ইনস্টাগ্রামে দিনে ১৪ ঘণ্টা, ডিজিটাল ভার্টিগোয় আক্রান্ত তরুণী
 প্রকাশিত: 
 ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০১:৪৬
 আপডেট:
 ৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:৪৮
                                আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করার অভ্যাস কম বেশি অনেকেরই আছে। স্মার্টফোনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার অনেকের কাছে নেশার মতোই। এই নেশা থেকে নানা সমস্যায় পড়ারও অভিজ্ঞতা আছে কারও কারও। এবার ২৯ বছর বয়সী একজন তরুণী ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার দাবি করেছেন, দিনে ১৪ ঘণ্টা করে মুঠোফোনে কাজ করতে করতে তিনি ‘ডিজিটাল ভার্টিগো’ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁকে চলাফেরার জন্য কিছুদিন হুইলচেয়ারের ওপর ভরসা করতে হয়েছে।
নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেনেলা ফক্স নামের ব্রিটিশ ওই তরুণীর সকাল থেকে রাতের অধিকাংশ সময়ই কাটত মুঠোফোন ব্যবহার করে। তিনি মূলত ইনস্টাগ্রামের নেশায় পড়ে গিয়েছিলেন। ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজারেরও বেশি।
২০২১ সালের শুরুর দিকে ফেনেলা মাথা এবং ঘাড়ের ব্যথা অনুভব করেন। এই ব্যথা ধীরে ধীরে তীব্র হতে থাকে। এর কিছুদিন পরেই তাঁর মাথা ঘোরানো ও বমি বমি ভাব শুরু হয়।
গত শুক্রবার মিররকে ফেনেলা ফক্স বলেছেন, ‘হঠাৎ বুঝতে পারি যে আমি সত্যিই ঠিকভাবে হাঁটতে পারছি না। অসুস্থ বোধ করছিলাম। মাথা ঘুরতে থাকে। বিষয়টি আমি বুঝতে পারছি ঠিকই, কিন্তু ব্যাখ্যা করাটা সহজ নয়।’
সে সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় এই তরুণী পর্তুগালে থাকতেন। তাঁর সমস্যার কথা শুনে হতবাক হয়ে পড়েন চিকিৎসকেরা। শুরু হওয়া লক্ষণগুলো প্রকট আকার ধারণ করলে তিনি পর্তুগাল থেকে যুক্তরাজ্যে মা–বাবার কাছে ফিরে যান। তিনি বলেন, বাসা থেকে তিনি বিমানবন্দরে ট্যাক্সিতে করে গিয়েছিলেন। কিন্তু ট্যাক্সি থেকে নামার পর তিনি আর হাঁটতে পারছিলেন না। এ সময় থেকে তিনি হুইলচেয়ার ব্যবহার শুরু করেন।
এর পর থেকে ফেনেলা শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। হাঁটাচলা করতে পারেন না। কোথাও যাওয়ার জন্য তাঁকে হুইলচেয়ারের ওপর নির্ভর করতে হয়। তিনি কিছুতেই বুঝতে পারেননি যে শুধু মুঠোফোন ব্যবহারের কারণেই তাঁর জীবন এতটা দুঃসহ হয়ে উঠবে।
ফেনেলা বলেন, ‘শয্যাশায়ী থাকার সময় ঘুম থেকে জেগে আবার না ঘুমানো পর্যন্ত আমি মুঠোফোন স্ক্রলিং করেছি। আমি বুঝতে পারিনি যে আমি নিজেই নিজের শরীরকে আরও অসুস্থ করে ফেলছি।’
যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকেরাও ফেনেলার এই অসুস্থতায় বিস্মিত হয়েছিলেন। তাঁরাও এর কারণ বুঝতে পারছিলেন না। পরে ফেনেলার বাবা ‘সাইবার সিকনেস’ ও ‘ডিজিটাল ভার্টিগো’ সম্পর্কিত কিছু নিবন্ধ খুঁজে পান। এসব পড়ার পরেই ফেনেলা ডিজিটাল আসক্তি ছেড়ে দিতে মুঠোফোন ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেন।
ইনস্টাগ্রাম ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে ফেনেলা মাসে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় করতেন। ‘আমি মুঠোফোনটি বন্ধ করে আলমারির পেছনে ফেলে দিয়েছিলাম। পরে সেটি মা–বাবাকে দিয়ে বলেছিলাম, আমি চাইলেও যেন এটি আমাকে না দেওয়া হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে আমি আবার হাঁটার শক্তি ফিরে পাই’—বলছিলেন ফেনেলা।
কোন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষায় ভার্টিগো রোগ শনাক্ত হয়েছে, তা প্রকাশ করেননি ফেনেলা। তবে কয়েকজন চিকিৎসক বলেছেন, কোনো স্ক্রিনে অতিরিক্ত সময় থাকলে এ ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
মার্কিন চিকিৎসক গিলিয়ান আইজ্যাক রাসেল বলেছেন, ‘যখন মস্তিস্ক বার্তা পায় যে আপনি দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে আছেন এবং হঠাৎ কোনো এক সময় নড়াচড়া করছেন, তখনই সাইবার সিকনেস ঘটে। এর কারণে ভিজ্যুয়াল ভেস্টিবুলার কনফ্লিক্টের সৃষ্টি হয়, যা মোশন সিকনেসের জন্য দায়ী।’
অকুপেশনাল থেরাপি বিষয়ে সহযোগী অধ্যাপক ও মার্কিন চিকিৎসক ক্রিশ্চিনা ফিন বলেন, ‘চোখ যখন কিছু অনুভব করে এবং একই সঙ্গে ভেতরের কান ও শরীর যখন কিছু শনাক্ত করে তখন (ভিজ্যুয়াল ভেস্টিবুলার কনফ্লিক্ট) একধরনের বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। এর কারণে সাইবারসিকনেস ভার্টিগোর প্রভাবকে অনুকরণ করতে পারে।’
তবে ফেনেলা ফক্সের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা ছিল, তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে অর্থ আয়ের একটা পথ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি ইনস্টাগ্রাম ছাড়াও এই মাধ্যম থেকে মাসে ১৬ লাখ টাকার বেশি (১৫ হাজার ডলার) আয় করতেন। ফেনেলা এখন আর খুব বেশি সময় মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। আবারও আগের মতো মুঠোফোন ব্যবহার করলে তাঁর আগের শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণগুলো দ্রুত ফিরে আসার আশঙ্কা আছে।
ফেনেলা বলেন, ‘এটা অবাস্তব। এটাই আমাদের জীবন, আমাদের পৃথিবী। আমরা যদি অর্থ উপার্জন করতে চাই, তাহলে আমাদের ঘুমানোর আগপর্যন্ত মুঠোফোন ব্যবহার করতে হবে। আর আমি তো এটা আর আগের মতো করতে পারছি না। আগের মতো মুঠোফোন ব্যবহার করলে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ব।’

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: