শনিবার, ৯ই আগস্ট ২০২৫, ২৫শে শ্রাবণ ১৪৩২


ফেরেশতা যে নবীর বন্ধু হয়েছিলেন


প্রকাশিত:
৯ আগস্ট ২০২৫ ১৬:০৩

আপডেট:
৯ আগস্ট ২০২৫ ২০:০৭

ছবি সংগৃহীত

হজরত কাব আহবার প্রমুখ বর্ণনা করেছেন— হজরত ইদরিস (আ.) একদিন সারাদিন প্রখন রোদের মধ্যে পথ চললেন। শেষে ক্লান্ত হয়ে বললেন, হে আমার প্রতিপালক! একদিন পথ চলতেই আমি এতো ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, কিন্তু যে দিন সবাই ৫০০ বছরের পথ অতিক্রম করতে বাধ্য হবে, সেদিন তাদের কি দূরবস্থাই না হবে। তাই তোমার কাছে আমার প্রার্থনা, তুমি সূর্যের উত্তাপকে কিছুটা স্তিমিত করে দাও।

পরদিন সকালে সূর্য পরিচালনাকারী ফেরেশতা অনুভব করলেন সূর্যের উত্তাপ অনেকটা স্তিমিত। তিনি আল্লাহ তায়ালাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আমাদের পালনকর্তা! সূর্যের উত্তাপ স্তিমিত হওয়ার কারণ কী?

আল্লাহ বললেন, আমার প্রিয়বান্দা ইদরিসের প্রার্থনার কারণে আমি এ রকম করেছি। ফেরেশতা বললেন, হে পরোয়ারদিগার! আপনি তাকে আমার বন্ধু বানিয়ে দিন। আল্লাহ ফেরেশতাকে নবীর সঙ্গে বন্ধুত্বের অনুমতি দিলেন।

ফেরেশতা হজরত ইদরিস (আ.)-এর কাছে উপস্থিত হলেন। হজরত ইদরিস (আ.) তার পরিচয় পেয়ে বললেন, আমি জানি আপনি মহাসম্মাণিত এক ফেরেশতা। মৃত্যুর ফেরেশতা আজরাইলও আপনাকে সমীহ করেন। তাই আপনার কাছে আমার আবেদন হলো—

আপনি তার কাছে আমার জন্য এই মর্মে সুপারিশ করুন যেনো তিনি আমার মৃত্যুর সময় কিছুটা পিছিয়ে দেন। যেনো বর্ধিত আয়ু পেয়ে আমি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি এবং বেশি বেশি ইবাদত করতে পারি।

ফেরেশতা বললেন, মৃত্যুর সময়তো সুর্নিধারিত। তবুও আমি মৃত্যুর ফেরেশতার কাছে আপনার আবেদনটি উত্থাপন করবো। এরপর সূর্যের ফেরেশতা হজরত ইদরিস (আ.)-কে আকাশে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। সূর্যের কাছাকাছি এক জায়গায় তাকে দাঁড় করিয়ে রেখে তিনি উপস্থিত হলেন মৃত্যুর ফেরেশতার কাছে।

বললেন, আদম সন্তানদের মধ্যে আমার একজন বন্ধু আছে। তিনি আমাকে তার মৃত্যুর সময় কিছুটা পিছিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আপনার কাছে সুপারিশ করতে বলেছেন।

মৃত্যুর ফেরেশতা বললেন, আমার এমন করার ক্ষমতা নেই । তবে আমি শুধু তার মৃত্যুলগ্নের কথা পূর্বে জানিয়ে দিতে পারি। যেন তিনি সঠিকভাবে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন। এ কথা বলে মৃত্যুর ফেরেশতা তার দপ্তর খুলে বসলেন। তারপর বললেন,আপনি আমাকে এমন এক লোকের কথা বলছেন, যার মৃত্যুর কোনো তারিখ আমার দপ্তরে নেই। তার মৃত্যু পৃথিবীতে হবে না, আকাশে হবে। আপনি গিয়ে দেখুন, তিনি আর জীবিত নেই।

সূর্যের ফেরেশতা তখন হজরত ইদরিস (আ.)-এর কাছে গিয়ে দেখলেন, সত্যিই তিনি মৃত ।

ওহাব ইবনে মুনাববাহ বলেছেন, আকাশে হজরত ইদরিস (আ.) জীবিত অবস্থায় রয়েছেন না মৃত অবস্থায় — সে সম্পর্কে আলেমগণ বিভিন্ন রকম মন্তব্য করেছেন।একদল বলেছেন, তিনি আকাশে জীবিত অবস্থায় রয়েছেন। তার মতো মৃত্যুহীন জীবনপ্রাপ্ত ব্যক্তি হচ্ছেন চারজন। তাদের মধ্যে দু'জন আছেন আকাশে এবং দু'জন রয়েছেন পৃথিবীতে । আকাশের অমর দুই নবীর নাম হজরত ইদরিস ও হজরত ঈসা (আ.)। আর পৃথিবীর অমর দুই নবী হচ্ছেন হজরত খিজির ও হজরত ইলিয়াস (আ.)।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে— হজরত ইদ্রিস ছিলেন অত্যধিক ইবাদতগুজার ৷ তখনকার দিনের বিশ্বাসীদের সম্মিলিত ইবাদতের সমান ইবাদত করতেন তিনি একাই । ফেরেশতারা একথা শুনে আশ্চর্যান্থিত হলো । কৌতৃহলী হয়ে আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে মৃত্যুর ফেরেশতা হজরত ইদরিসের সঙ্গে সাক্ষাত করলেন।

হজরত ইদরিস (আ.) নিয়মিত রোজা রাখতেন। তাই ইফতারের সময় তিনি মানবরূপী ফেরেশতা মেহমানকে যথারীতি ইফতার করতে বললেন । কিন্ত মেহমান তার আহ্বানে সাড়া দিলো না। পরপর তিনদিন এরকম ঘটলো। শেষে হজরত ইদ্রিস জিজ্ঞেস করলেন, হে প্রিয় অতিথি! আপনার পরিচয় দিন।

তিনি বললেন, আমি মৃত্যুর ফেরেশতা। আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি আপনার সঙ্গ লাভের জন্য অনুমতি পেয়েছি।

হজরত ইদরিস (আ.) বললেন, তবে আমার একটি কাজ করে দিন। অতিথি বললেন, কি কাজ? হজরত ইদরিস (আ.) বললেন, আমার প্রাণ হরণ করুন।
আল্লাহর হুকুমে মৃত্যুর ফেরেশতা তার জান কবজ করলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর
আল্লাহর হুকুমে তিনি আবার জীবিত হয়ে উঠলেন।

অতিথি বললেন, এরকম ঘটলো কেনো? হজরত ইদরিস (আ.) বললেন, আমি মৃত্যুর আস্বাদ পেতে চেয়েছিলাম। মৃত্যুবরণ করা আমার উদ্দেশ্য ছিলো না। আল্লাহ আমার ইচ্ছা পূর্ণ করেছেন। এখন আমি যথাসময়ে মৃত্যুবরণ করার যথাপ্রস্ততি গ্রহণ করতে পারবো। কারণ, মৃত্যুর স্মৃতি আমার স্মৃতিপটে সদা জাগরূক। এখন আপনি আমার আরও একটি কাজ করে দিন। আমাকে নিয়ে আকাশে চলুন। আমাকে জান্নাত-জাহান্নাম ঘুরিয়ে দেখিয়ে দিন।

মৃত্যুর ফেরেশতা এবারও অনুমতি পেলেন। তিনি হজরত ইদরিস (আ.) নিয়ে প্রথমে জাহান্নামের দরজায় গেলেন । হজরত ইদরিস (আ.) বললেন, দোজখের প্রধান প্রহরীকে বলে দরজা খোলার ব্যবস্থা করুন। তাই করা হলো।

হজরত ইদরিস (আ.) ভালো করে জাহান্নামের ভেতরের অংশ দেখে নিলেন। তারপর বললেন, জাহান্নাম তো দেখা হলো। এবার আমাকে জান্নাতে নিয়ে চলুন। মৃত্যুর ফেরেশতা তাকে নিয়ে জান্নাতে উপস্থিত হলেন। আল্লাহর অনুমতিতে জান্নাতের সদর দরজা খুলে দেওয়া হলো।

হজরত ইদরিস (আ.) ঘুরে ঘুরে জান্নাতের অপরূপ দৃশ্য দেখলেন। মৃত্যুর ফেরেশতা বললেন, এবার ফিরে চলুন । হজরত ইদরিস (আ.) একটি বৃক্ষের ডাল আকড়ে ধরে বললেন, আমি এখান থেকে কোথাও যাবো না।

আল্লাহর নির্দেশে তখন সেখানে আরেকজন ফেরেশতা উপস্থিত হলেন। বললেন,
আপনি ফিরে যেতে রাজি হচ্ছেন না কেনো? হজরত ইদরিস (আ.) বললেন, আল্লাহ বলেছেন, সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমি তা আস্বাদন
করেছি। আল্লাহ আরও বলেছেন, সবাইকে জাহান্নাম দেখানো হবে। আমি জাহান্নামও দেখেছি। আর আল্লাহ একথাও বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশকারীরা আর বের হবে না। আমি তো সেই জান্নাতেই প্রবেশ করেছি। সুতরাং আমি এখান থেকে বের হবো কেনো?

আল্লাহ তখন মৃত্যুর ফেরেশতাকে জানালেন, আমার অনুমতিক্রমেই তো সে জান্নাতে প্রবেশ করেছে। সেখান থেকে বের হতে হলে আমার অনুমতিক্রমেই তা হবে। তোমাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আর কোনো চেষ্টা কোরো না। এভাবেই হজরত ইদরিস (আ.) এক ব্যতিক্রমী মর্যাদা লাভ করে সেখানে রয়ে গেছেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top