বিচারের আগেই মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে বিচার করে ফেলছে দুদক
প্রকাশিত:
২৭ জুলাই ২০২৫ ১৭:৩৬
আপডেট:
২৭ জুলাই ২০২৫ ১৭:৩৮

আদালতের মাধ্যমে জেল, ফাঁস যা দেন, তাতে সমস্যা নেই। আমার মামলার বিষয়বস্তু পত্র-পত্রিকায় আগেই দেখেছি। বিচারের আগেই মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে বিচার করে ফেলছে দুদক।
রোববার (২৭ জুলাই) জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালতে এসব কথা বলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
গত বছরের ২৬ আগস্ট হাসানুল হক ইনুকে উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কেন্দ্রিক বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়। দুদক গত ১৬ মার্চ ইনুর বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। আদালত তার উপস্থিতিতে শুনানির দিন রোববার (২৭ জুলাই) ধার্য করেন। এদিন শুনানির সময় তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
এদিন সকাল ৯টার দিকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা ১১টার দিকে তাকে এজলাসে তোলা হয়।
দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর হাসানুল হক ইনুকে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি করেন।
হাসানুল হক ইনুর আইনজীবী মোহাম্মদ সেলিম শুনানিতে বলেন, আদালতের হাজতখানার মধ্যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন হাসানুল হক ইনু। তাকে সকাল ৯টায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় নিয়ে আসা হয়। এরপর সেখানে তাকে রাখা হয় অন্য প্রায় ৫০ জন আসামির সঙ্গে। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী এসব আসামির মধ্যে তাকে রাখায় তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। শুনানির একপর্যায়ে আদালতের কাছে সব ভিআইপি আসামির জন্য আলাদা হাজতখানা করার দাবি জানান এই আইনজীবী।
এরপর বিচারক বলেন, আসামিদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পুলিশের। আমরাও চাই না এই সমস্ত আসামিদের আদালতে নিয়ে আসা হোক কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। কেননা, বিচার ব্যবস্থা এখনো ডিজিটালাইজড করা হয়নি। আমরা পুরোনো ব্যবস্থার মধ্যেই রয়ে গেছি। এ কারণে তাদের প্রায়ই আদালতে নিয়ে আসা হয়।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারক বলেন, অনেক সংস্থার অনেক বড় বড় বিল্ডিং হয়েছে কিন্তু বিচার বিভাগের কোনো উন্নতি হয়নি। মহানগর দায়রা জজ আদালতের এই বিল্ডিংও নিজের না, এটি জেলা জজ আদালতের বিল্ডিং। এখানে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের জন্য টয়লেটেরই ব্যবস্থা নাই, বসা তো দূরের কথা। এজলাসের মধ্যে আইনজীবীদেরই বসার জায়গা থাকে না, বিচারপ্রার্থী তো দূরের কথা। আওয়ামী সরকারের আমলে অনেক বড় বড় মন্ত্রী-এমপিরা আইনজীবী ছিলেন। আইনমন্ত্রী নিজেও এই আদালতে প্র্যাকটিস করতেন কিন্তু আইন ব্যবস্থার কোনো উন্নতি করেননি।
বিচারক আরও বলেন, সেদিন সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এসেছিলেন, আমি তাকেও বলেছি আপনারা যদি বিচার ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন করতেন তাহলে আজকে তার সুফল ভোগ করতে পারতেন। কারাগার থেকে আর আদালতে আসা লাগত না, কারাগারে বসেই মামলার কার্যক্রম করতে পারতেন। আমাদেরও এত ভোগান্তি হতো না। ভিডিও কলের মাধ্যমে আসামিদের শনাক্ত করে শুনানি করতে পারতাম।
এরপর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ইনু বলেন, আদালতের মাধ্যমে জেল, ফাঁসি যা দেন তাতে সমস্যা নেই। আমার মামলার বিষয়বস্তু পত্র-পত্রিকায় আগেই দেখেছি। বিচারের আগেই মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে বিচার করে ফেলছে দুদক। তখন বিচারক তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, আপনাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে। আজ শুধু গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানি। এরপর বিচারক তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
এজলাস থেকে নামার সময় ইনু বিচারককে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, আপনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এজলাসের ব্যবস্থা করায় আপনাকে ধন্যবাদ।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার ৫০৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার চারটি ব্যাংক হিসাবে ১১ কোটি ৮৮ লাখ ১৬ হাজার ১৯ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। আরেক মামলায় হাসানুল হক ইনুর স্ত্রী আফরোজা হকের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৮৫ হাজার ৭৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: