শুক্রবার, ১১ই জুলাই ২০২৫, ২৬শে আষাঢ় ১৪৩২


পরীক্ষায় গণিতে ১ পেয়েছিলাম: জ্যাক মা


প্রকাশিত:
১০ জুলাই ২০২৫ ১৭:৫৫

আপডেট:
১১ জুলাই ২০২৫ ০০:৪৮

ছবি সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে এক অনুপ্রেরণার নাম চীনা ব্যবসায়ী ও আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। অসাধারণ বক্তা হিসেবেও পরিচিত তিনি। ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হংকংয়ে ‘অ্যান ইভিনিং উইথ জ্যাক মা’ অনুষ্ঠানে তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি এক অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন, যা আজও অনেকের মনে দাগ কেটে আছে।

জ্যাক মা সেদিন বলেন, ‘আমি যা ভাবি, তা সব সময় ঠিক হয় না। আমি কাউকে শেখাতে চাই না—কী করা উচিত, কী নয়। আমি বরং নিজের অভিজ্ঞতার কিছু গল্প বলি, এক বড় ভাইয়ের মতো।’

নিজের শুরুর গল্প বলতে গিয়ে তিনি জানান, ১৫ বছর আগে যখন ব্যবসা শুরু করেন, তখন তিনি একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না। ২৪ জন বন্ধুকে বাসায় ডেকে নিজের পরিকল্পনা বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুই ঘণ্টা ধরে বোঝানোর পরেও ২৩ জন রাজি হননি। পাশে ছিলেন কেবল একজন।

তিনি বলেন, ‘আজকের তরুণদের যে দক্ষতাগুলো থাকে, সেগুলোর কিছুই আমার ছিল না। কেউ বলত, ‘তোমার কী যোগ্যতা আছে? তুমি তো অ্যাকাউন্টিং বা ম্যানেজমেন্ট কিছুই শেখোনি, এমনকি কম্পিউটারও ভালো বোঝো না।’

জ্যাক মা অকপটে স্বীকার করেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় আমি গণিতে মাত্র ১ পেয়েছিলাম। তিনবার চেষ্টা করেও ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাইনি। শেষমেশ ভর্তি হই হ্যাংঝৌ নরমাল ইউনিভার্সিটিতে, যেটাকে তখন ‘চতুর্থ শ্রেণির’ বিশ্ববিদ্যালয় ধরা হতো। কিন্তু আজ আমি অনুভব করি হ্যাংঝৌ আমার কাছে হার্ভাডের চেয়েও বড়।’

তিনি মনে করেন, অনেক সময় যাদের প্রথাগত শিক্ষাগত যোগ্যতা কম, তাদের জন্যই উদ্যোক্তা হওয়া তুলনামূলক সহজ হয়।

জ্যাক মা বলেন, ‘আমরা যাদের বিশেষ কোনো ক্ষমতা বা প্রভাব ছিল না, তারাই একসঙ্গে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। আমাদের ১৮ জনের পুঁজি ছিল মোটে ৫ লাখ আরএমবি। পরিকল্পনা ছিল ১২ মাস টিকে থাকলে ব্যবসাটা চালিয়ে যাব, নইলে অন্য কিছু ভাবব। অষ্টম মাসেই সব টাকা শেষ হয়ে যায়।’

সিলিকন ভ্যালিতে গিয়ে ৩০ জন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে ‘না’ শুনেছিলেন তিনি ও তার সঙ্গী জো সাই। কিন্তু তারা বিশ্বাস হারাননি। ‘একটা পরিকল্পনা করাই বড় কথা না, বড় কথা হলো সেই পরিকল্পনার ওপর তোমার বিশ্বাস আছে কি না,’ বলেন তিনি।

জ্যাক মা বলেন, ‘তরুণদের স্বপ্ন থাকা জরুরি। অনেক বাবা-মা বলেন, তাদের সন্তানদের স্বপ্ন বারবার বদলে যায়। আমি বলি, এটাই স্বাভাবিক। অন্তত স্বপ্ন বদলাচ্ছে, এর মানে সে ভাবছে, খুঁজছে। স্বপ্ন না থাকাই বরং চিন্তার বিষয়।’

নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘আমি পুলিশ হতে চেয়েছিলাম, কেএফসিতেও আবেদন করেছিলাম। ২৪ জনের মধ্যে ২৩ জন চাকরি পেয়েছিল, পাইনি কেবল আমি।’

তার কথায়, ‘স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা হলো—একদল মানুষ একসঙ্গে কাজ করতে করতে বুঝে যায়, তাদের লক্ষ্য আসলে এক। আমাদের আলিবাবা শুরু হয়েছিল আশা নিয়ে, কল্পনা নয়। আমরা ১৮ জন শুধু ঠিক করেছিলাম, বিশ্বাসে অটল থাকব।’

শেষে তরুণদের উদ্দেশে তার বার্তা, ‘নিজেকে প্রশ্ন করো—তোমার যদি সত্যিই কোনো স্বপ্ন থাকে, তুমি কি তা পূরণে লড়াই করতে রাজি? তুমি কি আরও কিছু মানুষের হাত ধরে সেই যাত্রায় এগিয়ে যেতে প্রস্তুত? মনে রেখো, নিঃসঙ্গ লড়াই খুবই ক্লান্তিকর। একা কিছু করা যায় না, কিন্তু সঠিক দল পেলে সব সম্ভব।’

ডিএম /সীমা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top