শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


জাহান্নামের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় যেসব আমল


প্রকাশিত:
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:২০

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৫৪

ফাইল ছবি

জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়া এবং জান্নাতে প্রবেশ করা মুমিনের সবচেয়ে বড় সাফল্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কেবলমাত্র কেয়ামতের দিনই তোমাদেরকে তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হবে। অতঃপর যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ছাড়া আর কিছু নয়। (সুরা আলে ইমরান: ১৮৫)

প্রত্যেক মুমিন একটি কারণে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবেন। সেটি হলো তার ঈমান। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও পুণ্য বিদ্যমান থাকবে, তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি গম পরিমাণও পুণ্য বিদ্যমান থাকবে তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও নেকি থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।’ (বুখারি: ৪৪)

অতএব জান্নাতের গ্যারান্টি রয়েছে মুমিনের। বাকি রইল জাহান্নাম থেকে বাঁচা। এটাই মুমিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। হাদিস থেকে জানা যাচ্ছে, পাপী মুমিনরাও জাহান্নামে শাস্তি পাওয়ার পর অবশ্যই জান্নাতে যাবেন। আবার অনেকে শুরু থেকেই জান্নাতে যাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করবেন। তাই জাহান্নাম থেকে বাঁচায়—এমন আমলের ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া উচিত। নিচে সেরকমই ১১টি আমল তুলে ধরা হলো।

১. দান-সদকা-
আদি ইবনে হাতিম (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। এরপর তিনি পিঠ ফেরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। আবার বলেন, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। এরপর তিনি পিঠ ফেরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তিনবার এরূপ করলেন। এমনকি আমরা ভাবছিলাম যে তিনি বুঝি জাহান্নাম সরাসরি দেখছেন। তিনি আবার বলেন, তোমরা এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। আর যদি কেউ সেটাও না পাও তাহলে উত্তম কথার দ্বারা হলেও (আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা করো)। (বুখারি: ৬৫৪০)

২. রোজা-
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিন রোজা রাখে, আল্লাহ তার বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে তার মুখমণ্ডলকে সত্তর বছরের দূরত্বে রাখেন। (ইবনে মাজাহ: ১৭১৮)

৩. শিরকমুক্ত ইবাদত-
আবু আইয়ুব (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবী (স.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করল, আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন, যে আমল আমাকে জান্নাতের কাছে পৌঁছে দেবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। রাসুল (স.) বলেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করবে না, নামাজ কায়েম করবে, জাকাত দেবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে। সে ব্যক্তি চলে গেলে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তাকে যে আমলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা দৃঢ়তার সাথে পালন করলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম: ১৪)

৪. আরাফার দিনে জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া-
আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের আরাফার দিনের চেয়ে জাহান্নাম থেকে বেশি মুক্তি দিয়ে থাকেন। তিনি সেদিন বান্দাদের খুব নিকটবর্তী হন, তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাগণের কাছে গর্ববোধ করে বলেন, এরা কী চায়? (অর্থাৎ যা চায় আমি তাদেরকে তা-ই দেব)। (মেশকাত: ২৫৯৪)

৫. ইতেকাফ-
প্রিয়নবী (স.) ঘোষণা দেন- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতেকাফ করবে আল্লাহ তায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন পরিখা পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করবেন; যার দূরত্ব দুই দিগন্তের দূরত্বের থেকে বেশি দূরত্ব হবে।’ (কানজুল উম্মাল: ২৪০১৯)

৬. জোহরের সুন্নত আদায়-
উম্মু হাবিবা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জোহরের (ফরজের) আগে চার রাকাত নামাজ পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।’ (তাবরানি আউসাত: ৭৫৪৭)
উম্মু হাবিবা (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে নবী (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জোহরের (ফরজের) আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত সালাত পড়লো, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। (আবু দাউদ, তিরিমিজি, ইবনে মাজাহ ইকামাতিস সালাহ: ১১৬০)

৭. আল্লাহর ভয়ে কান্নাকাটি-
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে মুমিন বান্দার দু’চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে পানি বের হয়, যদি তা মাছির মাথার পরিমাণও হয় এবং তা চেহারা বেয়ে পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। (ইবনে মাজাহ, কিতাবুজ জুহুদ: ৪১৯৭)

৮. সহজ-সরল নম্র-ভদ্র-
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সহজ-সরল, নম্র-ভদ্র ও বিনয়ী হয়, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।’ (মুসতাদরাক হাকিম: ৪৩৫)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি (জনপ্রিয়), সহজ-সরল, নম্রভাষী ও সদাচারী। (তিরমিজি: ২৪৮৮)

৯. ভালো ব্যবহার-
নবী (স.) বলেন, ‘..তোমরা এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। আর যদি কেউ সেটাও না পাও তাহলে উত্তম কথার দ্বারা হলেও (আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা করো)। (বুখারি: ৬৫৪০)

১০. আল্লাহর পথে কষ্ট করা-
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, مَا اغْبَرَّتْ قَدَمَا عَبْدٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَتَمَسَّهُ النَّارُ ‘আল্লাহর পথে যে বান্দার দু’পা ধুলায় মলিন হয়, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে এমন হতে পারে না।’ (সহিহ বুখারি: ৪/২৮১১)

১১. ইখলাসের সঙ্গে টানা ৪০ দিন জামাতে নামাজ-
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একাধারে ৪০ দিন তাকবিরে উলার (ইমামের প্রথম তাকবির) সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করবে, তাকে দুটি নাজাতের ছাড়পত্র দেওয়া হবে। ১. জাহান্নাম থেকে মুক্তি ২. মুনাফেকি থেকে মুক্তি।’ (তিরমিজি: ২৪১)

অতএব প্রকৃত সফলতা অর্জন করতে হলে জাহান্নাম থেকে বাঁচার উল্লেখিত আমলগুলোর ব্যাপারে মুমিন মুসলমানের বেশি সচেতন ও যত্নশীল হওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমলগুলো যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। আমিন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top