বুধবার, ১৩ই আগস্ট ২০২৫, ২৯শে শ্রাবণ ১৪৩২


জর্ডান-মিসরকে নিয়ে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার মিশনে নেতানিয়াহু


প্রকাশিত:
১৩ আগস্ট ২০২৫ ১৬:৪৫

আপডেট:
১৩ আগস্ট ২০২৫ ১৯:০৬

ছবি সংগৃহীত

সম্প্রতি ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা শহর দখলের নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পরিকল্পনায় অনুমোদন করেছে দেশটির নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এরমধ্যেই মিসর ও জর্ডানের একাংশকে নিয়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডসহ এক বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করার ‘ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক মিশনে’ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

নেতানিয়াহু বলেছেন, “তিনি এক ‘ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক মিশনে’ আছেন এবং তিনি ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ দর্শনের প্রতি ‘খু্ব বেশি’ জড়িত।” ঐতিহাসিকভাবে এই বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণার মধ্যে বর্তমান ইসরায়েল রাষ্ট্র, ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য নির্ধারিত এলাকা এবং বর্তমান জর্ডান ও মিসরের কিছু অংশও অন্তর্ভুক্ত।

সম্প্রতি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম আই-২৪ চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু তার এই অবস্থান তুলে ধরেছেন বলে জানায় টাইমস অব ইসরায়েল।

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী শ্যারন গাল অতীতে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট ‘নেসেটে’র ডানপন্থী সদস্য ছিলেন। সাক্ষাৎকারের সময় তিনি নেতানিয়াহুকে ‘দ্য প্রমিজড ল্যান্ড বা প্রতিশ্রুত ভূমির মানচিত্র’ তথা বৃহত্তর ইসরায়েলের মানচিত্রের একটি তাবিজ উপহার দেন। এসময় তিনি রসিকতা করে বলেন, নেতানিয়াহু ও তার স্ত্রী সারার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গয়না এবং অন্যান্য বিলাসবহুল সামগ্রী গ্রহণের অভিযোগে মামলায় আরও বাড়িয়ে তুলতে চান না।

সাক্ষাৎকারে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল দর্শনের’ প্রতি তিনি কোনো সংযোগ অনুভব করেন কি না জানতে চাইলে— জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, ‘হ্যাঁ, অনেক বেশি।’

প্রসঙ্গত, বৃহত্তর ইসরায়েল বলতে ১৯৬৭ সালের জুনের ৬ দিনের যুদ্ধের পর ইসরায়েল ও দেশটির সদ্য দখল করা এলাকা—পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, সিনাই উপদ্বীপ এবং গোলান মালভূমিকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন লিকুদ পার্টির অগ্রদূত জে’ইভ জাবোতিনস্কিসহ শুরুর দিকের নেতৃস্থানীয় জায়নবাদীদের অনেকেই বর্তমান ইসরায়েল, গাজা, পশ্চিম তীর এবং বর্তমান জর্ডানকে বোঝাতেও এই শব্দটি ব্যবহার করতেন।

সাক্ষাতকারে গাল নেতানিয়াহুকে প্রশ্ন করেন, তিনি ইহুদি জনগণের পক্ষ থেকে কোনো মিশনে আছেন বলে মনে করেন কি না?

জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি ‘প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এক মিশনে আছেন—বহু প্রজন্ম ধরে ইহুদিরা এখানে আসার স্বপ্ন দেখেছে এবং আমাদের পরেও অনেক প্রজন্ম আসবে একই স্বপ্ন নিয়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং, আপনি যদি জিজ্ঞাসা করেন যে ঐতিহাসিকভাবে এবং আধ্যাত্মিকভাবে আমার মধ্যে কোনো মিশন বা চেতনা কাজ করে কিনা, তার উত্তর হলো হ্যাঁ।’

এরআগে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, ইসরায়েলি লেখক আভি লিপকিনের একটি সাক্ষাৎকার বেশ ভাইরাল হয়, সেখানে তিনি বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণা সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘এমন এক দিন আসবে যেদিন আমাদের সীমানা লেবানন থেকে সৌদি আরবের বিশাল মরুভূমি, ভূমধ্যসাগর থেকে ফোরাত নদী (ইরাক) পর্যন্ত বিস্তৃত হবে’।

তিনি বলেন, ‘ফোরাত নদীর ওপারে যে কুর্দিরা আছেন, তারা আমাদের বন্ধু। আমাদের পিছনে ভূমধ্যসাগর এবং সামনে কুর্দিস্তান। লেবাননের ইসরায়েলের সুরক্ষা প্রয়োজন এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা মক্কা, মদিনা এবং সিনাইও দখল করব এবং এই স্থানগুলোকে শুদ্ধ করব’।

মূলত, ২০২৩ সালে গাজায় হামলা ও লেবাননে ইসরায়েলের অভিযানের পর থেকে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’-এর ধারণাটি আবারও সামনে এসেছে। এর একটি কারণ হল গাজায় স্থল অভিযানের সময় কিছু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে দাবি করা হয়েছিল, কিছু ইসরায়েলি সৈন্য তাদের ইউনিফর্মে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ মানচিত্রযুক্ত ব্যাজ পরেছিল।

আরব দেশগুলোর সোশ্যাল মিডিয়া ইউজাররা এ বিষয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কারণ 'দ্য প্রমিজড ল্যান্ড' (প্রতিশ্রুত ভূখণ্ড) এর মানচিত্রে জর্ডান, ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক এবং মিশরের অংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ইসরায়েলের অনেক ইহুদি বিশেষ করে উগ্র ইহুদিবাদীরা এই অঞ্চলটিকে 'এরিটজ ইসরায়েল' বা 'ইসরায়েলের পবিত্র ভূমি' বলে মনে করে, যা কিনা ইসরায়েলের বর্তমান সীমানা থেকেও অনেক বড় একটি ভৌগলিক এলাকা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top