জন্মহার হ্রাস পাচ্ছে, ২ সন্তান নীতি বাতিল করল ভিয়েতনাম
প্রকাশিত:
৪ জুন ২০২৫ ১৬:৪৫
আপডেট:
৬ জুন ২০২৫ ১৬:৪৮

কয়েক বছর ধরে ধরাবাহিকভাবে নিম্ন জন্মহার ঘটতে থাকায় নিজেদের প্রায় ৪ দশকের পুরোনো ‘২ সন্তাননীতি’ বাতিল করেছে কমিউনিস্ট শাসিত রাষ্ট্র ভিয়েতনাম। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই নীতি বাতিল করে অধ্যাদেশ জারি করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা ভিয়েতনাম নিউজ এজেন্সি।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কমিউনিস্ট শাসিত চীন ১৯৮০ সালে ‘এক সন্তাননীতি’ গ্রহণ করেছিল। চীনের এই নীতি নেওয়ার ৮ বছর পর ‘দুই সন্তান নীতি’ ঘোষণা করে কমিউনিস্ট ভিয়েতনাম। সেই থেকে ভিয়েতনামে যেসব দম্পতির দুই সন্তান থাকত, তারা বিশেষ সরকারি সুযোগ ও সুবিধা পেতেন। তবে এখন থেকে আর এমনটি ঘটবে না।
এই নীতি বাতিলের অবশ্য যোৗক্তিক কারণও রয়েছে। টানা তিন বছর ধরে জন্মহার আশঙ্কাজনক হারে কমছে ভিয়েতনামে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে মিয়ানমারে শিশুর জন্মহার ছিল ২ দশমিক ১, ২০২৩ সালে ১ দশমিক ৯৬ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে ১ দশমিক ৯১।
একটি দেশে যদি টানা কয়েক বছর জন্মহার কমতে থাকে, তাহলে তা বেশ উদ্বেগের ব্যাপার। কারণ এর ফলে একদিকে তরুণ-তরুণীর সংখ্যা কমে— অন্যদিকে বাড়তে থাকে বয়স্ক লোকজনের সংখ্যা।
এছাড়া এই নীতি নেওয়ার কারণে ভিয়েতনামে নারী-পুরুষের আনুপাতিক ভারসাম্যও নষ্ট হওয়ার পথে আছে। সংস্কৃতিগতভাবে ছেলে সন্তানের গুরুত্ব থাকায় অনেক দম্পতি শুধু ছেলেশিশু পেতে আগ্রহী। ফলে নারীদের সংখ্যা কমছে। বর্তমানে ভিয়েতনামে প্রতি ১১২ জন ছেলেশিশুর বিপরীতে আছে ১০০ জন মেয়েশিশু।
তবে চার দশকের পুরোনো এই নীতি বাতিলের ফলে ভিয়েতনামে জন্মহারে বিশেষ প্রভাব পড়বে— এমন আশা কম। কারণ মিয়ানমারের তরুণ প্রজন্ম দিনকে দিন বিয়ে, সংসার এবং সন্তানধারণে নিরুৎসাহী হয়ে পড়ছেন। ২২ বছর বয়সী ভিয়েতনামিজ তরুণী ত্রান মিন হুওং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এএফপিকে জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে সন্তান ধারণের কোনো পরিকল্পনা তার নেই।
“যদিও আমি একজন এশীয় নারী এবং এমন একটি সামাজিক সংস্কৃতিতে বসবাস করি, যেখানে নারীদের বিয়ে এবং সন্তান ধারণকে মহিমান্বিত করা হয়; কিন্তু সত্য বর্তমানে একটি শিশুকে বড় করে তোলা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার,” এএফপিকে বলেন ত্রান মিন হুয়ং।
তরুণ প্রজন্ম যে সন্তানধারণে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে— এ ব্যাপারটি সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছেন ভিয়েতানামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এনগুয়েন থি লিয়েন ও। তরুণ প্রজন্মকে সন্তানধারণে আগ্রহী হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছিলেন তিনি।
তবে ৪৫ বছর বয়সী ভিয়েতনামিজ নারী এবং তিন সন্তানের জননী হুওং থি ওয়ান জানিয়েছেন, শুধু আহ্বান নয় তরুণ প্রজন্মকে আগ্রহী করতে প্রয়োজন আর্থিক প্রণোদনা।
এএফপিকে তিনি বলেন, “যখন সরকারের দুই সন্তান নীতি ছিল, তখন আমি তিন সন্তান নিয়েছিলাম। ভিয়েতনামে শিশুদের পালন, শিক্ষা ও অন্যান্য ব্যয় অনেক বেশি। এখানে শুধু শুধু ধনীরাই একাধিক সন্তানকে বড় করার সাহস দেখাতে পারে।”
“তবে সরকার যদি সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত দম্পতিদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে, তাহলে পরিবর্তন আসবে।”
সূত্র : এএফপি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: