রবিবার, ১৯শে অক্টোবর ২০২৫, ৪ঠা কার্তিক ১৪৩২


‘ফ্রি ভিসা’ বাণিজ্য : বিদেশগমন খরচ বাড়িয়ে দেশের রেমিট্যান্সে আঘাত


প্রকাশিত:
১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:০৪

আপডেট:
১৯ অক্টোবর ২০২৫ ২১:৩৩

ছবি : সংগৃহীত

তথাকথিত ‘ফ্রি ভিসা’ বাণিজ্য বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য শুধু অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা নয়, এটি জাতীয় অর্থনীতিকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম ওকাপের নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, বিদেশগমন খরচ এবং ‘ফ্রি ভিসা’ বাণিজ্যের কারণে বছরে প্রায় ১৮ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ০.৫৪ শতাংশ ক্ষতিসাধন করছে।

রোববার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন ওকাপের চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম।

তিনি জানান, ‘ফ্রি ভিসা’ বিভ্রান্তিকর একটি শর্ত, এটি বিনামূল্যে বা বৈধ নয়, বরং শোষণমূলক নেটওয়ার্কের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। এতে অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, পরিবারগুলো ঋণের জালে আটকে পড়ছে এবং দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ১ হাজার ৮৪১ জন অভিবাসীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। এদের মধ্যে ৫১ শতাংশ কর্মী ‘ফ্রি ভিসা’ এবং ৪৯ শতাংশ সরকার অনুমোদিত কাজের ভিসা ব্যবহার করে বিদেশে গেছেন। বিশেষত উপসাগরীয় দেশগুলোতে ২০২২ সালে অভিবাসী কর্মীদের প্রায় অর্ধেকইফ্রি ভিসা ব্যবহার করেছেন। তবে এই ভিসার জন্য সরকার নির্ধারিত ফি থেকে তিন থেকে ছয় গুণ বেশি অর্থ খরচ করতে হয়েছে।

প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ চোখে পড়ার মতো। উদাহরণস্বরূপ, কুয়েতে সরকার নির্ধারিত অভিবাসন খরচ ১ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা, কিন্তু ‘ফ্রি ভিসা’-তে খরচ দাঁড়ায় ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৩০৩ টাকা। সাধারণ কাজের ভিসা হলেও খরচ করতে হয় ৬ লাখ ১৯ হাজার ১৬৭ টাকা। সৌদি আরব, ওমান, কাতার ও দুবাইতে এই অঙ্ক ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ‘ফ্রি ভিসা’-তে ভ্রমণকারী কর্মীরা গন্তব্য দেশে পৌঁছানোর পরও বিভিন্ন অতিরিক্ত ব্যয়ে পড়েন। ওয়ার্ক পারমিট, নতুন চাকরি পাওয়ার খরচ, খাবার ও অন্যান্য জীবনযাত্রার খরচ মিলিয়ে একজন কর্মীর মোট ব্যয় হয় গড়ে ৭ লাখ ২২ হাজার ৭০০ টাকা। এর অর্থ, ফ্রি ভিসার মূল খরচসহ বিদেশে অবস্থানকালীন অতিরিক্ত খরচ মিলিয়ে গড়ে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পড়ে।

ওকাপের তথ্য অনুযায়ী, ৫৭ শতাংশ কর্মী কোনো অতিরিক্ত ব্যয় ছাড়াই ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু ২১ শতাংশ কর্মীকে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য গড়ে ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হয়েছে। এছাড়া ৪ শতাংশ কর্মী চাকরি পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত ৪৪ হাজার টাকা ব্যয় করেছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া।

তিনি গবেষণার তথ্য তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ‘ফ্রি ভিসা’ বাণিজ্যের আর্থিক প্রভাব নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রকল্প ব্যবস্থাপক রাহনুমা সালাম খান, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) মাইগ্রেশন পলিসি ও সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের হেড শ্রুতি ইশিতা, এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. কাজী মাহমুদুর রহমান।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার প্রশাসক মো. আশরাফ হোসেন, বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান, সাবেক সহসভাপতি নোমান চৌধুরী, ঢাকার সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজিয়া হায়দার, ওকাপের নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুক এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ওকাপের প্রোগ্রাম সমন্বয়ক এ এ মামুন নাসিম।

গবেষণা ও আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, ‘ফ্রি ভিসা’ শুধু ব্যক্তিগত খরচ বাড়ায় না, এটি দেশের সামষ্টিক রেমিট্যান্স আয়কে হুমকির মুখে ফেলে। নীতিনির্ধারকদের জন্য এটি এক সতর্কবার্তা যে, বৈধ ও নিয়ন্ত্রিত অভিবাসন প্রক্রিয়া ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি বাড়তে পারে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top