বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে ইউরোপীয়দের অভিনব উদ্যোগ
প্রকাশিত:
২৭ আগস্ট ২০২২ ০৯:১৭
আপডেট:
১৫ মে ২০২৫ ০৮:৪১

কাপড় ইস্ত্রি হবে না, ওভেনের ব্যবহার সীমিত এবং কর্মস্থলে গোসল– এভাবেই ইউরোপীয়রা বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু তবু বিদ্যুতের বিল বেড়েই চলেছে।
তথ্য জানাচ্ছে, গ্যাস ও বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য বৃদ্ধির ফলে ইউরোপের কোটি মানুষ তাদের আয়ের রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুতের পেছনে ব্যয় করছেন।
ইংল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে গ্রিমসি শহরের এক বাসিন্দা নিজের বাড়িতে শীতল করার ফ্যান চালু করেন না। যদিও এই গ্রীষ্মের পুরো ব্রিটেনজুড়ে রেকর্ড মাত্রায় তাপদাহ দেখা দিয়েছে।
তিনি জানান, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে এবং এরপরও প্রত্যাশা করা হচ্ছে সংকটের আগে যে অর্থ দেওয়া হতো তা দিয়ে মানুষ বেঁচে থাকবে। তিনি উষ্ণতা বজায় রাখা কিংবা খাবার খাওয়া, এই দুটির যে কোনও একটি করতে পারছেন।
অপর ইউরোপীয় দেশের নাগরিকরাও স্বেচ্ছায় গ্যাস, বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করছেন। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং করোনাভাইরাস মহামারি পরবর্তী সময়ে জ্বালানির মূল্য আকাশছোঁয়া।
গত ১২ মাসে ইউরোপীয় গ্যাসের মূল্য বেড়েছে ৫৫০ শতাংশ। শুক্রবার (২৬ আগষ্ট) ব্রিটেনের জ্বালানি নিয়ন্ত্রক ওফজেমের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর থেকে ব্রিটিশ ভোক্তাদের জ্বালানি ব্যয় বাড়বে ৮০ শতাংশ। এর ফলে দেশটির প্রতিটি বাড়িতে জ্বালানির পেছনে বার্ষিক ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ৩ হাজার ৫৪৯ পাউন্ড ((৩ লাখ ৯৯ হাজার ২৪৪ টাকা)।
ইউরোপীয় সরকারগুলো জনগণকে সহযোগিতায় দ্রুত এগিয়ে এসেছে। কিন্তু তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, এসব সহযোগিতা বাসা-বাড়িতে খুব পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে না।
সরকারি তথ্য পর্যালোচনা করে কার্বন ব্রিফ জানিয়েছে, এই শীতে ব্রিটিশরা গড়ে তাদের আয়ের ১০ শতাংশ ব্যয় করবেন গ্যাস, জ্বালানি ও উষ্ণতার জন্য অন্যান্য জ্বালানির পেছনে। এর মধ্যে থাকবে গাড়ির ফুয়েল, মূলত পেট্রোল ও ডিজেল। যা ২০২১ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।
এতে করে চলমান জ্বালানি সংকট ১৯৭০ ও ১৯৮০ দশকের তুলনায় আরও বেশি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। তেল উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা এবং ১৯৭৯ সালে ইরানের বিপ্লবের ফলে পশ্চিমা দেশগুলোর পেট্রোল স্টেশনে লম্বা লাইন তৈরি করেছিল। ওই সময় সংকটের চূড়ায় ১৯৮২ সালে যুক্তরাজ্যের মানুষ তাদের আয়ের ৯.৩ শতাংশ জ্বালানির পেছনে ব্যয় করেছিলেন।
যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা ন্যাশনাল এনার্জি অ্যাকশন (এনইএ) ধারণা করছে, অক্টোবরে যখন ব্রিটেনের জ্বালানির মূল্য বাড়বে তখন ৮৫ লাখ পরিবার জ্বালানি দারিদ্র্যের মুখে পড়বে। ২০২১ সালের অক্টোবরে এই সংখ্যা ছিল ৪৫ লাখ।
যদি আয় কম থাকে এবং জ্বালানির পেছনে আয়ের ১০ শতাংশ বা বেশি করতে হয়, সেই পরিস্থিতিতিকে পারিবারিক জ্বালানি দারিদ্র্য বলা হয়। এই সংজ্ঞা বেসরকারিভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যবহার করা হয়।
এনইএ’র পলিসি ও অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর পিটারি স্মিথ জানান, তারা জ্বালানির ব্যয়ের যে বৃদ্ধি দেখছেন তা একেবারে নজিরবিহীন। তাদের মতে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর সেই ঐতিহাসিক প্রবণতাগুলো অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে তাদের আয়ের চেয়ে জ্বালানিতে ব্যয়ের বিষয়টি এখন খুব স্পষ্ট।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: