বৃহঃস্পতিবার, ২১শে আগস্ট ২০২৫, ৬ই ভাদ্র ১৪৩২


মরার পরও বিষ ছড়াতে পারে ভারতীয় সাপ, গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য


প্রকাশিত:
২১ আগস্ট ২০২৫ ১২:২০

আপডেট:
২১ আগস্ট ২০২৫ ১২:৫৪

ছবি সংগৃহীত

ভারতের মারাত্মক কয়েক প্রজাতির সাপ — বিশেষ করে গোখরা ও ক্রাইট — মৃত্যুর ঘণ্টাখানেক পরও বিষ ছড়াতে সক্ষম। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। মূলত এসব সাপের বিশেষ ধরনের বিষ নিঃসরণ ব্যবস্থা রয়েছে।

আর এ কারণেই মৃত্যুর ঘণ্টাখানেক পরও বিষ ছড়াতে সক্ষম তারা। বুধবার (২০ আগস্ট) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

মংবাদমাধ্যমটি বলছে, আগে ধারণা করা হতো শুধু ঝুনঝুনি সাপ ও থুথু ছোড়া গোখরার মতো কিছু বিশেষ প্রজাতিই এমন ক্ষমতা রাখে। কিন্তু আসামের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতীয় মনোকল্ড গোখরা ও কালো ক্রাইট মৃত্যুর পরও বিষ ছড়িয়ে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ফ্রন্টিয়ার্স ইন ট্রপিক্যাল ডিজিজ জার্নালে।

গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন আসামের নামরূপ কলেজের সুশমিতা ঠাকুরের নেতৃত্বে একদল গবেষক। তারা তিনটি বাস্তব ঘটনা নথিবদ্ধ করেন— যার মধ্যে দুটি ছিল মনোকল্ড গোখরা এবং একটি কালো ক্রাইটের কামড়ের ঘটনা। এসব ঘটনা রিপোর্ট করা হয় আসামের গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

প্রথম ঘটনা

৪৫ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি নিজের বাড়িতে মুরগির ওপর হামলা করা এক গোখরাকে মেরে ফেলার জন্য মাথা কেটে ফেলেন। পরে মৃত সাপটির দেহ ফেলার সময় বিচ্ছিন্ন মাথাটি তার বুড়ো আঙুলে কামড় দেয়। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ব্যথা শুরু হয়, যা কাঁধ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

হাসপাতালে গিয়ে তিনি বারবার বমি, অসহ্য যন্ত্রণা এবং কামড়ের স্থানে কালো হয়ে যাওয়ার উপসর্গ জানান। সাপের ছবির মাধ্যমে চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন যে এটি মনোকল্ড গোখরার কামড়।

হাসপাতালে তাকে ইনট্রাভেনাস অ্যান্টিভেনম ও ব্যথানাশক দেওয়া হয়। ২০ দিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। গবেষকদের মতে, চিকিৎসার পর ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় এবং স্নায়ুজনিত বিষক্রিয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।

দ্বিতীয় ঘটনা
এক কৃষক ধানক্ষেতে কাজ করার সময় ট্র্যাক্টরের নিচে এক গোখরা সাপ চাপা পড়ে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা মৃত ভেবে ফেলে রাখার পরও সেই সাপ তার পায়ে কামড় দেয়। কামড়ের ফলে তীব্র ব্যথা, ফোলা ও রঙ পরিবর্তন দেখা দেয়। হাসপাতালে তিনি দু’বার বমি করেন। যদিও স্নায়ুজনিত বিষক্রিয়া হয়নি, তবে ক্ষতস্থানে আলসার তৈরি হয়।

গবেষকরা লিখেছেন—“চাপা পড়ে মৃত বলে ধরে নেওয়া হলেও সাপটি বিষ ছড়াতে সক্ষম ছিল। এতে অ্যান্টিভেনম ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত পরিচর্যার প্রয়োজন হয়।”

তৃতীয় ঘটনা
একটি কালো সাপ একটি বাড়িতে ঢুকে পড়লে সেটিকে হত্যা করে ফেলে দেওয়া হয় উঠোনে। পরে এক প্রতিবেশী সাপটির মাথা হাতে নিলে সেটি আঙুলে কামড় দেয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার চোখের পাতা ঢলে পড়ে এবং গিলতে অসুবিধা হয়।

চিকিৎসকরা সাপটিকে কালো ক্রাইট হিসেবে শনাক্ত করেন এবং নিশ্চিত করেন যে এটি তিন ঘণ্টা আগে মারা গেলেও কামড় দিয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ২০ ভায়াল অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়, তবে তার অবস্থা আরও খারাপ হয়— তিনি চতুর্দিক অবশ হয়ে পড়েন এবং অচেতন হয়ে যান।

এরপর টানা ৪৩ ঘণ্টা লাইফ সাপোর্টে রাখার পর ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন এবং ছয় দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পান।

কেন ঘটে এ ঘটনা?
গবেষকরা জানিয়েছেন, মারাত্মক আঘাত পেয়ে মারা যাওয়ার পরও কিছু প্রজাতির সাপ বিষ ছড়াতে পারে। এর কারণ তাদের বিশেষ ধরনের বিষ নিঃসরণ ব্যবস্থা রয়েছে।

বিষগ্রন্থি ফাঁপা দাঁতের সঙ্গে যুক্ত থাকে, ফলে বিচ্ছিন্ন মাথা চেপে ধরলে বা ভুলবশত চাপ পড়লে বিষ বেরিয়ে আসতে পারে। এতে জীবিত সাপের কামড়ের মতোই মারাত্মক উপসর্গ দেখা দেয়।

ডিএম/রিয়া



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top