বুধবার, ১৬ই জুলাই ২০২৫, ৩১শে আষাঢ় ১৪৩২


বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে ঘুরে দাঁড়াল ডলারের দাম


প্রকাশিত:
১৫ জুলাই ২০২৫ ১৭:৫৯

আপডেট:
১৬ জুলাই ২০২৫ ০১:০২

ছবি সংগৃহীত

টানা চারদিন কমার পর আজ মঙ্গলবার(১৫ জুলাই) আবার বাড়ল ডলারের দাম। বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপের পর এই উল্টো পরিবর্তন দেখা গেছে। মঙ্গলবার একদিনেই ডলারের দাম বেড়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, দেশের মুদ্রাবাজারে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১২১ টাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ১২০ দশমিক ৮০ টাকা, সোমবার যা ছিল যথাক্রমে ১২০ দশমিক ১০ টাকা ও সর্বনিম্ন ১১৯ দশমিক ৫০ টাকা। আজ ডলারের গড় দাম ১২১ দশমিক ১১ টাকা, অর্থাৎ ডলারের বিক্রয়মূল্য বেড়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা।

রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়লেও আমদানি খরচ খুব একটা বাড়েনি। তাই ডলারের চাহিদা কিছুটা কমে গিয়েছিল। ফলে টাকার বিপরীতে ডলারের মান কমতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে অর্থাৎ ডলারের দর ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে বাজার থেকে ডলার কেনা শুরু করে।

গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ১৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার কিনেছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই উদ্যোগের ফলে ডলারের দাম কমার প্রবণতা থেমে গেছে এবং আবার দাম বাড়তে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক মাসে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। পাশাপাশি, জুন মাসে আইএমএফ, এডিবি, জাইকা এবং এআইআইবি থেকে বড় অঙ্কের অর্থ সহায়তা আসায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভেও ডলার বেড়েছে। এসব কারণে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের চলতি হিসাবে ঘাটতি কমেছে এবং ডলারের ওপর চাপ কম থাকায় দাম কমছে।

এর আগে, গত বছরের ডিসেম্বরে ডলারের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। মাত্র দুই কার্যদিবসে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম রেকর্ড ভেঙে ১২৮ টাকায় ওঠে যায়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তখন ১৩টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক দামে রেমিট্যান্স কেনার অভিযোগ ওঠে এবং তাদের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। সেসময় গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, কয়েকটি ব্যাংকের ভুল সিদ্ধান্তে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ইচ্ছেমতো ডলারের দাম বাড়াচ্ছিল, যা সহ্য করা হবে না।

তিনি বলেন, ডলারের দাম ঠিক হবে বাংলাদেশের বাজারেই।

চলতি বছরের ১৫ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনার পর ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই দর নির্ধারণ করছে। অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, এতে ডলারের দাম বেড়ে যাবে, কিন্তু বাস্তবে তা কমেছে।

দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে চলতি হিসাবের নেতিবাচক অবস্থার পরিমাণ কমেছে। ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে— এই ১১ মাসে বৈদেশিক লেনদেনে যে ভারসাম্যহীনতা ছিল, তা এখন অনেকটাই কমে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বল‌ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে চার হাজার ৮৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে আমদানি হয়েছে ছয় হাজার ২৫ কোটি ডলার। ফলে এক হাজার ৯৩৮ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল দুই হাজার ২২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ কমেছে। এই সূচক আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো সংবাদ। পাশাপাশি এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে রেকর্ড প্রবাহ এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অংক এক অর্থবছরে দেশে আসা রেমিট্যান্সের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রবাসী আয়ের এমন ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও ডলারের জোগানে স্বস্তি এনে দিয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে দেশের মোট রিজার্ভ দাড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের এই অংক গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৩ সালে জুনে রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার ছিল। এ ছাড়া, আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে মোট রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার।

ডিএম /সীমা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top