করার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল তাকে বলেন ‘আপনাকে দেখে ভালো লাগছে।’ এরপর সুপ্রিম কোর্টের ওপর চড়াও হয় পাকিস্তান সেনা প্রশাসন। প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা লোপ করার জন্য একটি বিলও পাস করানো হয়েছে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে। এর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি সুয়োমোটোর ক্ষমতা হারালেন।

এই গ্রেফতারের মাধ্যমে ইমরানের জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে এবং তিনি আর নেতৃত্ব দিতে না পারলেও তার দল পিটিআই আরও জনসম্পৃক্ত হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত হলেও পাকিস্তানের ইতিহাস প্রমাণ করে তিনি ও তার দল আইনি জটিলতায় পড়েছেন যেখান থেকে বের হওয়া কঠিন হবে। ইমরান ও তার দলের রাজনৈতিক পরিসর আসলে সংকুচিতই হবে।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ।। প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টেলিভিশন



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top