সোমবার, ৭ই জুলাই ২০২৫, ২৩শে আষাঢ় ১৪৩২


সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর কোনো প্রভাব পড়বে সীমিত আয়ের পরিবারে?


প্রকাশিত:
৭ জুলাই ২০২৫ ১৫:০৪

আপডেট:
৭ জুলাই ২০২৫ ২১:২১

ছবি সংগৃহীত

ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশে অনেকেই সঞ্চয়পত্র কিনে থাকেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলোর আয়ের একটি অংশ আসে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে। চাকরিজীবীদের অনেকেই অবসরে যাওয়ার পর পেনশনের টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে থাকেন।

যদিও সরকার যে সুদহার কমিয়েছে, সেটা আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। শুধুমাত্র নতুন করে সঞ্চয়পত্র কিনলে বা পুনঃবিনিয়োগ করলে নতুন হার প্রযোজ্য হবে।

তবে সরকার হঠাৎই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোয় অনেকের মধ্যেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

এ বছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। এ সময় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোয় এর সরাসরি প্রভাব সীমিত আয়ের মানুষজনের ওপর পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "ছোট ও ক্ষুদ্র পেনশন অর্জনকারীদের সুদের হার কমালে তাদের জীবন জীবিকার ওপর চাপ পড়ে। সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে এভাবে সুদহার কমানো সঠিক পলিসি নয়।”

তিনি আরও বলেন, "যারা মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত, পেনশনের টাকা পেয়ে সঞ্চয়পত্র কিনেন সেখান থেকে নিয়মিত সুদ পেয়ে সেটা দিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন, তারা সরকারের নতুন এই সিদ্ধান্তে সরাসরি প্রভাবিত হবেন।”

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমিয়ে দেওয়া হলে সামাজিক নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন শঙ্কার কথা চিন্তা করে বিকল্প ব্যবস্থার নেওয়ারও পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।

এর আগে অবশ্য গত জানুয়ারি মাসেই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কিছুটা বাড়ানো হয়েছিল। সেই সময় প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, প্রতি ছয়মাস পরপর মুনাফার হার পুনরায় নির্ধারণ করা হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত জানুয়ারি মাসে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কিছুটা বাড়ানো হয়েছিল। সেই সময় প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, প্রতি ছয়মাস পরপর মুনাফার হার পুনরায় নির্ধারণ করা হবে।

গত ৩০ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার সংক্রান্ত নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে।

নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পাঁচ বছর মেয়াদি “বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে” সাড়ে ৭ লাখ টাকা বা এর কম বিনিয়োগকারীদের মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১১.৮৩%। এতদিন যা ছিল ১২.৪০%। ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগকারীদের মুনাফা দাঁড়াবে ১১.৮৩%। আগে যা ছিল ১২.৩৭%। এক্ষেত্রে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বছর শেষে নগদায়ন করলে মুনাফা যথাক্রমে আরও কম পাওয়া যাবে।

পাঁচ বছর মেয়াদি “পেনশনার সঞ্চয়পত্রে” সাড়ে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার পাওয়া যাবে ১১.৯৮%, আগে যা ছিল ১২.৫৫%। আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফা হবে ১১.৮০%, আগে যা ছিল ১২.৩৭%। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বছর শেষে নগদায়ন করলে মুনাফা যথাক্রমে আরও কম পাওয়া যাবে।

সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমলোসব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমলো
পাঁচ বছর মেয়াদি “পরিবার সঞ্চয়পত্রে” সাড়ে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার পাওয়া যাবে ১১.৯৩%, আগে যা ছিল ১২.৫০%। এর বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফা হবে হবে ১১.৮০%, আগে যা ছিল ১২.৩৭%। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বছর শেষে নগদায়ন করলে মুনাফা যথাক্রমে আরও কম পাওয়া যাবে।

তিন বছর মেয়াদি “ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক” হিসাবে সাড়ে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফা পাওয়া যাবে ১১.৮২%, যা এতদিন ছিল ১২.৩০%। ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফা হবে ১১.৭৭%, আগে যা ছিল ১২.২৫%।

এছাড়া, তিন মাস মেয়াদি “মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে” বিনিয়োগ করলেও মুনাফা কমবে। এ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার হবে ১১.৮২%, যা ছিল ১২.৩০%। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে এ মুনাফার হার হবে ১১.৭৭%, যা ছিল ১২.২৫%।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, ১ জুলাই ২০২৫ তারিখের আগে ইস্যু হওয়া সব জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের ইস্যুকালীন মেয়াদে ওই সময়ের মুনাফার হার প্রযোজ্য হবে। তবে পুনর্বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমান মুনাফার হার প্রযোজ্য হবে। ছয় মাস পর মুনাফার হার পুনর্নির্ধারণ করা হবে।

এছাড়া, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের আওতায় ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ হিসাবের মুনাফার হার অপরিবর্তিত থাকবে।

ডিএম /সীমা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top