বুধবার, ২৩শে জুলাই ২০২৫, ৮ই শ্রাবণ ১৪৩২


তারল্য সংকট নেই, ব্যাংক খাতে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার উদ্বৃত্ত


প্রকাশিত:
২৩ জুলাই ২০২৫ ১১:৫০

আপডেট:
২৩ জুলাই ২০২৫ ১৮:৩৬

ছবি সংগৃহীত

জুলাই ও আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট নিয়ে নানা আলোচনা চললেও জুন শেষে দৃশ্যপট ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুন মাস শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট তারল্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ লাখ ৭০ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় তারল্য ছিল ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। সে হিসেবে নিট উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়ায় ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা বেশি।

ব্যাংকভেদে তারল্যের চিত্র
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সরকারি ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত তারল্য ৮৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকে তা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত ৩৩ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। তবে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে রয়েছে ৪৩৩ কোটি টাকার ঘাটতি এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ঘাটতি ৬২ কোটি টাকা।

রেকর্ড রেমিট্যান্স ও রিজার্ভ বৃদ্ধি
২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে রেকর্ড ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। শুধু জুন মাসেই প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। এ সময় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে; গত বছর একই সময়ে তা ছিল ২৬ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্লেষকদের মূল্যায়ন
ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী মনে করেন, সরকার পরিবর্তনের পর বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বিনিয়োগে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। উচ্চ সুদের কারণে অনেক ব্যবসায়ী ঋণ নিতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। এর ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্য বেড়ে গেছে।

অর্থনীতিবিদ এবং চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ-এর রিসার্চ ফেলো এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, ‘রেকর্ড রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক ঋণের প্রবাহে রিজার্ভ বেড়েছে। হুন্ডি কার্যক্রম কমে যাওয়ায় ডলারের ওপর চাপও কমেছে। সবমিলিয়ে এটি দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা।’

ডলারের বাজার ও সরকারের ঋণ
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫০৩ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। জুনে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১২২ টাকা ৭৭ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি (১১৮ টাকা)।

অন্যদিকে, সঞ্চয়পত্রে মে মাস পর্যন্ত বিক্রয়ের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সরকার নিট ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের পর অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তারল্য বেড়েছে, রিজার্ভ বেড়েছে, ডলারের বাজার স্থিতিশীল হয়েছে—সব মিলিয়ে এটি ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক সংকেত।’

ডিএম /সীমা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top