মঙ্গলবার, ১৪ই অক্টোবর ২০২৫, ২৯শে আশ্বিন ১৪৩২


থালাপতি বিজয়ের সমাবেশে আসলে কী ঘটেছিল?


প্রকাশিত:
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৩৬

আপডেট:
১৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:৪৩

ফাইল ছবি

‌‌‘‘সমাবেশে সকাল থেকে যারা এসেছিলেন, কেউ ফিরে যাননি। আমি ওই মানুষের ভিড়ে আটকে পড়েছিলাম, পরে কয়েকজন তরুণের সাহায্যে অনেক কষ্টে বের হতে পেরেছি।’’

কথাগুলো বলছিলেন শনিবার ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কারুর জেলায় অভিনেতা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া থালাপতি বিজয়ের রাজনৈতিক সমাবেশে আসা দুর্গাদেবী। তার মতো হাজার হাজার মানুষ এসেছিলেন গতকালের ওই সমাবেশে।

গরমে আর ভিড়ে পদদলিত হয়ে যাদের অন্তত ৩৯ জন মারা গেছেন বলে রাজ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বহু মানুষ এখনও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

‘‘কারো কাছে খাবার বা পানি ছিল না। আমি নিজের চোখে দেখেছি, বাচ্চারাও অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলো,’’ বলছিলেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দুর্গাদেবী। পুলিশের কর্মকর্তা ডেভিডসন ডেভাসারওয়াত বলেছেন, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে এবং তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিবিসি তামিল কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছে, সেখানে আসলে কী ঘটেছিল?

• খাবার ও পানির সংকট

ভেলুচামিপুরমের বাসিন্দা দুর্গাদেবী ওই সমাবেশ এসেছিলেন সকাল বেলায়। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, অল্পের জন্য তিনি শ্বাসরুদ্ধকর ভিড় থেকে প্রাণে বেঁচেছেন। ভিড়টা সকালের দিকে মোটামুটি ছিল। বিজয়ের আসতে দেরি হচ্ছিল, ফলে আস্তে আস্তে ভিড় বাড়তে থাকে। গ্রামের বাইরে থেকেও বিপুল মানুষ এসেছিল।

এছাড়া গতকালের সমাবেশের প্রচারণার কারণে এখানকার দোকান এবং রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ ছিল। ফলে বাইরে থেকে আসা মানুষ খাবার বা পানি পাননি। সন্ধ্যায় সমাবেশ শুরুর আগেই অনেকে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, সকাল থেকে যারা এসেছিলেন, কেউ আর ওখান থেকে বের হননি। সময় বাড়ার সাথে সাথে সমাবেশে মানুষের সংখ্যা বাড়ছিল, সন্ধ্যায় সেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আর তখনই পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে।

‘‘আমিও হুড়োহুড়ির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের গ্রামের কয়েকটা অল্পবয়সী ছেলের সাহায্যে আমি একটা বিল্ডিং টপকে বেরিয়ে যাই, যে কারণে কোনও আঘাত ছাড়াই আমি বেঁচে ফিরেছি।’’

• বাচ্চারা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল

দুর্গাদেবীর গ্রামেরই আরেকজন লক্ষী, তিনিও সমাবেশে গিয়েছিলেন। তিনি নিজে দেখেছেন, পদদলিত হওয়ার ঘটনার আগেই অনেক বাচ্চা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। বিবিসিকে তিনি বলেন, সকালে এত ভিড় ছিল না। শুরুতে সমাবেশের ব্যবস্থাপনাও ভালো ছিল। কিন্তু ভিড় বাড়তে থাকলে কেউই আর সামলাতে পারছিলেন না। অনেক বাচ্চাকে চোখের সামনে অজ্ঞান হয়ে যেতে দেখেছি আমি নিজে।

একই গ্রামের আনন্দকুমার নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, গর্ভবতী অনেক নারী এবং ছোট ছোট বাচ্চারা সকাল থেকে সমাবেশ স্থলে অবস্থান নিয়ে অপেক্ষা করছিল। আমি কারুরে কোনদিন এত ভিড় দেখিনি। যদিও বিজয় সন্ধ্যাবেলায় এসেছিলেন। কিন্তু দুপুরের মধ্যেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় ভরে যায়।

আমি জানি না, তারা কী ভেবে গর্ভবতী নারীদের ওই সমাবেশে নিয়ে এসেছিলেন, বলেন আনন্দকুমার।

• থালাপতি বিজয়ের বিলম্বে সভাস্থলে আসা

থালাপাতি দুপুর ১২টা থেকে ওই সমাবেশ করার জন্য অনুমতি নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজে সমাবেশ স্থলে পৌঁছান সন্ধ্যার সময়। বিপুল সংখ্যক মানুষ বিজয় থালাপতিকে একনজর দেখার জন্য সারাদিন অপেক্ষা করেন। এরপর তিনি মঞ্চে উঠলে সবাই একসাথে সামনে এগিয়ে যেতে শুরু করেন।

ওই সময় দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়। হুড়োহুড়ি করে সামনে যাওয়ার সময় তখন অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তামিলনাড়ুর ডিএমকে পার্টির মুখপাত্র সারাভানান বিজয়ের রাজনৈতিক দল তামিলাগা ভেট্টরি কাজাগামের অব্যবস্থাপনাকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করেন।

বার্তা সংস্থা পিটিআইকে তিনি বলেছেন, দলটি পুলিশের দেওয়া শর্ত ভঙ্গ করেছে এবং কোনও নিয়মের তোয়াক্কা করেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলেছে, দুপুর সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিজয় নিজে সন্ধ্যার পর একটি খোলা ট্রাকের ওপর বক্তৃতা দিতে শুরু করেন।

এদিকে, পদদলিত হওয়ার ঘটনায় টিএমকের সভাপতি থালাপতি বিজয় ও সাধারণ সম্পাদক এন আনন্দসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তামিলনাড়ু পুলিশ। তবে, বিজয়কে এখনই গ্রেপ্তার করা হবে ইক-না এমন প্রশ্নের জবাবে তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন বলেছেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত করার পরে সিদ্ধান্ত নেবে কী করতে হবে। রাজনৈতিক কারণে কাউকে হয়রানি করা হবে না।

• থালাপতির তুমুল জনপ্রিয়তা

বিজয় থালাপাতির আসল নাম জোসেফ বিজয় চন্দ্রশেখর। কিন্তু ভক্তরা তাকে থালাপাতি নামে ডাকে, তামিল ভাষায় যার অর্থ কমান্ডার। তিনি ভারতের তামিল এবং হিন্দি ভাষাভাষী সিনেমা দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়।

তার বাবা তামিল সিনেমার নামী পরিচালক এসএ চন্দ্রশেখর এবং তার মা শোভা ছিলেন একজন সঙ্গীতশিল্পী। ৫১ বছর বয়সী বিজয়ের অভিনয়ে হাতেখড়ি হয় ছোটবেলাতেই।

গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিজয় তামিলাগা ভেট্টরি কাজাগাম বা টিএমকে গঠন করেন এবং তখনই সিনেমায় অভিনয় থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তবে সিনেমা থেকে দূরে সরে গেলেও ভক্তদের মাঝে এখনো তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়।

শনিবারের তার ওই সমাবেশে লাখ লাখ সমর্থক যোগ দিয়েছিল। এদিকে, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি এবং আহতদের এক লাখ রুপি করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বিজয় সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে জানিয়েছেন, তিনিও নিহতদের পরিবারকে ২০ লাখ এবং আহতদের দুই লাখ রুপি করে সহায়তা দেবেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top