সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


পি কে হালদারের বান্ধবী রুনাই এর কোটিপতি হওয়ার গল্প


প্রকাশিত:
১৭ মার্চ ২০২১ ২০:০৭

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০০:৪৪

পি কে হালদার ও তার বান্ধবী রুনাই। ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের খুলশী থানার পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকায় সাধারণ পরিবারের মেয়ে নাহিদা রুনাই। তার বাবা মফিজুর রহমান চট্টগ্রামে একটি সরকারি দপ্তরে ‘করণিক’ পদে চাকরি করতেন। ২০১২ সালে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় এসেছিলেন রুনাই। শুরুটা অফিস এক্সিকিউটিভ থেকে। ঢাকায় এসে মাত্র পাঁচ বছরেই শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যান এই নারী। হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে কানাডা পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার হচ্ছেন নাহিদা রুনাইয়ের ‘আলাদীনের চেরাগ’।

নাহিদা রুনাই শুরুতে অফিস এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগদান করেন প্রশান্ত কুমার ওরফে পি কে হালদারের প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ফিন্যান্স লিমিটেডে। এর পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা যতই বাড়তে থাকে ততই সম্পদশালী হতে থাকেন রুনাই। এক সময় এমডি পিকে হালদারের বান্ধবী হয়ে যান তিনি। কপাল খুলে যায় তার। কোটি কোটি টাকা মালিক বনে যান রাতারাতি।

নাহিদা রুনাইয়ের প্রায় ২৮ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান দল। এছাড়া তার ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে দুদক।

দুদক সূত্র জানায়, পি কে হালদারের অর্থ পাচারের বিষয়গুলো দেখভাল করতেন নাহিদা। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারের ওপর মহলকে ম্যানেজ করতেন তিনি। আর এসব কাজের পুরস্কার হিসেবে নাহিদাকে শূন্য থেকে কোটিপতি বানিয়েছেন পি কে হালদার। এসএমই পলান শাখার অফিস এক্সিকিউটিভ থেকে এক সময় পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠজনদের কাছে ‘বড় আপা’ হিসেবে পরিচিতি পান রুনাই। রিলায়েন্স ফিন্যান্স থেকে নাহিদাকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে নিয়ে আসেন পি কে হালদার। দ্রুততম সময়ে চারটি পদোন্নতি দিয়ে তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করেন।

পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নাহিদা রুনাই ছাড়াও পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ আরেকজন বান্ধবী ছিলেন অবন্তিকা বড়াল। দুই বান্ধবী নাহিদা রুনাই ও অবন্তিকা বড়ালকে নিয়ে অন্তত ২০-২৫ বার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন পি কে হালদার। এই দু’জনের সঙ্গে তিনি পৃথকভাবে ২০ থেকে ২৫ বার সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে রুনাই ও অবন্তিকার সঙ্গে পি কে হালদারকে আলাদাভাবে সময় কাটাতে দেখা যায়।

দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, নাহিদা রুনাই আনান কেমিকেল লিমিটেড নামে একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র তৈরি করে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ৭০ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। এ ঘটনায় জানুয়ারি মাসে দায়ের করা একটি মামলায় নাহিদাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এছাড়া নাহিদার বিরুদ্ধে পি কে হালদার সংশ্লিষ্ট আরও ১০ টি মামলার অনুমোদন রয়েছে। এসব মামলায়ও তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে।

মঙ্গলবার পি কে হালদারের আলোচিত এই বান্ধবী নাহিদা রুনাইকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি পি কে হালদারের আরেক বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেফতার করা হয়। এ দুজনের জবানবন্দিতে অর্থ আত্মসাতের এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

প্রসঙ্গত গত বছরের জানুয়ারিতে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক। সেই মামলার তদন্তে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের তথ্য পেয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা। মামলা দায়েরের আগেই পি কে হালদার পালিয়ে কানাডা চলে যান। পালিয়ে যাওয়ার আগে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন তিনি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top