রবিবার, ২৭শে জুলাই ২০২৫, ১২ই শ্রাবণ ১৪৩২


ঢাকাকে বাঁচাতে ড্যাপ বাতিল চায় স্থপতিবিদরা


প্রকাশিত:
২৭ জুলাই ২০২৫ ১৫:৪৮

আপডেট:
২৭ জুলাই ২০২৫ ১৭:৪৪

ছবি সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকাকে বাঁচাতে হলে রাজউকের পরিকল্পনার ড্যাপ এখনই বাতিল করতে হবে বলে জানিয়েছেন স্থপতিবিদরা। তারা বলেন, একটি গোষ্ঠীর স্বার্থে তড়িঘড়ি করে ড্যাপ রচনা করা হয়। আমাদের দরকার এই ড্যাপ বাতিল করা এবং সংশোধিত জনবান্ধব নতুন কার্যকর ড্যাপ প্রণয়ন করা।

রোববার (২৭ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।

‘জনবৈরী, বৈষম্যপূর্ণ ও অকার্যকর’ ঢাকা মহানগরীর জন্য প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ২০২২–২০৩৫ এর বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট।

স্থপতিবিদরা বলেন, আমরা বহুদিন ধরে রাজউকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো প্রতিফলন পাইনি, তাই আজ জনগণের দাবি ও অধিকার তুলে ধরতে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি। জনদুর্ভোগ এড়াতে, ভবিষ্যতের ঢাকা বাঁচাতে, বাসযোগ্য নগর গড়তে এবং নির্মাণ শিল্পের সাথে যুক্ত লক্ষ মানুষের স্বার্থ রক্ষায় আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি, সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ জনগণই পারে টেকসই, ন্যায্য ও সমৃদ্ধ ঢাকা গড়ে তুলতে।

বক্তারা বলেন, ড্যাপ ২০২২-২০২৩ একটি দলিল যা Town Improvement Act, 1959 এর আওতায় প্রকাশ করা হয়। গেজেটকৃত ড্যাপ নিয়ে মহানগরীর সকল স্তরের অংশীজনের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পরবর্তীতে অংশীজনের সাথে ধারাবাহিক আলোচনার প্রেক্ষিতে ড্যাপের কতিপয় অনুচ্ছেদ সংশোধনী আকারে গেজেট করে পুনঃপ্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। কিন্তু এর পরেও অংশীজনের মধ্যকার বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিরাজমান থাকে এবং পুনরায় সংশোধনের জন্য মতামত ব্যক্ত করা।

‘কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থে তড়িঘড়ি করে ড্যাপ রচনা করা হয়। পরবর্তী সময়ে গণশুনানী উপেক্ষা করে প্রহসনমূলক সংশোধন করা হয়। আইনি ব্যত্যয়, প্রকাশিত তথ্যের অপর্যাপ্ততা, প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা, পরিবেশ বিপর্যয় (কৃষি জমি বিনষ্ট ও প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট), ভবন নির্মাণের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির বৃদ্ধি, বৈষম্য মূলক নীতির প্রয়োগ, জনভোগান্তি বৃদ্ধিসহ অসংখ্য অসংগতি নির্ভর এই ড্যাপ (২০২২-৩৫) বর্তমানে ভবন নির্মাণ শিল্পে স্থবিরতা সৃষ্টি করেছে। শহরের নাগরিক বাসযোগ্যতা এবং পরিবেশ আজ বিপন্ন করে তুলেছে। তার প্রমাণ ঢাকা শহর ড্যাপ প্রণয়নের পরে গত চার বছরে বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ১৩৮ থেকে ১৭১-এ নেমে এসেছে।’

সংগঠনের সভাপতি ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, ড্যাপের কারণে নির্মাণ খাতে স্থবিরতা নেমে এসেছে। হাজার হাজার নির্মাণ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। প্ল্যান পাস করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে। এটি একটি হয়রানিমূলক পরিকল্পনা।

তিনি বলেন, ড্যাপের প্রথম অনুচ্ছেদেই বলা হয়েছিল, এটি তিন ধাপের কৌশলগত পরিকল্পনার তৃতীয় ধাপ। অথচ প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ—স্ট্রাকচার প্ল্যান ও আরবান এরিয়া প্ল্যান—আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বরং ইমারত নির্মাণ বিধিকে ড্যাপেই অন্তর্ভুক্ত করে আরও জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে।

আইএবির সাধারণ সম্পাদক ড. মাসুদ উর রশিদ বলেন, এই ড্যাপ ২০১৫ সালের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। অথচ মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট, কৃষিজমি ধ্বংস, অংশীজনদের মতামত উপেক্ষা এবং দুর্যোগ সহনশীলতার অভাবে এটি সম্পূর্ণ অযোগ্য একটি পরিকল্পনা।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, নওয়াজীশ আহমেদ, সাবেক সভাপতি কাজী নাসির, পরিবেশবিদ মাহমুদুর রহমান মামুনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

স্থপতি ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়—

১. গেজেটকৃত ড্যাপ (২০২২–২০৩৫) অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
২. অংশগ্রহণমূলক, ডিজিটাল এবং হালনাগাদ ভূমি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
৩. দুর্যোগ সহনীয় মৌজা-ভিত্তিক ড্যাপ প্রতি পাঁচ বছর অন্তর পর্যালোচনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. বৃহত্তর ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল নিয়ে পরিবেশবান্ধব ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তিন ধাপের পরিকল্পনা (স্ট্রাকচার প্ল্যান, আরবান এরিয়া প্ল্যান ও ড্যাপ) প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন, এসডিজি, সেনদাই ফ্রেমওয়ার্ক, জিরো এমিশনসহ সরকারের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হবে।

ডিএম /সীমা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top