ছবিতে ক্লিক করলেই সর্বনাশ! হোয়াটসঅ্যাপে হ্যাকারদের ভয়ংকর ফাঁদ
 প্রকাশিত: 
 ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:২৪
 আপডেট:
 ৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:১৫
                                সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, প্রতারণার মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করছে সাইবার অপরাধীরা। একের পর এক নতুন কৌশলে ইউজারদের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে তাদের আর্থিক ও ব্যক্তিগত তথ্য। সম্প্রতি এমনই এক নতুন ফাঁদের খবর সামনে এসেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হোয়াটসঅ্যাপে এই ধরনের কৌশল অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ এখানে কোনও লিঙ্কে ক্লিক, ওটিপি শেয়ার কিংবা অ্যাপ ডাউনলোডের মতো কোনো পুরনো ফাঁদের কৌশল নেই। বরং, নিরীহ একটি ছবির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এই ফাঁদের আসল কৌশল। ছবিতে ক্লিক করলেই আপনার অজান্তে স্মার্টফোনে ঢুকে পড়বে ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার।
কীভাবে ঘটছে প্রতারণা?
সম্প্রতি ভারতের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার দিকে নজর দিলে স্পষ্ট বোঝা যায় হ্যাকারদের এই নতুন কৌশল।
এক অজানা নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে আসে একটি ছবি। ছবির সঙ্গে ছিল একটি অনুরোধ— "ছবিতে থাকা ব্যক্তিকে আপনি কি চিনতে পারেন?"
প্রথমদিকে বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও, বারবার ফোন আসার কারণে সন্দেহ দূর হয়। অজানা নম্বরের মালিককে পরিচিত ভেবে, শেষ পর্যন্ত ছবিতে ক্লিক করেন তিনি।
কিন্তু এখানেই ঘটে সর্বনাশ। ছবিতে ক্লিক করা মাত্রই অজান্তে স্মার্টফোনে ইনস্টল হয়ে যায় একটি ম্যালওয়্যার। এই সফটওয়্যার মুহূর্তেই ডিভাইসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় হ্যাকারদের হাতে। এমনকি তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে এক ধাক্কায় ২ লাখ টাকা উধাও হয়ে যায়।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে ফাঁদে পড়া আরও সহজ। কারণ ইউজারদের কাছ থেকে কোনও ওটিপি, পাসওয়ার্ড কিংবা ব্যাংক ডিটেইলস চাইতে হয় না। লিঙ্ক ক্লিকের অনুরোধও থাকে না। শুধু একটি নিরীহ ছবিতে ক্লিক করলেই কাজ শেষ।
এছাড়া, এই ধরনের অপরাধের মূল হোতাদের শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে, কারণ হ্যাকাররা ভিপিএন ও নানান প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের পরিচয় গোপন রাখছে।
কী কী ক্ষতি করতে পারে এই ম্যালওয়্যার?
১. স্মার্টফোনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে পারে হ্যাকারদের হাতে।
২. ব্যাংক সংক্রান্ত স্পর্শকাতর তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে।
৩. ডিভাইসের ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ও লোকেশন ব্যবহারের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হতে পারে।
৪. আপনার নাম্বার ব্যবহার করে স্ক্যাম কল ও ম্যাসেজ পাঠাতে পারে।
কীভাবে বাঁচবেন এই ফাঁদ থেকে?
সাইবার নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এবং কেরল পুলিশ ইতিমধ্যেই নাগরিকদের সতর্ক করেছে। নিরাপদ থাকতে কিছু সহজ পদক্ষেপ মানা জরুরি-
১. অজানা নম্বর থেকে আসা কোনো ফাইল, বিশেষ করে ছবি বা ভিডিও, ডাউনলোড বা ওপেন করবেন না।
২. হোয়াটসঅ্যাপে ‘মিডিয়া অটো ডাউনলোড’ সেটিংস বন্ধ করে রাখুন।
৩. বিশ্বস্ত অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ফোনে ইন্সটল করে রাখুন এবং নিয়মিত আপডেট করুন।
৪. আপনার স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপগুলো সর্বদা আপডেট রাখুন।
৫. অজানা নম্বর থেকে কোনো ফোন কল বা মেসেজ পেলে সতর্ক থাকুন।
আজকের দিনে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিজেকেই হতে হবে সবচেয়ে বেশি সচেতন। প্রযুক্তির এই যুগে এক ক্লিকের ভুলে আপনার কষ্টের জমানো টাকা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে যেকোনো সময়।

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: