শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


* হুমকিতে পড়ছে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য * উপেক্ষিত নীতিমালা * সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ই-বর্জ্য 


প্রকাশিত:
৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৫৭

আপডেট:
৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৫৮

দেশে দিনদিন বাড়ছে ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পন্যের ব্যবহার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব সরঞ্জাম অকেজো হয়ে পড়ছে। পরবর্তীতে এগুলোই রূপান্তরিত হচ্ছে ই-বর্জ্যে (ইলেকট্রনিক বর্জ্য)। সমস্যা হলো, এসব পণ্যের পরিবেশসম্মত ও আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা নেই। ফলে সেগুলোর স্থান হয় ময়লার ভাগাড় বা ডাস্টবিনে। এদিকে ই বর্জ্য নিয়ে নীতিমালা থাকলেও তা বরাবরই উপেক্ষিত রয়ে গেছে। 
 
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের মধ্যে সিসা, সিলিকন, টিন, ক্যাডমিয়াম, পারদ, দস্তা, ক্রোমিয়াম, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি রাসায়নিক থাকে। এসব রাসায়নিক দেশের মাটি ও পানিকে দূষিত করছে। নানাভাবে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নানা রোগের ঝুঁকি তৈরি করছে। বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও শিশুদের ঝুঁকি বেশি।
 
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ইফফাত আরা শামসাদ বলেন, ই-বর্জ্যের কারণে অপরিণত শিশুর জন্ম নেয়া, শিশুর ওজন কম হওয়া, এমনকি মৃত শিশুর জন্ম দেয়ার ঘটনাও ঘটে। ই-বর্জ্যরে সিসা নবজাতকের স্নায়ুতন্ত্রে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। এছাড়াও মানুষের ফুসফুস, শ্বাসতন্ত্র, থাইরয়েড জটিলতা, ক্যানসার এবং হৃদরোগের মতো বড় রোগের সৃষ্টি করে। 
 
পরিসংখ্যানে জানা যায়, প্রতি বছর দেশে সৃষ্টি হচ্ছে ৩০ লাখ টন ই-বর্জ্য। এর মধ্যে কেবল মুঠোফোন থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ টন ই-বর্জ্য। অন্তত ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩০২ ইউনিট নষ্ট টেলিভিশন থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ১ দশমিক ৭ লাখ টনের মতো ই-বর্জ্য। জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে আসছে ২৫ লাখ টনের বেশি। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এ বর্জ্য বাড়ছে ৩০ শতাংশ হারে। সে হিসাবে আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ কোটি টনের ই-বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হবে বাংলাদেশ। কেননা, ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে বিলিয়ন ইউনিট মোবাইল উৎপাদন হবে এবং কম্পিউটার পিসিবি ভিত্তিক ধাতু পুনরুদ্ধার ব্যবসায় সম্প্রসারিত হবে, যা ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ মানবিক সংকট। ই-বর্জ্য ব্যক্তির স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে। 
 
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ঢাকা বিভাগ) মনজুর  মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বর্তমানে আমাদের গ্রামেগঞ্জে সিসা ছড়িয়ে পড়ছে। সেটা তৈরি হচ্ছে ব্যাটারি থেকে। ই-বর্জ্যরে কারণে আমাদের জাতিগত স্বাস্থ্যঝুঁকি হুমকির মধ্যে পড়েছে। এখন শহরের পাশাপাশি গ্রামে প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। আমাদের দেশের প্রতিটি গ্রামে ব্যাটারিচালিত গাড়ি। এ গাড়িগুলো যে ব্যাটারিতে চলে সেগুলো কিন্তু নষ্ট হওয়ার পর কী করতে হবে সেটা কিন্তু তারা জানেই না। তারা যেখানে- সেখানে ফেলে দেয়। গ্রামে গঞ্জে এসব ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামের জমিতে এ সিসা যাচ্ছে গাড়ির ব্যাটারি থেকে। তাই বলা যায়, ই-বর্জ্যরে ভয়াবহতা সবখানে ছড়িয়ে যাচ্ছে। দিন দিন ই-বর্জ্য অনেক বাড়ছে। যারা আমাদের দেশে এগুলো উৎপাদন করছে তাদের একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে। এ পণ্যগুলোর দামের সঙ্গে যদি আমরা কীভাবে ই-বর্জ্য থেকে সমাধান করা যায় সে খরচটা রাখতে হবে। ই-বর্জ্যরে ক্ষতি নিয়ে আমাদের আরো প্রচার করতে হবে। তাহলে কিছুটা হলেও এর সমাধান হবে। 
 
ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১-এর সেকশন ১৫ তে বলা হয়েছে, কোনো পুরাতন বা ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিকস পণ্য আমদামি করা বা দান, অনুদান অন্য  কোনোভাবে গ্রহণ করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে এর উল্টো। কম দামে পণ্য কিনে দেশের সর্বত্র বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। 
 
এ প্রসঙ্গে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আক্তার হোসেন বলেন, দেশের ব্যবহৃত আইটি ও ইলেকট্রনিকস পণ্যের অবাধ আমদানি এবং তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় ডাম্পিং না করায় ই-বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। যথাযথ ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় দূষিত করছে পানি, বায়ু এবং মাটি। বাড়াচ্ছে পরিবেশের তাপমাত্রা এবং বিনষ্ট করছে জমির উর্বরতাও। এই বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এখনই দেশের ‘ই-বর্জ্য’ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে আগামীর বাংলাদেশ।  

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top