মঙ্গলবার, ১৪ই অক্টোবর ২০২৫, ২৮শে আশ্বিন ১৪৩২


শান্তির নোবেলজয়ী মাচাদোকে নিয়ে কেন এত সমালোচনা?


প্রকাশিত:
১১ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:১৬

আপডেট:
১৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:০৫

ফাইল ছবি

ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থি নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর তা নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচকরা বলেছেন, মাচাদো ইসরায়েলের সমর্থক এবং গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি নিজ দেশ ভেনেজুয়েলায় সরকার পতনের জন্য বিদেশি হস্তক্ষেপেরও আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

মাচাদো ভেনেজুয়েলার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা। গত কয়েক বছরে দেশটির বেসামরিক নাগরিকদের সাহসের এক শক্তিশালী প্রতীকে পরিণত হয়েছেন তিনি। ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল কমিটি শুক্রবার তাকে শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।

নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হোয়াইট হাউস এই পুরস্কারের ক্ষেত্রে ‘‘শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে’’ বলে সমালোচনা করে। বিশ্বজুড়ে অর্ধ-ডজনের বেশি যুদ্ধ থামানো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বৈশ্বিক শান্তির দূত হিসেবে প্রতিষ্ঠার হোয়াইট হাউসের ব্যর্থ প্রচারণার পরই এই প্রতিক্রিয়া আসে।

• মাচাদো কেন নোবেল পেলেন?

নোবেল কমিটি মাচাদোকে ‘‘শান্তির দূত’’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, যিনি ভেনেজুয়েলায় ক্রমবর্ধমান অন্ধকারের মাঝেও গণতন্ত্রের আলোকশিখা জ্বালিয়ে রেখেছেন। কমিটির চেয়ারম্যান জর্গেন ওয়াটনে ফ্রিডনেস মাচাদোকে ‘‘রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত বিরোধীদলের মধ্যে ঐক্যের প্রতীক’’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

কমিটি বলেছে, মাচাদো দেখিয়েছেন, গণতন্ত্রের উপকরণই শান্তির হাতিয়ার। তিনি এমন এক ভবিষ্যতের আশা জাগিয়ে তুলেছেন, যেখানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত থাকবে এবং তাদের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে।

ফ্রিডনেস বলেন, গত এক বছরে মাচাদোকে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। জীবনের জন্য ভয়াবহ হুমকি থাকা সত্ত্বেও তিনি দেশ ছাড়েননি; যা লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। যখন স্বৈরশাসকরা ক্ষমতা দখল করে, তখন স্বাধীনতার সাহসী রক্ষকদের স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

• মাচাদোর বিরুদ্ধে সমালোচনা

সমালোচকরা এখন মাচাদোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টগুলো শেয়ার করছেন, যেখানে তিনি ইসরায়েল ও বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। তাদের অভিযোগ, গাজায় গণহত্যা চালানো ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন তিনি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক আক্রমণের পর মাচাদো ইসরায়েলের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছিলেন। তবে কখনোই প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনিদের হত্যার পক্ষে অবস্থান নেননি তিনি।

তবে তার দীর্ঘদিনের পোস্টগুলোতে এটা পরিষ্কার যে, তিনি নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। সমালোচকরা এমন এক পোস্টের বরাত দিয়ে বলেছেন, যেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘ভেনেজুয়েলার সংগ্রামই ইসরায়েলের সংগ্রাম।’’ এর দুই বছর পর তিনি ইসরায়েলকে ‘‘স্বাধীনতার প্রকৃত মিত্র’’ বলে অভিহিত করেন। এমনকি তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে ভেনেজুয়েলার দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করবেন।

নরওয়ের সংসদ সদস্য বিয়র্নার মক্সনেস বলেছেন, মাচাদো ২০২০ সালে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। তিনি বলেন, লিকুদ পার্টি গাজায় গণহত্যার জন্য দায়ী। তাই এই পুরস্কার নোবেলের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুসলিম অধিকার সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) এই সিদ্ধান্তকে ‘‘অবিবেচনাপ্রসূত ও অগ্রহণযোগ্য’’ বলে সমালোচনা করেছে। অনলাইনে দেওয়া এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, এই সিদ্ধান্ত নোবেল কমিটির সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে এবং তাদের পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

বিবৃতিতে বলা হয়, নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির উচিত এমন কাউকে সম্মান জানানো, যিনি নৈতিকভাবে দৃঢ় থেকেছেন এবং সবার জন্য ন্যায়ের পক্ষে লড়েছেন; যেমন সেই শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, কর্মী কিংবা চিকিৎসক, যারা নিজেদের জীবন ও পেশার ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধ ‘‘গাজায় গণহত্যার’’ বিরোধিতা করেছেন।

• নিজ দেশে বিদেশি হস্তক্ষেপের আহ্বান

মাচাদো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিদেশি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। নোবেল জয়ের পর তার অতীত এই পদক্ষেপ নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।

২০১৮ সালে ইসরায়েল ও আর্জেন্টিনার নেতাদের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে নিজ দেশের ‘‘শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের’’ জন্য সহায়তা চান তিনি।

চিঠিটি অনলাইনে প্রকাশ করে মাচাদো লিখেছিলেন, ‘‘আজ আমি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মৌরিসিও মাক্রি এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে চিঠি পাঠাচ্ছি, যাতে তারা নিজেদের প্রভাব ও শক্তি ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলার মাদক ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত অপরাধী শাসনব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দিতে সহায়তা করেন।’’

সূত্র: এনডিটিভি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top