সরকারের ঢিলেঢালা আচরণে খুনিরা আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে: জোনায়েদ সাকি
প্রকাশিত:
১৬ জুলাই ২০২৫ ২২:১০
আপডেট:
১৬ জুলাই ২০২৫ ২২:১১

শহীদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকীতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ছিল জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। কিন্তু তাদের ঢিলেঢালা কার্যক্রমের কারণে এখন খুনিরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
বুধবার রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে আয়োজিত শহীদ স্মরণে এক সমাবেশে তিনি আরও বলেন, শহীদ পরিবার ও আহতদের ন্যায়বিচার আজও নিশ্চিত হয়নি। সরকারের উচিত বিচারকে দৃশ্যমান ও দ্রুততর করা। প্রয়োজনে নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠন করে হলেও এই বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন—এই তিনটি স্তম্ভই অত্যাবশ্যক। নির্বাচন ছাড়া সংস্কার টেকসই হবে না, আর জনগণের সম্মতি ছাড়া কোনো সংবিধান পরিবর্তনও গ্রহণযোগ্য নয়।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আগামী ৫ আগস্টের মধ্যেই ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার মাধ্যমে সেই সংস্কার কাঠামো তুলে ধরতে হবে, যাতে জনগণের সর্বসম্মত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়িত হয় এবং বিরোধের বিষয়গুলো নির্বাচনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যায়।
তিনি বলেন, জনগণের হাতে ক্ষমতা ফেরাতে হলে নতুন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত গড়ে তুলতে হবে। বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অধিকারনির্ভর বাংলাদেশই হোক আমাদের লক্ষ্য।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রায় হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিস্টরা এখনও পেশিশক্তি দেখিয়ে চলেছে। সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতায় মব সন্ত্রাস বেড়ে গেছে। জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
সাকি বলেন, আমরা লুটের টাকা ফেরত আনতে চাই, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ মানুষের জীবনমান উন্নত করতে চাই। যারা শ্রমিক-কৃষকের ভাগ্য বদলাবে, তরুণদের স্বপ্নপূরণ করবে—তাদের নির্বাচনেই নির্ধারণ করতে হবে। জনগণের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ক্ষমতা মানেই ফ্যাসিবাদের দ্বার উন্মুক্ত করা।
সমাবেশে শহীদদের পরিবার ও সহযোদ্ধারাও বক্তব্য রাখেন। শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান বলেন, আমরা ফ্যাসিস্টকে কীভাবে হটাতে হয়, তা শিখে গেছি। শহীদদের যে আদর্শ, সেটাই আমরা বাস্তবে দেখতে চাই।
শহীদ রমিজ উদ্দিনের বাবা রফিকুল আনোয়ার বলেন, আমরা শুধু বিচার চাই না, আহতদের সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
ছাত্র ফেডারেশনের নেতারা বলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান কেবল একটি কোটা সংস্কারের আন্দোলন ছিল না, এটি হয়ে উঠেছিল ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য জনগণের প্রতিরোধ। যতদিন শ্রমিকের ঘাম, কৃষকের ফসলের মূল্য ও শহীদদের ন্যায্যতা নিশ্চিত না হবে, ততদিন লড়াই চলবে।
নেতারা সংবিধান পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা ও বিভাজনের রাজনীতি আর চলবে না। জনগণের রাজনৈতিক শক্তিই হবে ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক।
দিবসটি উপলক্ষে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মৃতিচারণ করেন এবং শহীদ আবু সাঈদের পীরগঞ্জের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। বিকালে রংপুর পায়রা চত্বরে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের উদ্যোগে শহীদ স্মরণে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলনের রংপুর জেলা আহ্বায়ক তৌহিদুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে সকল মানুষের অধিকার ও মর্যাদা থাকবে। সেই বাংলাদেশ তৈরি হবে একটি নতুন গণতান্ত্রিক বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে, যা শহীদদের রক্তের প্রতিদান হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: