আসন্ন বাজেটে পানি-স্যানিটেশন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি
প্রকাশিত:
১৯ মে ২০২৫ ১৬:১৬
আপডেট:
১৯ মে ২০২৫ ২০:৫৫

আসন্ন বাজেটে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি সব নাগরিকের জন্য বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক ওয়াশ সেবাও নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার (১৯ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। যৌথভাবে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ, পিপিআরসি, ওয়াটারএইড, এমএইচএম প্লাটফর্ম, ফানসা, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টেগ্রিটি নেটওয়ার্কের পক্ষে মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওরের পক্ষে খোন্দকার রেবেকা সান ইয়াত, ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যালায়েন্সের পক্ষে সুমাইয়া বিনতে আনোয়ার, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের পক্ষে হোসেন জিল্লু্র রহমান, ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি লিড ফাইয়াজউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
বক্তব্যে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, একটা দেশের নাগরিকদের পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) সেবার প্রাপ্তি একটি জন্মগত অধিকার। এই সেবাগুলো নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন টেকসই নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ সরকার ওয়াশ খাতে একাধিক নীতি ও কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ওয়াশ খাতে বরাদ্দে যে ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিল, তা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাহত হয় এবং ২২.৪৬ শতাংশ হ্রাস পায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৮২.২৮ বিলিয়ন টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১৩৯.৭২ বিলিয়ন টাকায় দাঁড়ায়। যদিও সংশোধিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ কিছুটা বেড়ে ৭.২২ শতাংশ বৃদ্ধিসহ ১৪৯.৮১ বিলিয়ন টাকা হয়, এরপর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা ২২.৪৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই ধারাবাহিক নিম্নগামী প্রবণতা এ দেশের নাগরিকদের নিরাপদ পানি এবং নিরাপদ স্যানিটেশন সেবার অধিকার নিশ্চিতকরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি লিড ফাইয়াজউদ্দিন আহমদ বলেন, বাজেটে পাহাড়ি, উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চলের জন্য বরাদ্দে কোনো ধারাবাহিকতা নেই। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপকূলীয় অঞ্চলের বরাদ্দ কিছুটা বৃদ্ধি পায় নতুন প্রকল্পের কারণে, তবে এসব এলাকার মধ্যে ন্যায্যতা এখনো নিশ্চিত হয়নি। এই ধারা সরকার ঘোষিত সব নাগরিকের জন্য নিরাপদ পানি ও নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশনের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যালায়েন্সের সুমাইয়া বিনতে আনোয়ার বলেন, ২৫টি মন্ত্রণালয় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড এবং এডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে ওয়াশ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও মাত্র ১৩টি মন্ত্রণালয় ওয়াশ খাতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে যেসব দাবি জানানো হয় সেগুলো হলো–
১. শহর-গ্রাম, মাধ্যমিক ছোট শহর ও দুর্গম অঞ্চলে বৈষম্যহীন ওয়াশ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। এডিপিতে ওয়াশ উপ-খাতগুলো (পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি) এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো (এফএসএম, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পগুলো) সঠিক অনুপাতে ও ন্যায্যভাবে বাড়াতে হবে।
২. অন্তর্ভুক্তিমূলক ওয়াশ বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে হবে যাতে তা নারীর অধিকার এবং প্রান্তিক ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য (চা শ্রমিক, বেদে, দলিত, হরিজন, জলদাস/জেলেরা প্রভৃতি) ন্যায্য বরাদ্দ নিশ্চিত করতে পারে।
৩. প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা বাড়াতে হবে যাতে সময়মতো বাজেট ব্যবহার নিশ্চিত হয় এবং সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ কমে যাওয়া কমানো যায়।
৪. ওয়াশ বাজেট বাড়ানো ও এডিপি বৃদ্ধির সম্প্রসারণের মধ্যে সামঞ্জস্য করতে হবে যাতে হুট করে ওয়াশ বাজেট ওঠানামা এড়ানো যায়।
৫. জলবায়ু অর্থায়নের আওতায় সব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে (মোট ২৫টি) ওয়াশ-কেন্দ্রিক প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ঝুঁকি অবহিতকরণ এবং জনগোষ্ঠীকে সংযুক্ত (আরসিসিই) করণ বিষয়ক মেথড যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে, যার মধ্যে জনগণের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ থাকবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: