বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১


রেকর্ড গড়তে মৃত্যুপথযাত্রী শেরপাকে ফেলে গেলেন পর্বতারোহী


প্রকাশিত:
১৩ আগস্ট ২০২৩ ০০:৩৮

আপডেট:
২ মে ২০২৪ ১৮:৫৯

 ফাইল ছবি

নরওয়ের পর্বতারোহী ৩৭ বছর বয়সী ক্রিস্টিনা হারিলি গত ২৭ জুলাই সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ১৪টি পর্বতশৃঙ্গে আরোহণের রেকর্ড গড়েন। এদিন তিনি নেপালি শেরপাকে নিয়ে পাকিস্তানে অবস্থিত পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত কে-টু এর চূড়ায় ওঠে এমন অনন্য নজির গড়েন।

তবে কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ হলে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েন ক্রিস্টিনা। এতে দেখা যায় মৃত্যুপথযাত্রী এক পাকিস্তানি শেরপার শরীর ডিঙিয়ে তিনি কে-টুতে আরোহণ করছেন। যদিও ওই পাকিস্তানি শেরপা তার দলের সদস্য ছিলেন না। কিন্তু তাও মৃত্যুর মুখে থাকা একজন মানুষের শরীর ডিঙিয়ে পর্বতে ওঠায় প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি।

ওই ড্রোন ফুটেজে দেখা যায় পাকিস্তানি শেরপা মোহাম্মদ হাসান পড়ে আছেন এবং তার কাছে ক্রিস্টিনার দলটি পৌঁছেছে। তখন তারা হাসানকে সাহায্য করার চেষ্টা করেন। তিনি দলের কয়েকজনকে হাসানের কাছে রেখে যান। কিন্তু নিজের নেপালি শেরপাকে নিয়ে রেকর্ড গড়তে চলে যান তিনি। এরপর পর্বতের চূড়ায় ওঠে আবার এই রেকর্ড উদযাপনও করেন নরওয়ের এই নাগরিক।

এমন কাজের জন্য অনেকে ক্রিস্টিনাকে ‘অমানুষ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একজন লিখেছেন, ‘কেউ আপনার ক্রীড়া সাফল্যকে মনে রাখবে না, শুধুমাত্র আপনার অমানুষিকতাকে মনে রাখবে।’

আরেকজন লিখেছেন, ‘শেরপার রক্ত আপনার হাতে লেগে আছে।’

কী বলছেন ক্রিস্টিনা?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়ার পর ওই দিনের ঘটনা নিয়ে ইনস্টাগ্রামে বিস্তারিত লিখেছেন ক্রিস্টিনা।

তিনি বলেছেন‘সেখানে যতজন মানুষ ছিলেন তাতে আমি মনে করেছিলাম, আমি বিশ্বাস করেছিলাম হাসান প্রয়োজনীয় সব সহায়তা পাবে এবং সে নিচে নামতে পারবে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার ক্যামেরাম্যান গ্যাব্রিয়েল সেখানে রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দেড় ঘণ্টা পর সেও চলে আসে কারণ তার নিজের আরও অক্সিজেন প্রয়োজন হয়ে পড়ে।’

এই পর্বতারোহী দাবি করেছেন, পাকিস্তানি শেরপা হাসানের শরীরে পর্বতারোহণের জন্য ‘প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল না।’ হাসানের শরীরে নিচে নামার কোনো স্যুট এমনকি হাতের গ্লাভস ছিল না।

অন্যান্যরা কী বলছেন?

অস্ট্রেলিয়ান পর্বতারোহী ফিলিপ ফ্লেমিং সংবাদমাধ্যম স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, হাসানকে দেখার জন্য শুধুমাত্র একজন মানুষ রয়ে যান। আর বাকিরা চলে যান।

ফিলিপ ফ্লেমিংয়ের সহযাত্রী উইলহেম স্টেনডেল বলেছেন, ‘আলপসে এ ধরনের ঘটনা অকল্পনীয়। হাসানের সঙ্গে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো ব্যবহার করা হয়েছে।’

‘যদি সে পশ্চিমা হতো, তাকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করা হতো। কেউ হাসানের জন্য দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে ভাবেনি। যা হয়েছে তা অসম্মান। একজন জীবিত মানুষ পড়েছিল যেন রেকর্ড গড়া যায়।’

পর্বতারোহী উইলহেম স্টেনডেল পরবর্তীতে হাসানের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, ডায়বেটিস আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার জন্য অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও রশি ঠিক করার কাজ নিয়েছিলেন তিনি।

এদিকে রেকর্ডগড়া ক্রিস্টিনা হারিলি তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে আরও দাবি করেছেন, তার ক্যামেরাম্যান যখন আবার তার কাছে পৌঁছায় তখন তিনি তাকে জানান হাসানের অবস্থা খারাপ ছিল। এরপর রেকর্ড গড়ে যখন তারা নিচে নামার জন্য হাসানের কাছে আসেন তখন দেখতে পান তিনি মারা গেছেন। তবে হাসানের মরদেহ নিচে নামানো তার চারজনের দলের জন্য সম্ভব ছিল না। কারণ মরদেহ নামাতে অন্তত ৬ জনের প্রয়োজন ছিল।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top