সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে ভাটা, ঝুঁকছে বিল-বন্ডের দিকে
প্রকাশিত:
৭ আগস্ট ২০২৫ ১১:৫৭
আপডেট:
৭ আগস্ট ২০২৫ ১৫:৩৯

উচ্চ মূল্যস্ফীতি আর সুদের হার সংক্রান্ত বিভ্রান্তির জেরে ক্রমেই কমছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ। একদিকে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে, অন্যদিকে ব্যাংক ও ট্রেজারি বিল-বন্ডে বাড়তি সুদের প্রলোভন— সব মিলিয়ে সরকারি সঞ্চয়পত্র হারাচ্ছে আকর্ষণ। ফলে টানা তিন অর্থবছর ধরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমদিকে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমেছে ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। বর্তমানে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। এর আগের দুই অর্থবছরে যথাক্রমে ২১ হাজার ১২৪ কোটি এবং ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা কমে গিয়েছিল এই বিক্রি।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার প্রতিবছরই অভ্যন্তরীণ ঋণের একটি বড় অংশ সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করে। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের মূল বাজেটে ছিল ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা; তবে তা পরে কমিয়ে সংশোধিত বাজেটে ১৪ হাজার কোটিতে নামানো হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৯ সালে ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালুর পর থেকে একই নামে একাধিক সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ সীমিত হয়। একই সময় এক লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়। পরবর্তীতে ছয় মাস অন্তর সুদহার পরিবর্তনের নিয়ম চালু হয়।
সর্বশেষ ২০২৫ সালের জুলাইয়ে সুদহার কমেছে ৪৭ থেকে ৫৭ বেসিস পয়েন্ট। এছাড়া বর্তমানে সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি ও কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্ন সুদহার কার্যকর রয়েছে, যা অনেকের জন্য বিভ্রান্তিকর ও অনাকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই এখন ঝুঁকছেন ট্রেজারি বিল ও বন্ডের দিকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন শেষে ব্যক্তি, করপোরেট, প্রভিডেন্ট ও পেনশন ফান্ড মিলিয়ে ট্রেজারি বিল-বন্ডে মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের জুন শেষে এই পরিমাণ ছিল মাত্র ২৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে এই খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ।
উচ্চ সুদের হার, করমুক্ত মুনাফা, সময়মতো ফেরতের নিশ্চয়তা এবং সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রির সুযোগ— এসব সুবিধা মিলিয়েই ট্রেজারি বিল-বন্ড এখন ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: