শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


রাগ মোকাবেলার ৬ টি স্বাস্থ্যকর উপায়


প্রকাশিত:
২৫ জুলাই ২০২৩ ১৯:২৭

আপডেট:
১৭ মে ২০২৪ ১২:২৭

প্রতিকী ছবি

রাগ মানুষের আদিম আবেগগুলির মধ্যে একটি এবং কিছু ক্ষেত্রে এটি বোঝা বেশ জটিল। ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ব্র্যাড বুশম্যান বলছেন, বেশিরভাগ লোকেরা যারা রাগান্বিত বোধ করেন তারা রাগ থেকে মুক্তি পেতে চান।

বুশম্যান রাগ থেকে উদ্ভূত মানুষের আগ্রাসন এবং সহিংসতার কারণ, পরিণতি এবং সমাধানগুলি নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন। তিনি জানাচ্ছেন, রাগকে ইতিবাচক শক্তিতে পরিণত করা যেতে পারে; যেমন- ক্রোধ অনেক সামাজিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলনকে উস্কে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ভাগ্যবশত আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই জানেন না কীভাবে স্বাস্থ্যকর উপায়ে রাগ মোকাবেলা করতে হয়। বুশম্যানের মতে, "রাগ এমন একটি বিষয় যা আমাদের মনে সহজে আসে না। আসলে এটি নেতিবাচক আবেগ যা নিয়ন্ত্রণ করতে মানুষের সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হয়।''

রাগ অসংখ্য সামাজিক সমস্যাকে চালিত করে, বুশম্যান বলেছেন: গার্হস্থ্য সহিংসতা, খুন সহ আক্রমণাত্মক এবং হিংসাত্মক আচরণের জন্য এটি সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে একটি। এছাড়াও, রাগ স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। যার মধ্যে প্রদাহ বৃদ্ধি এবং দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা ,হজম সমস্যা, বিষণ্নতা এবং উদ্বেগ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। রাগ রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন উভয়ই বাড়িয়ে দেয়।

গবেষণা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, রাগ অনুভব করার দুই ঘন্টার মধ্যে একজন ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রায় পাঁচগুণ বেড়ে যায়। বুশম্যান এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা রাগের সাথে মোকাবিলা করার স্বাস্থ্যকর উপায়গুলি জানিয়েছেন।

১) রাগ বাড়লে শরীরকে শিথিল করার চেষ্টা করুন

বুশম্যান বলছেন, রাগ অনেকটা প্রেসার কুকারে বাষ্প জমে যাওয়ার মতো। বিস্ফোরণ এড়াতে, আপনার সেই বাষ্পের কিছু অংশ উড়িয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু এটি করা বেশ কঠিন। গবেষক ব্যাখ্যা করেছেন- ''আসলে আমরা যখন রাগান্বিত হই, আমরা অত্যন্ত উত্তেজিত থাকি। রাগের সময় আপনি চিৎকার করেন, জিনিসে লাথি মারেন, নিজেকে আঘাত করেন যাই হোক না কেন এটি উত্তেজনার মাত্রাকে উচ্চ রাখে। এটি আগুন নেভানোর জন্য অনেকটা পেট্রোল ব্যবহার করার মতো। পরিবর্তে আপনার সেই উত্তেজনার মাত্রা কমানো উচিত। প্রায়শই, লোকেরা ধরে নেয় যে তারা যখন রাগান্বিত হয় তখন দৌড়ে যাওয়া বা অনুশীলন করা একটি ভাল ধারণা, কিন্তু চিৎকারের মতো এটি উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে। বুশম্যান গভীর শ্বাস, ধ্যান, যোগব্যায়াম বা পেশী শিথিলকরণ অনুশীলন করে রাগ কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।

২) নিজের জন্য সময় বের করুন

টনি ফিওর কয়েক দশক ধরে রাগ কমানোর উপায় শেখাচ্ছেন। তিনি তার ক্লায়েন্টদেরকে প্রথম যে টিপস দেন তার মধ্যে একটি: রাগ হলে একে অপরের থেকে দূরে থাকুন ।আপনি যদি কাউকে চলে যেতে বাধা দেন, তবে তারা বন্য প্রাণীর মতো হয়ে উঠতে পারে। মনোবিজ্ঞানী ফিওর জানাচ্ছেন, "কখনও কখনও রাগ হলে ১০ মিনিট বা এক ঘন্টার জন্য দূরে গেলে আপনি যখন ফিরে আসবেন তখন দেখবেন পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে বদলে গেছে। রাগ হওয়ার সময় অন্ধভাবে প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে আপনি কীভাবে শান্তভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে চান তা নির্ধারণ করতে কিছুটা বিরতি নিন।

৩) ৩০-৩০-৩০ ইন্টারভেনশন

ন্যাশনাল অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের তত্ত্বাবধায়ক লরা বেথ মস বলেছেন, যখন আপনি রেগে থাকেন তখন সামনে এগোবেন না পিছোবেন তা বিবেচনা করা কঠিন হতে পারে। সেইসময়ে আপনি এই বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। লরা জানাচ্ছেন প্রথমে, পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বের করতে ৩০ সেকেন্ড সময় দিন। সেইসময়ে আপনি ঘরের বাইরে চলে যেতে পারেন। তারপরে, অন্য কিছু করতে ৩০ সেকেন্ড ব্যয় করুন, যেমন শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা আপনি রাতের খাবারের মেনুতে কি বানাবেন তা পরিকল্পনা করুন; এরপর চূড়ান্ত ৩০ সেকেন্ড ব্যবহার করুন আপনার আবেগ কমাতে। আপনি পরিস্থিতি পছন্দ নাও করতে পারেন, তবে সঠিক দৃষ্টিকোণ সহ, আপনি এটি সহ্য করতে সক্ষম হবেন।

৪) কখন রাগছেন লিখে রাখুন

এটি একটি সহজ কিন্তু কার্যকর উপায়। লরা তাঁর ক্লায়েন্টদের প্রতি সপ্তাহে রাগের পরিস্থিতি ট্র্যাক করার নির্দেশ দেন- যার অর্থ কী ঘটেছিল এবং কখন, কীভাবে তাঁরা রাগ অনুভব করেছিল এবং প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল তা লিখে রাখার পরামর্শ দেন। লরা বলছেন, "আমাদের জীবনে রাগ কীভাবে কাজ করে তা দেখার জন্য এটি একটি সুযোগ- এটি উদ্দীপক পরিস্থিতি সম্পর্কে চিন্তা করার এবং প্রতিক্রিয়া জানানোর উপায়গুলিকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারে।

৫) দৃঢ় যোগাযোগ গড়ে তুলুন

রাগ প্রকাশ করার স্বাস্থ্যকর উপায়গুলির মধ্যে একটি হল দৃঢ় যোগাযোগ গড়ে তোলা। নিউ ইয়র্ক এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুশীলনকারী লাইসেন্সপ্রাপ্ত থেরাপিস্ট জুলিয়া বাউম বলেছেন, এর অর্থ নিজের এবং আপনি যার সাথে কথা বলছেন তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। কথোপকথনের সময়ে যত্নশীল হওয়ার চেষ্টা করুন। এর অর্থ আপনি হেরে যাচ্ছেন না, আপনার অনুভূতি বা চিন্তাভাবনাও হ্রাস করছেন না।

বরং অন্য ব্যক্তিকে আপনার চেয়ে এগিয়ে রাখছেন। দৃঢ় যোগাযোগের লক্ষ্য হলো আপনার অনুভূতিগুলি ভাগ করে নেওয়া, অন্য ব্যক্তিকে ব্যাখ্যা করা যে আপনি কেন এমন অনুভব করছেন এবং তাদের থেকে কি আশা করছেন। পাশাপাশি যাদের সাথে কথা বলছেন তাদের জিজ্ঞাসা করুন যে, তারা আপনার সাথে কথা বলতে বিরক্ত বোধ করছেন কি না। কথোপকথনের সময়টি সাবধানতার সাথে বিবেচনা করাও গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি ভিতরে প্রবল রেগে থাকেন তবে যোগাযোগের মাধ্যমে সেই রাগ কমাতে আপনি সক্ষম হবেন না। যতক্ষণ না আপনি মনে করেন সামনের ব্যক্তিটির সাথে স্পষ্টভাবে এবং সম্মানের সাথে কথা বলতে পারছেন ততক্ষণ কথা বলা বন্ধ রাখুন।

৬) বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিন

কখনও কখনও আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষজ্ঞের সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। আপনার শরীরে যদি প্রবল রাগ থাকে তবে, নিজেকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা কঠিন হতে পারে। নিজেকে এই প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করুন: আপনি কি ঘন ঘন এবং ঘন্টার পর ঘন্টা রেগে থাকেন ? আপনি যে ক্রোধ অনুভব করেন তা কি পরিস্থিতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ? আপনি কি রাগের সময়ে দেয়ালে ঘুষি মারেন ?রাগ-কমানোর কার্যক্রমগুলো- যা সাধারণত কমপক্ষে আট সপ্তাহ স্থায়ী হয়-লোকদের কীভাবে তাদের আবেগগুলিকে স্বাস্থ্যকর উপায়ে মোকাবেলা করতে হয় তা শেখানোর পরামর্শ দেয়।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top