আন্দোলন স্থগিত, স্থবির সচিবালয়ে আপাতত স্বস্তি
 প্রকাশিত: 
 ২৭ মে ২০২৫ ১৪:২৯
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:২৫
 
                                রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন দাবিতে কয়েকটি কর্মসূচি চললেও গত কয়েকদিন ধরে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের দিকে সবার বিশেষ নজর ছিল। সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে নজিরবিহীনভাবে দফতর ছেড়ে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী। দাবি পূরণ না হলে লাগাতার কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে সামনের দিনে কি হবে- সেই শঙ্কা দেখাও দেখা দেয়। তবে আপাতত স্বস্তির খবর, আলোচনার স্বার্থে কর্মসূচি স্থগিত করেছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৭ মে) সচিবদের সঙ্গে বৈঠক শেষে উভয়পক্ষ প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানায়। এতে করে গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলনের কারণে সচিবালয়ে অনেকটা অচলাবস্থার তৈরি হলেও তার থেকে আপাতত মুক্তি মিলেছে।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ বলেন, আমরা কয়েকজন সচিব বসে তাদের (আন্দোলনকারী) বক্তব্য শুনেছি। আসলে আমরা উভয়পক্ষই সরকারের কর্মচারী। সরকার একটা আইন করেছে। তারা এ বিষয়ে সংক্ষুব্ধ হয়েছে। আইনটি বাতিল চেয়েছে। আমরা তাদের দাবির সারাংশ বুধবার (২৮ মে) মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে উপস্থাপন করব। পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এসময় আন্দোলনকারীদের পক্ষে দুজন কথা বলেন, তারাও আন্দোলন স্থগিতের বিষয়ে সম্মত হয়েছেন বলে জানান।
এদিন বিকেল পৌনে ৩টায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে ভূমি সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়। সভায় আরও পাঁচজন সচিব অংশ নেন। এছাড়া সচিবালয়ে আন্দোলনরত কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা সভায় যোগ দেন।
সচিবালয়ে কর্মচারীদের লাগাতার আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ বেশ কয়েকজন সচিবকে নিয়ে জরুরি সভা করেন। ওই সভায় সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সভা থেকেই কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে ভূমি সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে তিনি আন্দোলনরতদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
কেন এই আন্দোলন?
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন হয়। এর পর থেকে এই অধ্যাদেশের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা।
এদিকে, আন্দোলনের মধ্যেই গত রোববার সন্ধ্যায় সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে সরকার। এই অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবারসহ টানা চার দিন সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। নিজেদের দফতর ছেড়ে বিপুলসংখ্যক কর্মচারী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
এতে সারাদেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও এই দাবিতে মাঠে নামার আহ্বান জানানো হয়।
সচিবালয় ঘিরে কড়া নিরাপত্তা, প্রবেশ বিড়ম্বনায় সাংবাদিকরা
কর্মচারীদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সচিবালয়ে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। সচিবালয়ের প্রধান ফটকে বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াট মোতায়েন করা হয়। এছাড়া বিজিবি ও র্যাব মোতায়েন করা হয়। সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কেউ ঢুকতে পারেননি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যেই সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা।
এদিকে, বেলা একটা পর্যন্ত সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কর্মচারীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর বেলা ১টার পর সাংবাদিকদের সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে অনুমোদন দেওয়া হয়, যা নিয়ে সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
আন্দোলনে বিএনপিপন্থি আমলাদের সংগঠনের সমর্থন
এর আগে, মঙ্গলবার সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনে একাত্মতার ঘোষণা দেয় বিএনপিপন্থি সংগঠন সরকারি বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।
ফোরামের সভাপতি এ বি এম আবদুস ছাত্তার বলেছেন, অধ্যাদেশ স্থগিত করতে চায় সরকার কিন্তু স্থগিতের আদেশের প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। ঐক্য ফোরাম থেকে কিছু সিনিয়র কর্মকর্তা আজ এখানে এসেছি আন্দোলনকারীদের শান্ত রাখার জন্য, যেন কোনো ধরনের সহিংসতা না হয়। আমরা এই আন্দোলনের সঙ্গে শতভাগ একাত্মতা ঘোষণা করছি।
ঐক্য ফোরামের সভাপতি বলেন, সরকারের মধ্যে কিছু এজেন্ট ঢুকে পড়েছে। তারা সরকারপ্রধানকে বিভ্রান্ত করে এ সমস্ত কাজ করাচ্ছে।
সচিবালয়ের সামনে জুলাই মঞ্চের কর্মসূচি
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, হান্নান মাসুদসহ অনেকেই কথা বলেছেন। এর পেছনে ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে তারা এর প্রতিবাদে কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার সচিবালয়-এনবিআরসহ দেশে থাকা দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিবাদের আমলাদের উৎখাতে ‘ফ্যাসিবাদ উৎখাত যাত্রা’ কর্মসূচি পালন করেছে জুলাই মঞ্চ। সচিবালয়ের বিপরীত পাশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা।

 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: