রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১

তীব্র গরমে মরছে মুরগি, বিপাকে খামারিরা


প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:১৪

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ০৩:০১

ছবি- সংগৃহীত

গত ১০ দিন ধরে পাবনার ওপর দিয়ে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। স্বস্তি নেই জনজীবনে। বিরূপ প্রভাব পড়েছে কৃষি ও পোল্ট্রি খামারে। টানা পাঁচদিন জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম আর দাবদাহে মারা যাচ্ছে খামারের মুরগি। কমতে শুরু করেছে ডিমের উৎপাদন। আর এতে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা।

পোলট্রি খামারিদের ভাষ্য, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে মুরগি মারা যাচ্ছে। কারণ প্রতিটি খামারের ঘরের চালা টিনের। আর রোদের তাপ টিনে বেশি লাগে। যে কারণে মুরগির গরমও লাগে বেশি। এই গরমে দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার মুরগির শরীরে পানি ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। গরমে মুরগি ছটফট করছে। স্ট্রোক করে মারা যাচ্ছে। মুরগিকে ঠিকমতো খাবার দেওয়া যাচ্ছে না। এতে কমতে শুরু করেছে ডিমের উৎপাদন।

গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের জোতগাছা গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামে অনেকগুলো ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে। খামারে মুরগি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কর্মচারীরা। কেউ মুরগির শরীরে পানি স্প্রে করছেন, কেউবা ডিম সংগ্রহ করছেন। খামারের ভেতর ঠান্ডা রাখতে চলছে বৈদ্যুতিক ফ্যান। কিন্তু তাতেও যেন কাজ হচ্ছে না। মুরগিগুলো হাঁসফাঁস করছে গরমে।

পোলট্রি খামারের শ্রমিক আনিসুর রহমান জানান, গরম শুরুর পর থেকেই খামারে মুরগির ছটফটানি শুরু হয়েছে। ফ্যানের বাতাসেও ঘর ঠান্ডা হচ্ছে না। প্রতিদিন কয়েকবার করে মুরগির শরীরে পানি ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপরও মুরগি মারা যাচ্ছে। তাদের খামারে দুই হাজার মুরগি রয়েছে। গত এক সপ্তাহে অন্তত ৪০টি মুরগি মারা গেছে। সর্বশেষ গত শনিবার ৮টি মুরগি মারা গেছে।

চাটমোহর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের লেয়ার মুরগির খামারের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গরম শুরুর পর থেকে মুরগিকে ওষুধ ও স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী খাবারও কম দেওয়া হচ্ছে। এতে ডিমের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। গরমে স্ট্রোক করে মুরগি মারা যাচ্ছে।

আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা গ্রামের খামারি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এমন তাপ থাকলি মইরে শেষ হয়ে যাব। খুব দুশ্চিন্তায় আছি। যেরমভাবে মুরগি মরতিছে, এমন গরম আরও থাকলি মুরগি টিকানো কঠিন হয়ে যাবিনি। আমারে পথে বসা লাগবিনি।’

পাবনার দুবলিয়ার মুরগি ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, কয়েকদিন মুরগির ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাভবান হয়েছি। এখন রোদে মুরগি মারা যাচ্ছে। তাই মাইকিং করে কম দামে বিক্রি করছি। এই রোদে আমাদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গৌরাংগ কুমার তালুকদারের। তিনি জানান, প্রচণ্ড গরম থেকে খামার রক্ষায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণসহ খামারিদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, খামারের ঘরের টিনের চালে চটের বস্তা বিছিয়ে পানি ঢালা, মুরগির শরীরে পানি ছিটানো এবং মুরগিকে স্যালাইনসহ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি দিতে বলা হচ্ছে। অন্যদিকে দুপুরে অতিরিক্ত গরমের সময় খাবার না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় তালিকাভুক্ত লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে ৯৭৮টি। এই তালিকার বাইরে প্রায় ৫০০ খামার আছে। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির তালিকাভুক্ত খামার রয়েছে ১ হাজার ১৩০টি। এসব খামারে মুরগি রয়েছে প্রায় ৫৫ লাখ। তবে প্রচণ্ড গরমে জেলায় এখন পর্যন্ত কি পরিমাণ মুরগি মারা গেছে তার তথ্য জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগে নেই।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৪ এপ্রিল) জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গত রোববার (২১ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ১৭ এপ্রিল থেকে পাবনা জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে রয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top