যুদ্ধ অবসানে জটিলতা তৈরি করছে রাশিয়া, ট্রাম্পের চাপে জেলেনস্কি
প্রকাশিত:
১৭ আগস্ট ২০২৫ ১২:২৮
আপডেট:
১৭ আগস্ট ২০২৫ ২০:২০

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া একের পর এক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় যুদ্ধ থামানোর প্রক্রিয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।
এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে দেখছি— রাশিয়া কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হচ্ছে না। তারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এই অমানবিকতা থামবে কবে, তা কেউ জানে না। ফলে শান্তির প্রচেষ্টাগুলো আরও জটিল হয়ে যাচ্ছে।
জেলেনস্কি আগামী সোমবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। সেখানেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বৈঠকে জেলেনস্কিকে একটি শান্তি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানাবেন ট্রাম্প।
এর আগে, আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন ট্রাম্প। বৈঠকের পর ট্রাম্প সামাজিকমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেন, আমরা যুদ্ধবিরতির কথা বলছি না, আমরা চাই স্থায়ী শান্তিচুক্তি। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের এটিই হবে সবচেয়ে কার্যকর পথ।
ট্রাম্প আরও বলেন, আগুন থামাতে হবে। এই হত্যাকাণ্ড আর চলতে দেওয়া যায় না।
বৈঠকের পর ট্রাম্প ফোনে জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেন। সূত্র জানায়, ট্রাম্প তাকে সরাসরি চুক্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। পরে জেলেনস্কি সামাজিকমাধ্যমে এক বিবৃতি দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তির ন্যূনতম শর্তগুলো তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে, বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, এবং রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলো থেকে অপহৃত শিশুদের মুক্তি।
ট্রাম্পের এই অবস্থান কিছুটা অপ্রত্যাশিত। কারণ, এর আগেও তিনি বলেছিলেন, প্রথমে একটি দ্রুত যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে আলোচনার পথ খোলা রাখা দরকার। তবে আলাস্কা বৈঠকের পর তার অবস্থান বদলে গেছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
পুতিন বৈঠকে ট্রাম্পকে একটি শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, ইউক্রেন যদি ডনবাসের দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে সরে আসে, তবে রাশিয়া দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসনের ফ্রন্টে আগ্রাসন বন্ধ করবে।
রাশিয়া ২০১৪ সালেই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। এরপর থেকে তারা ডনবাস অঞ্চলেও শক্ত অবস্থান নেয় এবং বর্তমানে দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ ও লুহানস্কের অধিকাংশ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।
অবশ্য এই অঞ্চল নিয়ে ইউক্রেনের অবস্থান স্পষ্ট। কিছুদিন আগেই জেলেনস্কি বলেছেন, ডনবাস কোনোভাবেই রাশিয়াকে দেওয়া হবে না। কারণ, এটি হলে রাশিয়া ভবিষ্যতে আরও আগ্রাসী হয়ে উঠবে।
এদিকে কূটনৈতিক মহলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, ট্রাম্প সোমবার জেলেনস্কির ওপর চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারেন।
সিবিএস তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, ইউরোপীয় কূটনীতিকদের একটি অংশ উদ্বিগ্ন, ট্রাম্প হয়তো ইউক্রেনকে দোনেৎস্ক থেকে সরে যাওয়ার জন্য রাজি করাতে চাইবেন।
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, চুক্তি করো। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া একটি পরাশক্তি। ইউক্রেন তা নয়।
যদিও কয়েক সপ্তাহ আগেও ট্রাম্প বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এমনকি তিনি মস্কোর জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমাও ঠিক করে দেন।
এই অবস্থান থেকে পিছু হটেই তিনি এখন শান্তি চুক্তির পক্ষে কথা বলছেন।
বৈঠকের পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, এই আলোচনাটি খুবই ফলপ্রসূ ছিল। আমরা ট্রাম্পকে রাশিয়ার অবস্থান বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, যুদ্ধের মূলে যে কারণগুলো রয়েছে, তা দূর করলেই শান্তি সম্ভব। এগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
রাশিয়ার জাতিসংঘ প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেন, এই বৈঠক যুদ্ধ শেষের পথে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
বৈঠকের পর ইউরোপীয় নেতাদের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া এসেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন যৌথভাবে বলেন, পরবর্তী ধাপে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে আলোচনায় যুক্ত করা উচিত।
তারা বলেন, ইউক্রেন তার ভূখণ্ড নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা একান্তই তাদের ব্যাপার। আন্তর্জাতিক সীমানা বলপ্রয়োগে পরিবর্তন করা যায় না।
এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ট্রাম্প-পুতিন বৈঠককে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা সম্ভবত আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় শান্তির আরও কাছাকাছি এসেছি।
তবে কিয়েভে সাধারণ মানুষ এই আলোচনার ফলাফল নিয়ে দ্বিধান্বিত। তারা শঙ্কিত, ইউক্রেনের অংশবিশেষ রাশিয়ার হাতে চলে যেতে পারে।
পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলের একজন অভিজ্ঞ সেনা সের্হি অর্লিক বলেন, আমি বুঝি আলোচনার প্রয়োজন আছে। কিন্তু এই হাত মেলানো, লাল গালিচা বিছানো আর মাথা নত করার চিত্র ভয়াবহ। এর কোনো মানে নেই। সূত্র: বিবিসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: