শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


পাইলস রোগের সঠিক চিকিৎসা


প্রকাশিত:
৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:৪০

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৩৪

 ছবি : সংগৃহীত

পাইলস বা অর্শ রোগে মলদ্বার থেকে মাঝে মধ্যে কম-বেশি রক্ত যায়। মলত্যাগের সময় অনেকের মলদ্বার ফুলে ওঠে আবার কারও কারও মাংসপিণ্ড ঝুলে পড়ে যা আবার আপনা আপনি ভেতরে ঢুকে যায় অথবা চাপ দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হয়।

এই রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার- যুগ যুগ ধরে পাইলসের রোগীরা প্রতারণার শিকার হয়ে আসছেন। অনেক হাতুড়ে চিকিৎসক আছেন যারা বিনা অপারেশনে চিকিৎসার নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। তারা অনেকে মলদ্বারে বিশাক্ত কেমিক্যাল ইনজেকশন দিচ্ছেন যাতে মলদ্বারে মারাত্মক ব্যথা হয় এবং মলদ্বারের আশপাশে পচন ধরে এবং এজন্য রোগী অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশা ভোগ করেন।

পরিণামে কারও কারও মলদ্বার সরু হয় এবং বন্ধ হয়ে যায়। তখন পেটে মলত্যাগের বিকল্প পথ করে দিয়ে ব্যাগ লাগিয়ে দিতে হয়। আবার কোনো কোনো হাতুড়ে চিকিৎসক বিষাক্ত কেমিক্যাল পাউডার দেন যা মলদ্বারে লাগালেও মলদ্বার পচে ঘা হয়ে যায় এবং রোগীর একই পরিণতি হয়।

রোগীরা যখন বিনা অপারেশনের কথা শোনেন তখন এ জাতীয় চিকিৎসার জন্য খুবই প্রলুব্ধ হন। তিনি যখন প্রতারণার শিকার হন তখন আর তার কিছুই করার থাকে না।

অস্ত্রোপচারে পাইলস ভালো হয় কিনা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক।

তিনি জানান, ইদানিংকালে পত্রিকায় দেখতে পাওয়া যায় যে লেজার সার্জারির মাধ্যমে ধনন্তরী পাইলস চিকিৎসা হচ্ছে। বিষয়টি মোটেই সত্য নয়। কারণ, এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে লেজারের মাধ্যমে পাইলস চিকিৎসায় কোনো অতিরিক্ত সুবিধা নেই।

বিশেষজ্ঞরা বহুবার পত্রিকায় এবং টেলিভিশনে বলেছেন যে রিং লাইগেশন এবং লংগো অপারেশনের মাধ্যমে প্রায় ১০০% রোগীর মলদ্বারে কোনো রূপ কাটা ছেঁড়া ছাড়া চিকিৎসা করা সম্ভব।

প্রচলিত অপারেশনে মলদ্বারের তিনটি মাংসপিণ্ড কাটতে হয়। যা আজকাল শুধু তাদের জন্যই করেন যারা রিং লাইগেশনের জন্য উপযুক্ত নয় এবং লংগো অপারেশন এর যন্ত্র কিনতে অক্ষম। লেজার দিয়ে পাইলস অপারেশন প্রচলিত অপারেশনের মতই। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে এক্ষেত্রে লেজার বিম দিয়ে কাটা হয় এবং প্রচলিত অপারেশনে সার্জিক্যাল নাইফ দিয়ে কাটা হয়। প্রচলিত অপারেশনের ন্যায় লেজার অপারেশনেও তিনটি ক্ষত স্থান হবে।

লেজার অপারেশনের পর সাধারণত অপারেশনের মতই ব্যথা হয় ঘা শুকাতে ১/২ মাস সময় লাগে। এবং প্রচলিত অপারেশনের মতই একই ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ লেজার অপারেশনের পর কিছুটা কম ব্যথা হয় বলে দাবি করেছেন।

বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞের কাছে এটি তেমন তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়নি। ইংল্যান্ডের অত্যন্ত খ্যাতনামা সার্জন অধ্যাপক ডা. নিকলসের মতে লেজার সার্জারিতে কোনো অতিরিক্ত সুবিধা নেই। বরং এতে অত্যন্ত ব্যয় বহুল যন্ত্র এবং বিশেষ প্রশিক্ষণের দরকার হয়।

এছাড়া নিরাপত্তার জন্য চোখে গগলস পরতে হয়। চিকিৎসা ব্যয়ও বেশি। পাইলস চিকিৎসার জন্য বহু ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। যেমন ইনজেকশন, রিংলাইগেশন, ইলেকট্রো-কোয়াগুলেশন, আল্ট্রয়েড, ক্রায়োথেরাপি ইনফ্রারেড ফটোকোয়াগুলেশন, এনাল ডাইলেটেশন, লেজার থেরাপি, প্রচলিত অপারেশন এবং লংগো অপারেশন।

সব ধরনের পদ্ধতির মেরিট এবং ডিমেরিট বিবেচনা করলে এবং বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সার্জনদের প্র্যাকটিস বিবেচনা করলে তিনটি পদ্ধতি বেশি প্রচলিত আর তা হচ্ছে রিংলাইগেশন, লংগো অপারেশন ও প্রচলিত অপারেশন।

এতকিছু বিবেচনা করলে এটি নির্দ্বিধায় বলা যায় যে পত্রিকায় লেজার সার্জারির বিজ্ঞাপন একটি অহেতুক, গণবিরোধী এবং চটকদার রোগী ভিড় করানো বিজ্ঞাপন ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ, রিংলাইগেশন ও লংগো অপারেশনে মলদ্বারে কোনরূপ কাটা ছেঁড়া ছাড়াই ৯০-৯৫% রোগীর পাইলস রোগের সমাধান সম্ভব এবং দেশেই তারা করছেন দশ বছর যাবত।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top