শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


২৬ মে বুদ্ধ পূর্ণিমা


প্রকাশিত:
২৪ মে ২০২১ ২২:২৫

আপডেট:
১৮ মে ২০২৪ ১১:০৮

গৌতম বুদ্ধ। ছবি: সংগৃহীত

আগামী ২৬ মে পালিত হবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্রতম উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা। এই পুণ্যোৎসব বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে এদিনই জন্মগ্রহণ করেছিলেন বুদ্ধদেব গৌতম বুদ্ধ। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি হিন্দুদের কাছেও এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হিন্দু ধর্ম অনুসারে শ্রী বিষ্ণুর নবম অবতার হিসেবে গণ্য করা হয় গৌতম বুদ্ধকে।

এই বৈশাখী পূর্ণিমাতেই কপিলাবস্তুর গৃহত্যাগী রাজকুমার সিদ্ধার্থ বোধি প্রাপ্ত এবং তারপরই তিনি গৌতম বুদ্ধ নামে সর্বত্র পরিচিত হন। তিনি তথাগত নামেও পরিচিত ছিলেন। আড়াই হাজার বছর আগে বোধি জ্ঞান লাভ করার পর গৌতম বুদ্ধ তাঁর শিষ্যদের মধ্যে যে ধর্ম প্রচার করেছিলেন, তাই বৌদ্ধ ধর্ম নামে পরিচিত।

বুদ্ধপূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বৈশাখ মাসের এই পূর্ণিমায় মহামানব বুদ্ধের জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল বলে দিনটি ‘বুদ্ধপূর্ণিমা’ নামে খ্যাত। খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন। ৫৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই দিনে তিনি সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন। আবার ৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এ দিনে তিনি মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্বলাভের মধ্য দিয়েই জগতে বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তিত হয়।

এই বছর গৌতম বুদ্ধের ২৫৮৩ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হবে। এই বিশেষ দিনটি উদযাপন হবে ২৬ মে। পূর্ণিমা তিথিটি ২৫ মে রাত ৮টা ২৯ মিনিটে শুরু হবে এবং ২৬ মে সন্ধ্যা ৪টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত থাকবে।

বুদ্ধপূর্ণিমার দিনে বৌদ্ধরা বুদ্ধপূজা-সহ পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেত প্রার্থনা এবং নানাবিধ মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। তাঁরা বুদ্ধানুস্মৃতি ও সংঘানুস্মৃতি ভাবনা করে। বিবিধ পূজা ও আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিবিধ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। বৌদ্ধবিহারগুলিতে বুদ্ধের মহাজীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা-সহ ধর্মীয় সভার আয়োজন করা হয়।

দিনভর বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা দিনটি পালন করে থাকলেও বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার এ উৎসবটি অনাড়ম্বরভাবে উদযাপন করা হবে। শুধু বুদ্ধপূজা, মহাসংঘদান এর মতো আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকবে বলে এই ধর্মাবলম্বীরা জানিয়েছেন।

গৌতম বুদ্ধের বাণী থেকে আজ আমরা জীবনের চারটি সারসত্য নিয়ে আলোচনা করব।

প্রথম সত্য: প্রতিটি মানুষের জীবনেই দুঃখ আছে। জ্বরা, ব্যাধি, মৃত্যু, বিরহ সবাইকেই সহ্য করতে হবে। মানুষ যেখানেই সুখ খুঁজতে যাবে, সেখানেই দুঃখের মুখোমুখি তাঁকে হতেই হবে। এমনকি আজকের দিনেই তাঁর এই বাণী উজ্জ্বল ভাবে সত্য। ইহ জগতে সুখ সমৃদ্ধিতে নিমজ্জিত থেকে যে ব্যক্তি নিজেকে সুখী মনে করছেন, তাঁকে দুঃখ সাগরে পতিত হতেই হবে।

দ্বিতীয় সত্য: প্রতিটি দুঃখের কোনও না কোনও কারণ আছে। কারণ ছাড়া দুঃখ হয় না। এমনকি আজকের দিনে দাঁড়িয়ে করোনা অতিমারীর ফলে যে শোক ও আতঙ্ক আমরা সহ্য করছি, তার পেছনেও রয়েছে মাত্রাছাড়া শিল্পায়ন, অসহিষ্ণুতা, অজ্ঞানতা এবং নিয়মানুবর্তিতার অভাব।

তৃতীয় সত্য: গৌতম বুদ্ধ বলেছেন যে, গোটা পৃথিবী দুঃখের সাগরে নিমজ্জিত। তবে দুঃখের অন্ত হওয়া সম্ভব। একমাত্র নির্বাণ লাভ করলেই শোক সাগর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তিনি স্বর্গ ও নরকের ধারণায় বিশ্বাস করতেন না। তিনি বলতেন নির্বাণের অর্থ মৃত্যু নয়। এর অর্থ জীবনের দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করা।

চতুর্থ সত্য: গৌতম বুদ্ধ বলেছেন যে, অন্য কেউ তোমার দুঃখ দূর করতে পারবে না। সেই মানুষ যতই মহান হন না কেন, অন্যের দুঃখ দূর করার ক্ষমতা কারোর নেই। তাই তিনি উপদেশ দেন, 'আত্ম দীপ ভবঃ।' অর্থাত্‍ নিজের আলোয় আলোকিত হও। মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ থাকবেই, সেই দুঃখ জয় করার ক্ষমতা নিজেকেই গড়ে তুলতে হবে। অন্য কারোর ওপর ভর করে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব নয়।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top