বুধবার, ২৬শে নভেম্বর ২০২৫, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩২


মাসের পর মাসের চেষ্টায় জমেছিল দেড় লাখ টাকা, আগুনে সব শেষ


প্রকাশিত:
২৬ নভেম্বর ২০২৫ ১২:৫৫

আপডেট:
২৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:৪৩

ছবি : সংগৃহীত

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে লাগা আগুনে শুধু ঘরই পোড়েনি, পুড়েছে দোকান কর্মচারী ফারুক হোসেনের সারা জীবনের সঞ্চয়। টিনের কৌটার ভেতরে ঘর মেরামতের জন্য জমানো দেড় লাখ টাকা ধ্বংসস্তূপের ছাইয়ের সাথে মিশে গেছে।

ক’ ব্লকের সেই পোড়া ভিটায় গিয়ে ফারুক হোসেন যখন মাটি হাতড়ে তার জমানো টাকা খুঁজছিলেন, তখন কেবল পোড়া কয়লা আর আধাপোড়া কিছু নোটের টুকরো ছাড়া আর কিছুই মেলেনি।

ফারুক জানান, গতকাল বিকেলে যখন কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগে, তখন তিনি ছিলেন দোকানে। আগুন লাগার খবর পেয়ে যখন বাড়িতে এসে পৌঁছান তখন টিনের ঘরটি দাউ দাউ করে জ্বলছিল। মুহূর্তের মধ্যে সবই আগুনের গ্রাসে চলে যায়

আজ সরেজমিনে দেখা যায়, বস্তির পোড়া ছাইয়ের বিশাল স্তূপের মধ্যে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন ফারুক হোসেন। সতর্ক হাতে তিনি ছাই সরাচ্ছেন। উদ্দেশ্য যদি একটি নোটও অক্ষত থাকে। প্রায় দেড় ঘণ্টা খোঁজার পর তিনি পোড়া টিনের বাক্সের কাছে পৌঁছান। সেখানে ছিল কেবল কয়লা হয়ে যাওয়া কাগজের টুকরো এবং কালো হয়ে যাওয়া কিছু নোটের অংশবিশেষ।

ফারুক হোসেন হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, আমি টাকাগুলো জমিয়েছিলাম, দেড় লাখ টাকা। কষ্ট করে, না খেয়ে, মাসের পর মাস এই টাকাগুলো জমা করছিলাম। তখন দোকানে ছিলাম। আগুন লাগার খবর পেয়ে দৌড়ে এলাম, কিন্তু দরজার কাছে এসে আর ঢুকতে পারিনি। সবকিছু চোখের সামনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আমার গায়ের কাপড় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই, সব পুড়ে ছাই।

আগুনের শুরুতে ঘরে ছিলেন না ফারুকের মা খোদেজা বেগমও। সব হারানোর কষ্ট নিয়ে তিনি বলেন, আমার সব শেষ। মানুষের বাড়ি কাজ করে যেকয়টা জিনিস ঘরে তুলেছিলাম সব শেষ। আমার ছেলে যে টাকা রেখেছিল, সেইটাই আমাদের সব ভরসা ছিল। কিন্তু সব পুড়ে অঙ্গার।

এই আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এলেও আজও বস্তির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা থাকা ধোঁয়া বা ছাইয়ের স্তূপ থেকে যাতে নতুন করে কোনো অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি না হয়, সেজন্য তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পাশাপাশি, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের দেখভাল করতে ডেসকোর (ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড) কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তৎপরতাও চোখে পড়েছে

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে বস্তির বৌবাজারের একটি ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়

ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় এবং শুকনো মৌসুমের কারণে আগুন দ্রুত শতাধিক ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও, সরু পথ ও পানির অভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। এলাকার লেক থেকে পাইপ টেনে এনে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top