কড়াইল বস্তিতে কেন বারবার আগুন?
প্রকাশিত:
২৬ নভেম্বর ২০২৫ ২১:২৭
আপডেট:
২৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৫:০৮
ভূমিকম্পের ট্রমা এখন কাটেনি রাজধানীবাসীর। এরইমধ্যে ঢাকার সবচেয়ে বড় ঘনবসতিপূর্ণ কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটল। মহাখালী-গুলশানের আকাশচুম্বী অট্টালিকা আর কড়াইলের টিনের চালের জরাজীর্ণ খুপড়ি ঘরের মাঝখানে ব্যবধান শুধু একটি লেকের। তবে সামান্য দূরত্বের আড়ালে লুকিয়ে জীবন-মানের আসমান-জমিন পার্থক্য। ক্ষমতার অশুভ আঁতাত ও বেঁচে থাকার স্বপ্ন বেচা মানুষগুলোর বারবার জ্বলে-পুড়ে নিঃস্ব হওয়ার আখ্যান।
কড়াই বস্তির আগুন যেন এক অনাহূত পুরোনো অতিথি, অপ্রত্যাশিত স্বত্ত্বেও ঘুরে ফিরে আসে, রেখে যায় ছাই, কান্না আর ক্ষত। সংগতকারণে কড়াইল বস্তির নিম্ন-আয়ের মানুষের হৃদয়ে আটকে থাকা আতঙ্কের নাম আগুন।
সচেতন নাগরিক মহল বলছেন, যে শহরে একদিকে কাঁচের আড়ম্বর, আরেকদিকে মানুষ টিন-কার্ডবোর্ডে ঘনবসতিতে জীবন সাজায়, সেই শহরের আগুন শুধু ঘর পোড়ায় না! পোড়ায় সমতার স্বপ্ন, নিরাপত্তার অধিকার, আর বেঁচে থাকার ন্যূনতম নিশ্চয়তাটুকুও।
কিন্তু কেন এই কড়াইল বস্তিতে বারবার আগুন লাগে? কারণ কী? কে বা কারা দায়ী? আগুনের খবর পেয়েও কেন ফায়ার সার্ভিস বার বার আটকে যায় পথে? আগুনের নেপথ্যে কারও কোনো গোপন উদ্দেশ্যও কি অমূলক? সরকারেরই বা কী উদ্যোগ? সব প্রশ্নের উত্তর মেলে না কখনোই। মোটাদাগে কারণগুলো উঠে আসে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের তদন্তে। কিন্তু তাতে আগুন লাগা বন্ধ হয়নি, নিঃস্ব হওয়া বাসিন্দারা কোমর সোজা করে দাঁড়াতেই আবারো নিঃস্ব হওয়ার করুণ পরিণতিও শেষ হচ্ছে না।
মহাখালী-বনানী-গুলশানের মতো বাণিজ্যিক-অভিজাত এলাকার মাঝখানেই প্রায় ৯০ একর এলাকা জুড়ে ঘনবসতিপূর্ণ এক বস্তি কড়াইল। প্রায় লাখ খানেক মানুষের বসবাস এই বস্তিতে। এখানকার বাসিন্দাদের জীবিকা দিনমজুরি, ড্রাইভিং, ভাঙ্গারি ব্যবসা, গার্মেন্টস, রিকশা, ছোট ব্যবসা, ডে-লেবার, হকারি। কর্মজীবী নারী বাসিন্দাদের অধিকাংশরাই ছোট দোকানি, গার্মেন্টস ও বাসা-বাড়িতে কাজ করেন।
যেখানে আধুনিক নগর পরিকল্পনায় একজন মানুষের ন্যূনতম থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত প্রধান প্রায়োরিটি, সেখানে কড়াইল বস্তিতে গড়ে প্রতি ৪০-৫০ বর্গফুটে একজন মানুষ বসবাস শুধু মানবিক সংকটই নয়, অগ্নিকাণ্ডের জন্যও যেন প্রস্তুত বারুদভাণ্ডারের ন্যায়।
তারই যেন প্রমাণ দিতে হয় প্রতিবছর আগুনে। কখনো কখনো বছরের ২/৩ বারও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে কড়াইল বস্তিতে।
সবশেষ মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের খবর জানায় ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে খবর পেয়ে মোট ১৯টি ইউনিট কাজ করে। রাত সাড়ে ১০টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরদিন বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ সম্ভব হয়।
কড়াইল বস্তির মূল বউবাজার এলাকার বাসিন্দা আব্বাস আলী জানান, বউবাজারের কুমিল্লা পট্টি, বরিশাল পট্টি ও ক- ব্লক এলাকায় আগুনের সূত্রপাত। ওই অংশে হাজারখানেক ঘর ছিল। আগুন লাগার পর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নির্বাপনে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এবং বাসিন্দারা বলছেন অন্তত ১২০০ ঘর পুড়ে গেছে।
আজ (২৬ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, কড়াইল বস্তির অধিকাংশ ঘরই জোড়াতালি দেওয়া। টিন, বাঁশ, প্লাস্টিক, কাঠ, কার্ডবোর্ডে তৈরি ঘর। যেসব মূলত আগুনের বা অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড দাহ্য সব উপকরণ। যা আগুনকে থামতে না দিয়ে হাত ধরে দৌড়ানোর সুযোগ করে দেয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, টিনশেড ঘরকেই কোথাও কোথায় দ্বিতল, তিনতলায় রূপ দেওয়া হয়েছে। কোথাও ৫/৭টা বড় ঘর মিলে একটি করে ওয়াশ রুম ও রান্নাঘর। যেখানে পালা করে নিত্যদিন সেরে নিতে হয় গোসল, বাথরুম ও রান্নার কাজ। তবে বস্তিতে এমন কিছু নেই যা এখানে মেলে না। কী বৈধ আর কী অবৈধ। যেন টাকা হলে সবই মেলে বস্তিটিতে। তবে বার বার আগুনের কারণে গেল বছর বস্তিতে গ্যাসের লাইন সরকারিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বস্তির বাসিন্দাদের।
কেন বারবার আগুন কড়াইল বস্তিতে? এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে জানতে চাওয়া হয়, ক্ষতিগ্রস্তসহ বস্তি বাসিন্দাদের কাছে। এরমধ্যে উঠে আসে অন্তত আটটি কারণ। তারমধ্যে অন্যতম, প্রথমত : অস্থায়ী, ঘন, দাহ্য গঠনের অবকাঠামো। বস্তির রাস্তা প্রায় মানুষের কাঁধের চেয়েও সরু। ঘরগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব এতটাই কম যে কোথাও কোথাও দেয়ালই যেন দেয়ালের সঙ্গে মিশে আছে। আগুন লাগলে বাতাস তাকে পাখির ডানার মতো ছড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত : অনুমোদনহীন বিদ্যুৎ সংযোগ। এখানে বেশির ভাগ বিদ্যুৎ লাইনই অবৈধ ও ঝুলন্ত তারবিশিষ্ট। সরবরাহের তুলনায় অতিরিক্ত লোড-শর্টসার্কিটের মতো সম্ভাব্যতাকে অবস্যম্ভাবী করে তুলেছে। তৃতীয়ত : বস্তির প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়িতেই গ্যাস সিলিন্ডার। নিরাপত্তা মানহীন সিলিন্ডার, রেগুলেটর লিক, চুলার গ্যাস জমে থাকা— এগুলো নিয়মিত বিস্ফোরণের সূত্র।
চতুর্থত : লেক ঘেঁষে ৯০ একর এলাকা জুড়ে গড়ে উঠা বস্তিটিতে সহজপ্রাপ্য পানির উৎস নেই। তারমধ্যে সরুর রাস্তার কারণে ফায়ার সার্ভিসসহ জরুরি সেবার গাড়িও ঢুকতে বেগ পেতে হয়। প্রতিবারই আগুন নির্বাপণের পর ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়- “আগুন নেভাতে সবচেয়ে বড় সমস্যা—পানি আর ঢুকতে না পারা।”
পঞ্চমত : আগুনের পর বড় ফায়ার ট্রাক ঢুকতে পারে না। পানি সরবরাহের হোস পাইপও অনেক সময় ফেটে যায়। সংকীর্ণ গলি, ভাঙাচোরা পথ সব মিলিয়ে ফায়ার সার্ভিসের জন্য কড়াইল বস্তির আগুন মানে দুঃস্বপ্ন। ষষ্ঠ কারণের অন্যতম হচ্ছে- বস্তিতে দখলদারিত্ব ও রাজনৈতিক প্রভাব-বিস্তার। বস্তির জমি সরকারি হলেও বছর বছর এ নিয়ে নানা সংঘর্ষ, স্বার্থ, উচ্ছেদ, পাল্টা-উচ্ছেদের ঘটনা যেন হরহামেশা। অনেকগুলো কারণের মধ্যে ভুক্তভোগীদের দাবি ও জোর সন্দেহে- ‘কারও না কারও লাভ হয় আগুনে’।
সপ্তমত : সরকারি তদারকি নেই বসতিপূর্ণ বস্তিতে। একেক সময় একেক পরিকল্পনার কথা শোনো গেলেও আদতে বস্তির বসতি ও ঘনত্ব বেড়েছে, সেবা বা জীবন মান বাড়েনি। নিরাপত্তায় সাবস্টেশন হয়নি, ড্রেনেজ পরিকল্পনা নেই, নেই ফায়ার হাইড্রেন্টও।
ফায়ার সার্ভিসের পর্যবেক্ষক দল ও বাসিন্দাদের মতে আগুনের ভয়াবহতা কিংবা আগুনের উৎপত্তির শুরুতেই ডিটেক্ট করতে না পারাও অন্যতম কারণ। তাছাড়া দিনের বেলায় ফাঁকা আর রাত্রিকালীন ঘন ভিড়। রান্নার বেশিরভাগ আগুন লাগে সন্ধ্যা বা রাতে— যখন রান্নার সময়, বিদ্যুতের চাপ বেশি।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে কড়াইল বস্তিতে সম্ভাব্য কারণ ৩টি- ১. বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট, ২. গ্যাস সিলিন্ডার ফাটল ৩. অসাবধানতাজনিত আগুন। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এটাও বলছেন, ‘ঘনবসতিতে আগুন স্বাভাবিকের চেয়েও দ্রুত ছড়ায়। প্রতিকার না করা হলে এটা আবারও ঘটবে। আগুনের উৎপত্তির প্রয়োজনীয় প্রমাণ পাওয়া কঠিন, কারণ ঘরগুলো সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
ভুক্তভোগী কড়াইলবাসীর কণ্ঠে জীবনের নীরব আর্তি
কড়াইল বস্তিতে লাগা আগুনে সব হারানো মানুষদের সাক্ষ্য যেন অভিন্ন। শুধু পার্থক্য আজ বস্তির উত্তর তো কদিন বাদেই দক্ষিণে আগুন।
বস্তির বাসিন্দা গার্মেন্টস কর্মী রুবিনা আক্তার বলেন, ‘মরতে মরতে বাঁইচ্চা আইছি। বানের জলে সব হারাইছি বরিশালে। বাপের হাত ধরে এই বস্তিতে আইছি। কিন্তু এখানেও যেন শুধু বাঁইচ্চা আছি। আগে বানের জলে এখন আগুনে। গতরাতের আগুনে সব পুড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমরা ক্লান্ত।’
নিজে ড্রাইভার, স্ত্রী কিছু করেন না। এক ঘরে ৬ সদস্যের সংসার। ৯ ঘরের ভাড়া আর নিজের চাকরির টাকায় ভালোই চলছিল গিয়াস উদ্দিনের সংসার। কিন্তু আগুনই যেন তার জীবনের সবচেয়ে বড় শত্রু।
গিয়াস উদ্দিন বলেন, ১৯৯৯ সালে এই বস্তিতে আসছি। এখন পর্যন্ত ২০০৪, ২০১৭, ২০২৫ সালে তিনবার আগুনে সব হারাইছি। দুবার মরতে মরতে বেঁচে গেছি।
১৫ বছর ধরে বস্তির বাসিন্দা মর্জিনা বেগম। তিনি নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘আগুন লাগার সময় রান্না করছিলাম। স্বামী বাইরে রিকশার প্যাডলে পা চালাচ্ছিল, এদিকে আগুন। কোনো রকমে দুই মেয়ে আর ছেলে-নাতিরে নিয়ে বের হইছি।
তবে তিনি বলেন, এবারই প্রথম, কিন্তু এটাই হয়তো শেষ, আর হয়তো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবো না। একদম নিঃস্ব হয়ে গেছি।
মেয়ে ইতি আক্তার বস্তির পাশেই বিদ্যাসাগর স্কুলের ক্লাস সেভেনে শিক্ষার্থী। ইতি বলেন, আগুনে সব বই-খাতা পুড়ে গেছে, এক কাপড়ে বের হইছি মায়ের লগে। স্কুল ড্রেসটাও নেই। এরমধ্যে ৭ ডিসেম্বর থেকে বার্ষিক পরীক্ষা। সব এলোমেলো দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে।
যেখান থেকে বস্তির আগুনের উৎপত্তি সেই বউ বাজারের কাছের বাসিন্দা রায়হান বলেন, আগুন লাগে নাকি লাগানো হয়, এটা একটা বড় প্রশ্ন। অনেকবারই তো পুড়লো বস্তি। সব আগুন আমাদের কারণে না। বস্তি বলে তদন্ত হয় না। আমাদের নিঃস্ব হওয়াতে, জীবন যাওয়াতে কার কি আসে যায়!
নাশকতার এমন সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (অপারেশন্স) মেজর (অব.) একেএম শাকিল নেওয়াজ। তিনি বলেন, শুধু আজকে নয় অনেক আগে থেকে কড়াইল বস্তি নিয়ে অনেক কাহিনি রয়েছে। জায়গা দখল থেকে শুরু করে বহুকিছু রয়েছে। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন, ক্ষমতাদখল অনেক কিছু। ৫ আগস্টের আগে ছিল এক গ্রুপ এখন আরেক গ্রুপ।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমেদ খান বলেন, এলপিজি গ্যাস যত্রতত্র ব্যবহার হচ্ছে। বস্তির ঘরগুলো খুব ঘিঞ্জি, একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো। ঘরগুলো কাঠ ও টিন আর কাগজের বক্স দিয়ে বানানো। যা দাহ্যবস্তু। ইলেকট্রনিক লাইনগুলো অনেক নিম্নমানের। রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, বস্তিতে আধিপত্য বিস্তারের জন্য আগুন লাগাতে পারে। সেটার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রাজনৈতিক কারণেও আগুন লাগানো হতে পারে। গোয়েন্দারা ভালো বলতে পারবেন।
আগুন নেভাতে দেরির কারণ ও সমাধানে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসে নতুন কোনো সদস্য কড়াইলের বস্তিতে গেলে সে রাস্তা খুঁজে পায় না। এজন্য অভিজ্ঞ এবং যারা কড়াইল বস্তি সম্পর্কে জানে শুধুমাত্র তারাই দ্রুত আগুন নেভাতে পারবে। কারণ কড়াইল বস্তি সম্পর্কে তাদের ধারণা রয়েছে। আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম তখন আলাদা একটি ইউনিট ছিল কড়াইলের জন্য। সেখানে সাব স্টেশন করা, ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন ও অভিজ্ঞ জনবলকে মোতায়েন করার পরামর্শ দেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, কড়াইল বস্তিতে গেলে দেখবেন যে ওখানে যত্রতত্র বিদ্যুতের লাইন, যার অধিকাংশই অবৈধ। বাড়িঘরগুলোও একটার পাশে আরেকটা লাগানো, ঘিঞ্জি এমনভাবে লাগানো যে, ছোটোখাটো আগুনও বড় হতে বেগ পায় না। মানে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে হয়ে যায়।
‘দিনের বেলা বাসা-বাড়িতে একজন দুজন লোক থাকে। এখানে বেশিরভাগ মানুষ কাজের প্রয়োজনে বাইরে থাকে। তখন আগুন লাগলে প্রাথমিকভাবে আনডেন্টিফাই করা সম্ভব হয় না। ঝিলের পাড়ের বসতি কড়াইলের। বাসিন্দারা খুব সহজেই পার হয়ে চলে যায় বিভিন্ন জায়গায়, চাকরিতে বা কাজে। ফলে ছোট আগুনেও দেখা যায় যে অ্যাটেন্ড করতে না পারার কারণে যথাসময়ে আগুনটা বড় হয়ে যায়।’
তিনি গতকালকের আগুনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘গতকালকেও প্রচুর সিলিন্ডারের সম্মুখীন বা বাধার মুখে পড়েছি আমরা, যেগুলো বিস্ফোরণ হচ্ছিল।
তিনি বলেন, এখানে সচেতন হয়েও লাভটা কোথায়? সচেতন হলেও তো বস্তির বাসিন্দাদের যাওয়ার জায়গা নাই। কোথায় যাবেন তারা? একটা ছোট্ট একটা জায়গায় কত লোক একসঙ্গে বাস করছে! আমরা যতই বুঝাই না কেন কিছুদিন পর পর আগুন সেখানে লাগছে। আমরা সেখানে মহড়া করেছি, রেডক্রিসেন্টও নিয়মিত মহড়া সচেতনতামূলক কার্যক্রম করে সেখানে। কিন্তু আলটিমেটলি দিনের শেষে খুব বেশি ভালো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।
কড়াইল বস্তিতে পানির সহজপ্রাপ্ততার জন্য ফায়ার হাইড্রেন্ট এখন জরুরি
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আরও বলেন, বস্তিতে আগুন লাগলে আমরা পানি পাই না, পানি পেলেও আবার গাড়ি এমন জায়গায় রাখতে হয় যা স্পট থেকে দূরে। গতকালকেও এক কিলোমিটার দূরে গাড়ি রেখে আমাদের কাজ করতে হয়েছে। ফায়ার ফাইটাররাও পানি নিয়ে গিয়ে যে কাজ করবে সেক্ষেত্রেও অনেক প্রতিবন্ধকতা।
যেহেতু বস্তি নিয়ে সরকারের ভিন্ন পরিকল্পনা নেই, সচেতনতামূলক কার্যক্রমেও বস্তিতে আগুন বন্ধ হচ্ছে না, সরু পথ প্রশস্ত করতে হবে। পানির সরবরাহ সহজপ্রাপ্ত করতে ফায়ার ডাইড্রেন্ট স্থাপন করতে হবে বস্তি জুড়ে। ফায়ার হাইড্রেন্ট পয়েন্টগুলো ব্যবহারে আমরা খুব সহজে আগুন কন্ট্রোলে নিয়ে আসতে পারবো। এই ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে আমরা চিন্তা করছি।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: