মনে রাখুন টাকা জমানোর কয়েকটি টিপস
প্রকাশিত:
৯ আগস্ট ২০২৫ ১২:৪০
আপডেট:
৯ আগস্ট ২০২৫ ১৬:৩০

আপনি টাকা উপার্জন করছেন, কিন্তু কোনোভাবেই সঞ্চয় করা হচ্ছে না। বেতন পাচ্ছেন, অনিয়ন্ত্রিত খরচ করে মাস শেষ হওয়ার আগেই হাত খালি। ভবিষ্যৎ সঞ্চয় হচ্ছে না। ফলে বিশেষ প্রয়োজনে আর্থিক জোগানও হয়ে পড়েছে অনিরাপদ। এ অবস্থা বিপজ্জনক। চাকরির বেতন যা-ই হোক, সেখান থেকে একটা অংশ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা আপনার খুবই জরুরি। পরিকল্পনামাফিক খরচ করে আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। আর পরিকল্পনা থাকলে সেটি করা খুব সহজ হয়।
আপনি বেতনের কতটা সঞ্চয় করবেন, তা নির্ধারণ করা খুব একটা সহজ হবে না। ব্যাপারটা চট করে বলা যাবে না। কারণ এটি নির্ভর করবে আপনি মাসিক কত টাকা বেতন পান কিংবা কত টাকা আয় করেন, তার ওপর। আর জীবনযাত্রা ও জরুরি খাতে কতটা ব্যয় হতে পারে, তার ওপর নির্ভর করে।
আপনি একটা গাণিতিক হিসাবে মাসিক বেতনের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। যেভাবে অন্যরা সঞ্চয় করে থাকেন। এই যেমন আপনার বেতনটাকে তিন ভাগে ভাগ করুন। ৫০/৩০/২০ নিয়ম অনুসরণ করুন। যেখানে আয়ের ৫০ শতাংশ আপনার প্রয়োজনের জন্য, ৩০ শতাংশ বিশেষ চাহিদার জন্য এবং ২০ শতাংশ সঞ্চয় ও বিনিয়োগের জন্য আলাদা করুন।
যদি আপনার টাকা সঞ্চয় করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে পরিকল্পনামাফিক বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে—
আপনি কোন কারণে টাকা সঞ্চয় করতে চাইছেন, সেটি আগে পরিষ্কার করুন। স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যের জন্য বেতনের একটি বড় অংশ দ্রুত সঞ্চয় করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যপূরণে ছোট ছোট অঙ্কের টাকা জমালেও ক্ষতি নেই।
আর জীবনযাত্রার ব্যয়ে আপনার আয়ের কত অংশ সঞ্চয়ের জন্য বেছে নেবেন, তা বোঝার জন্য ব্যয় মূল্যায়ন করুন। প্রথম মাসে জীবনযাত্রায় মাসিক খরচ কত, তা লিখে রাখুন। তাহলে দ্বিতীয় মাস থেকে সঞ্চয় শুরু করা সহজ হবে।
মনে রাখবেন, আপনার বিপদ যে কোনো সময় আসতে পারে। তাই হঠাৎ চিকিৎসা, আপ্যায়ন কিংবা অন্যান্য বড় কোনো খাতে যদি টাকার প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটি কীভাবে ব্যবস্থাপনা করবেন, তা আপনার মাথায় রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের টাকার বাইরে এসব খাতে খরচ করার জন্য একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা রাখতে হবে।
বেতন থেকে টাকা সঞ্চয়ের ৬টি উপায় আছে—
মাসিক বেতন থেকে টাকা সঞ্চয় করা কখনো কখনো চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে যখন আপনি তাৎক্ষণিক ব্যয় করাকে অগ্রাধিকার দেবেন। তবে সঠিক কৌশল অবলম্বন করলে, আপনি দক্ষতার সঙ্গে কোন খাতে কত ব্যয় করছেন, তা নির্ধারণ করতে পারবেন। সে অনুযায়ী নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা সঞ্চয়ও করতে পারবেন। প্রতি মাসেই সঞ্চয় করতে চাইলে ছয়টি উপায় আপনাকে মেনে চলতেই হবে।
১. প্রতি মাসের বাজেট তৈরি করুন
আপনি প্রতি মাসের একটি নির্দিষ্ট বাজেট তৈরি করুন। কারণ আপনার অনিয়ন্ত্রিত খরচ মাস শেষ হওয়ার আগেই আপনাকে ঋণ করতে বাধ্য করছে। তাই আপনি প্রতি মাসে নির্দিষ্ট বাজেট তৈরি করা মানে সঠিক আর্থিক ব্যবস্থাপনার ভিত্তি স্থাপন করা। সেই সঙ্গে আপনার আয়ের সব উৎস এবং মাসিক ব্যয় তালিকাভুক্ত করুন। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়ার মতো নির্দিষ্ট ব্যয় এবং বাইরে খাওয়ার মতো পরিবর্তনশীল খরচও অন্তর্ভুক্ত করুন। এটি আপনাকে টাকা খরচের খাতগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে। যেগুলো থেকে অনায়াসে খরচ কমাতে পারবেন এবং প্রতি মাসে বাস্তবসম্মতভাবে কিছুটা সঞ্চয় করতে পারবেন।
২. নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রথম মাস থেকেই জমানো শুরু করুন
একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রথম মাস থেকেই জমানো শুরু করুন। এরপর চোখ বন্ধ করে বাকি টাকা থেকে দৈনন্দিন খরচ করতে থাকুন। ধরুন প্রতি মাসে আপনি দুই হাজার টাকা জমাবেন। এবার এ পরিমাণ টাকা জমানো অব্যাহত রাখুন। বছরের শেষে গিয়ে ঠিকই একটা বড় অঙ্কের টাকা আপনার হাতে চলে আসবে, যা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ সেরে ফেলতে পারবেন।
৩. কখন কোথায় ব্যয় হচ্ছে, তা লিখে রাখুন
আপনার অর্জিত আয় প্রতিদিন কোন কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে, তা লিখে রাখুন। এ অভ্যাস অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে আপনাকে সাহায্য করবে।
৪. মাসিক বিল কমান
আপনি মাসিক বিল কমানোর চেষ্টা করুন। যে খাতেই হোক— গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, ইন্টারনেট, সেলফোনসহ সব ধরনের বিল যেন কমে আসে, সেভাবে জীবনযাপন শুরু করুন। শক্তি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার তো করবেনই, শক্তির অপচয় যেন না হয়, সেদিকে পরিবারের সবাইকে সতর্ক ও সচেতন করুন।
৫. ঘরে রান্না করুন, ঘরেই খান
আপনি ঘরে রান্না করুন, ঘরেই খান। বাইরের খাবার অভ্যাস ত্যাগ করুন। কারণ বাইরের খাবার ডেলিভারি সার্ভিস অ্যাপ থাকায় সুযোগ পেলেই বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় ছুটে যান, তা ত্যাগ করুন। কারণ বাইরের খাবার না খেয়ে কিংবা বাইরে থেকে খাবার না আনিয়ে ঘরে রান্না করলে খরচ অনেকটাই কমে যাবে। সারা দিন বাইরে কাজ করে এসে যাদের রান্না করতে ভালো লাগে না, তারা সাপ্তাহিক খাবারের পরিকল্পনা করুন। তারপর সেই পরিকল্পনা অনুসারে তালিকা তৈরি করে কেনাকাটা করুন এবং বেশ কয়েক দিন খাওয়া যাবে এমন পরিমাণে খাবার রান্না করে ফ্রিজে রাখুন। এতে কেবল টাকাই বাঁচবে না, স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।
৬. গণপরিবহণ ব্যবহার করুন
উবার কিংবা পাঠাওয়ে যাতায়াত করার চেয়ে গণপরিবহণ ব্যবহার করুন। কারণ বাইক কিংবা সিএনজি সার্ভিস নেওয়ার পরিবর্তে গণপরিবহণ ব্যবহার করলে মাসের খরচ অনেকটাই সাশ্রয়ী হবেন। এক মাস যাতায়াত করে দেখুন। যাতায়াত খাত থেকে অনেক টাকা বেঁচে যাবে। তবে হ্যাঁ, সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে চাইলে হয়তো সময় হাতে নিয়েই বাড়ি থেকে বের হতে হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: