সোমবার, ১৬ই জুন ২০২৫, ২রা আষাঢ় ১৪৩২


রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৪৬ ভাগই ঋণ খেলাপি


প্রকাশিত:
১৬ জুন ২০২৫ ১০:১৯

আপডেট:
১৬ জুন ২০২৫ ১৯:৫৩

ছবি সংগৃহীত

খেলাপি ঋণের বিপর্যস্ত ব্যাংক খাত। যতই দিন যাচ্ছে ততই বেড়িয়ে আসছে ঋণ হিসেবে নেওয়া লুটপাটের প্রকৃত চিত্র। ইতিমধ্যে খেলাপি ঋণ ছাড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৪৬ শতাংশ। খেলাপি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী— ২০২৫ সালের মার্চ শেষে মোট বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। যা তৎকালীন সময়ের বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।

তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। একই সময়ে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১৩ লাখ ১০ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৪৪ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। এসব ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো মার্চ পর্যন্ত ৬৭ হাজার ১৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এসব ঋণের মধ্যে খেলাপি পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নতুন গভর্নরের নেতৃত্বে জুন প্রান্তিকের খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। তাড়াহুড়ো করে ওই সময় খেলাপির তথ্য প্রকাশ করায় প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা যায়নি। এরপর নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকগুলোকে খেলাপির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার নির্দেশ দেন। এতে সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ মাসে খেলাপি বেড়েছে ৭৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। পরের প্রান্তিকে সরকারের কড়াকড়ির কারণে খেলাপি আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। আর গত মার্চ পর্যন্ত এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার নির্দেশে নতুন সরকারের আমলে খেলাপি বেড়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৯৪৩ কোটি কোটি টাকা।

এবিষয়ে গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর লুকানো খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। অবলোপন, পুনঃতফসিল ও মামলার অন্তর্ভুক্ত ঋণ ধরলে খেলাপি আরও বাড়বে। আগের সরকারের আমলে অনেকে একটি কোম্পানি দেখিয়ে একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়ে ঋণকে খেলাপি করতে দেননি। এজন্য এখন খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এছাড়া অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তৈরি করে অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন এসব প্রভাবশালী। দুর্বল ব্যাংকে ব্যাপক দুর্নীতিও হয়েছে। তাই ব্যাংক ও ব্যবসায়ী উভয়েই দায় এড়াতে পারেন না।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top