আপনার ফোন হ্যাক হয়েছে কিনা যেসব লক্ষণে বুঝবেন
 প্রকাশিত: 
 ১১ জুলাই ২০২৫ ১২:৪৮
 আপডেট:
 ৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:১১
                                স্মার্টফোন এখন শুধু কল করার যন্ত্র নয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ব্যক্তিগত ছবি, সামাজিক যোগাযোগ, গোপন তথ্য—সবই এই একটিমাত্র ডিভাইসে সংরক্ষিত। আর এ কারণেই হ্যাকারদের অন্যতম সহজ টার্গেট এখন স্মার্টফোন। অনেক সময় আপনি বুঝতেও পারবেন না, আপনার ফোনটি কারো নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। তবে কিছু স্পষ্ট লক্ষণ বলে দিতে পারে, আপনার ফোনটি হ্যাক হয়েছে কি না।
ফোন হ্যাক হওয়ার লক্ষণ
ব্যাটারি দ্রুত শেষ হওয়া
হঠাৎ করে যদি দেখেন, আগের তুলনায় ফোনের ব্যাটারি অনেক দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, তাহলে তা হতে পারে কোনো স্পাইওয়্যার বা ম্যালওয়্যার অ্যাপের কাজ। এসব অ্যাপ গোপনে ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে, ফলে ব্যাটারির ওপর চাপ পড়ে।
ডাটা ব্যবহার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া
নিয়মিত ব্যবহারের তুলনায় ডাটা খরচ অনেক বেশি হলে সতর্ক হোন। অনেক সময় হ্যাকারদের ইনস্টল করা অ্যাপ গোপনে আপনার তথ্য ইন্টারনেটে পাঠাতে থাকে, যার কারণে ডাটা ব্যবহারে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।
ফোন গরম হয়ে যাওয়া
যদি ফোন ব্যবহার না করেও অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়, তবে সেটিও হ্যাক হওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। স্পাই অ্যাপ বা ম্যালওয়্যার পেছনে পেছনে কাজ করে ফোনের প্রসেসরে চাপ ফেলে, ফলে ফোন গরম হয়।
অদ্ভুত বিজ্ঞাপন বা পপ-আপ আসা
ব্রাউজার বা অ্যাপে হঠাৎ হঠাৎ অশ্লীল বা সন্দেহজনক বিজ্ঞাপন দেখালে বুঝতে হবে ফোনে হয়তো অ্যাডওয়্যার ইনস্টল হয়েছে। অনেক সময় অজান্তেই আপনি এমন অ্যাপে ক্লিক করে বসেন, যেগুলো হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে।
অচেনা নম্বরে কল বা এসএমএস পাঠানো
আপনার অজান্তে ফোন থেকে কল চলে যাওয়া বা এসএমএস পাঠানো হলে বুঝতে হবে ফোনটি হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে যেতে পারে। তারা ফোনের ভেতর থেকে তথ্য পাঠানোর জন্য এই কৌশল ব্যবহার করে।
নতুন অ্যাপ নিজে নিজে ইনস্টল হওয়া
আপনি ইনস্টল না করেও যদি ফোনে নতুন অ্যাপ দেখতে পান, অথবা ফোনের সেটিংস বা অনুমতি (permission) বদলে যেতে থাকে, তবে সেটি নিশ্চিতভাবে হ্যাক হওয়ার লক্ষণ।
ক্যামেরা বা মাইক্রোফোন নিজে নিজে চালু হওয়া
ফোনের ক্যামেরা বা মাইক্রোফোন কোনো অ্যাপ খুলে না দিয়েও হঠাৎ চালু হয়ে গেলে, তা গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়। এ ধরনের ঘটনা স্পাই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ঘটে থাকে।
সন্দেহজনক লগইন নোটিফিকেশন পাওয়া
আপনি লগইন না করেও গুগল, ফেসবুক বা ই-মেইল অ্যাকাউন্ট থেকে বারবার লগইন চেষ্টা বা ওটিপি বার্তা পেলে বুঝবেন কেউ হয়তো আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশের চেষ্টা করছে।
কী করবেন ফোন হ্যাক হলে?
প্রথমেই ফোনটি ফ্লাইট মোডে দিন, যাতে আর কোনো ডাটা লিক না হয়। এরপর অচেনা অ্যাপগুলো আনইনস্টল করে ফেলুন এবং একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে ফোন স্ক্যান করুন। সব গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড বদলান। প্রয়োজনে ফোন রিসেট করে ফেলুন। যদি পরিস্থিতি গুরুতর হয়, তাহলে সাইবার বিশেষজ্ঞ বা বিশ্বস্ত সার্ভিস সেন্টারের সহায়তা নিন।
কীভাবে হ্যাকিং থেকে বাঁচবেন?
স্মার্টফোন সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং ২-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু রাখুন। অচেনা লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন এবং শুধুমাত্র বিশ্বস্ত সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন। পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করুন। নিয়মিত ফোন আপডেট রাখলে অনেক সিকিউরিটি সমস্যাও দূর হয়ে যায়।
ফোন হ্যাক হওয়া মানে শুধু ডিভাইস নয়—আপনার ব্যক্তিগত জীবন, আর্থিক তথ্য ও পরিচয়ও ঝুঁকির মুখে পড়া। তাই সচেতন থাকুন, লক্ষণগুলো দেখলেই দ্রুত পদক্ষেপ নিন। প্রযুক্তির সুবিধা নিতে হলে নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে—এটাই বুদ্ধিমানের পরিচয়।

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: